মহার্ঘ ভাতা বেসরকারি নিয়োগকর্তাদেরও দেওয়া উচিত। ফাইল চিত্র।
‘হাতে রইল তরজা’ (১০-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়া আদৌ ন্যায্য কি না, সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দু’বার নিয়ম করে ডিএ বাড়িয়ে যাচ্ছে। অন্য রাজ্যগুলোও কেন্দ্রীয় হারে বা তার কাছাকাছি হারে ডিএ দিচ্ছে। সে প্রসঙ্গে কিন্তু এ প্রশ্ন তোলা হয় না। যখন রাজ্য সরকারের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে ধর্মঘট পালন করলেন, প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কোনও রকম হুমকি দিয়েই তাঁদের ভয় পাওয়ানো গেল না, তখনই ডিএ-র ঔচিত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল। সে দিক থেকে এই সম্পাদকীয়টিকে ‘সময়োচিত নিবেদন’ বলা যেতে পারে।
সম্পাদকীয়তে সরকারি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা প্রভৃতির প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ সরকারি কর্মীই কাজ করেন অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে। তাঁদের বেশির ভাগ কাজই সহজ সরল, গতানুগতিক, যে ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও দক্ষতার প্রয়োজনই হয় না। তাই এ সব কাজে দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা পরিমাপ করার কোনও মাপকাঠি নেই। সর্বোপরি, সরকারি হোক বা বেসরকারি, যে কোনও ক্ষেত্রে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয় ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভদ্র ভাবে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিতে, দক্ষতা বা উৎপাদনশীলতার জন্য পদোন্নতি প্রভৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। মহার্ঘ ভাতাকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয় না।
এখন প্রশ্ন হল, সরকার ভাতা বাড়ানোর মতো অর্থ পাবে কোথা থেকে? এর সহজ উত্তর হল, বিক্রীত পণ্যের উপর ধার্য কর (জিএসটি), আয়কর, আমদানি-রফতানি কর ও অন্য নানা কর যত বাড়ে, সরকারের আয়ও তত বাড়ে। এখন এই আয়ের টাকা যদি সরকার মেলা-খেলায়, ব্যাঙ্ক লুট-করা শিল্পপতিদের হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব করে উড়িয়ে দেয়, তার দায় কর্মচারীদের ভুগতে হবে কেন?
মহার্ঘ ভাতা বেসরকারি নিয়োগকর্তাদেরও দেওয়া উচিত। সরকারি বা বেসরকারি, কর্মচারীদের বেতন যদি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে না বাড়ে, তবে শুধু তাঁরা নন, সঙ্কট বর্তায় গোটা সমাজের উপর। কেননা, বেতনভুকরা তাঁদের আয়ের বেশির ভাগটা দোকানে বাজারে খরচই করেন। বেতন না বাড়লে তাঁরা খরচ কমিয়ে দেন। বেতন বৃদ্ধি আর হবে না জানলে আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা বেশি-বেশি করে সঞ্চয় করবেন। ফলে, বাজারে নগদ টাকার জোগান কমবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং স্বাধীন বৃত্তিজীবীদের আয়ও কমবে, এবং তাঁদের কর্মচারীরা কাজ হারাবেন। এই জন্যই ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে চাকরিজীবীদের বেতন নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু কিছু বৃদ্ধি করা হয়।
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার প্রশ্নে প্রান্তিক, বিপন্ন মানুষের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নও তোলা হয়েছে। অবশ্যই সরকারের প্রথম নজর দেওয়া উচিত তাঁদের দিকেই। কিন্তু আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলো কি সে বিষয়ে আদৌ আন্তরিক? পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বন্ধ রেখে রাজ্যের নিরন্ন মানুষের কতটুকু উপকার করেছে? কয়েক হাজার শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ। মেধাবী চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন মাসের পর মাস। এঁদের বেতনের টাকাটাও তো সরকারের বাঁচছে। কাজগুলো কিন্তু আটকে নেই। আর কত সাশ্রয় এই সরকারের চাই? যতটুকু অনুদান পশ্চিমবঙ্গ সরকার দরিদ্রদের দিচ্ছে, তার সমান এমনকি তার থেকে বেশিও অন্যান্য রাজ্য সরকার দিচ্ছে। এবং তা সত্ত্বেও সেই সব রাজ্য সরকার তাদের কর্মীদের মহার্ঘ ভাতাও দিচ্ছে। সত্যিই প্রান্তিক বিপন্ন মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলে দুর্নীতিমুক্ত, জনমুখী সরকার দরকার। সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা আটকে রাখার প্রয়োজন নেই।
পার্থ ভট্টাচার্য, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রতিহিংসার যুক্তি
‘হাতে রইল তরজা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সরকারি চাকুরে ২ শতাংশ লোককে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া কেন, যখন ৯৮ শতাংশ এটি পায় না। এ যুক্তির ধারায় গেলে, সমস্ত ধরনের চাকরির সমস্ত সুবিধাই কি বন্ধ করে দিতে হয় না, বাকিরা তা পায় না এই যুক্তিতে? পেনশন বন্ধ করে দেওয়া যায়, আইএএস-আইপিএস’দের গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া যায়, বিচারকদের দেহরক্ষীও বন্ধ করে দেওয়া যায়, কেননা বাকি বিপুল শতাংশ তা পায় না। চাকরি-বাকরিও বন্ধ করে দেওয়া যায়, কেননা বেশির ভাগ দেশবাসীই তো হয় বেকার, নয়তো অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মী। এ যুক্তি হল প্রতিহিংসার যুক্তি, প্রতিহিংসার রাজনীতি।
মহার্ঘ ভাতা কেন, তার উত্তর— দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি বাস্তব ঘটনা। বিচারকের দেহরক্ষী বা আইএএস-এর গাড়ির মতো মহার্ঘ ভাতা এক জন সরকারি কর্মীর জন্য আবশ্যক। আজকাল বেশির ভাগ চাকরিতে কাজের নিরাপত্তা তো দূর, জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত সুতোর উপর ঝোলে! এই ৯৮ শতাংশ যা যা থেকে বঞ্চিত তা সবার জীবন থেকে হিসাব করে কেড়ে নিতে চাইলে বাকিদেরও মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। অথচ, ওই ৯৮ শতাংশ পরিসংখ্যানটির তাৎপর্য এই হতে পারত যে, এই ৯৮ শতাংশও যাতে মহার্ঘ ভাতা পান, সেটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। মূল্যবৃদ্ধি একটি বাস্তব সঙ্কট ওঁদের জীবনেও।
বলা যায়, কর্পোরেট সেক্টর বা ব্যাঙ্কের মতো সংগঠিত ক্ষেত্রে মহার্ঘ ভাতা নেই, এবং তাদের ভালই চলছে। কিন্তু সেখানে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি আছে। এটা আমাদের মহার্ঘ ভাতা ছাড়া আর কিছু নয়। আর যখন এই বেতনবৃদ্ধি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে দৌড়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে, তখন আমরা অন্য কোম্পানিতে চাকরি খুঁজি। যে সুযোগটা আবার সরকারি চাকরিতে নেই।
একটি যুক্তি খুব ভালই দেওয়া হয়েছে যে, বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধিটা কাজের মূল্যায়নের সঙ্গে যুক্ত, সরকারি ক্ষেত্রে সবার এক হারে বৃদ্ধি হয় কী করে? এর উত্তর আমিও খুঁজছি, বহু দিন ধরেই। কিন্তু বর্তমান সমাধানটা মেনে নিতে হচ্ছে একটা কারণে। বেসরকারি সংস্থার চালিকাশক্তি হল লাভ-ক্ষতি, তাই সর্বোচ্চ লাভে পৌঁছনোর তাড়নায় ভাল কর্মীকে ভাল বেতন দেওয়ার একটা তাড়া সেখানে থাকে। তার পরেও যে তা কত দোষে দুষ্ট হয়ে যায়, তা মার্চ মাসই জানে। আর সরকারি ক্ষেত্রে, যেখানে দায়বদ্ধতা লাভ-ক্ষতির কাছে নয়, সরকারের কাছে, বকলমে রাজনৈতিক দলের কাছে; সেখানে বার্ষিক মূল্যায়নে কী পরিমাণ ‘রাজনীতি’ হতে পারে, ভাবতে গেলেও তো ভয় হয়। একটা সহজ সমাধান মনে হতে পারে, সেই মূল্যায়নকেও কোনও ভাবে লাভ-ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত করা। কিন্তু সেটা উচিত হবে না, কেননা সরকারি কাজগুলোর ভিত্তি হল জন-অধিকারগুলোকে নিশ্চিত করা, জনগণের সঙ্গে সরকারের ব্যবসাকে লাভজনক করা নয়।
একে তো সরকারি চাকরি কমে যাচ্ছে, তার উপর আজ ১৯০০ জন, তো কাল ৬০০ জনের চাকরি যাওয়ার খবর আসছে, কিন্তু সমসংখ্যক নতুন চাকরির খবর আসছে না। এর পর যদি সেখান থেকে সমস্ত সুবিধা এক-এক করে তুলে নেওয়া হয়, তা হলে কী হবে? সরকারি স্কুলগুলো যেমন করে গ্রামের একমাত্র পাকা বাড়ি থেকে শহরের সবচেয়ে অন্ধকার ভাঙা বাড়িটায় পরিণত হয়েছে, তেমনই সরকারি চাকরি ব্যাপারটাই ক্ষয়ে-ক্ষয়ে ধুঁকতে-ধুঁকতে এক দিন শেষ হয়ে যাবে!
অতীশ পোদ্দার, কলকাতা-৬৫
অস্বাস্থ্যকর
আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানে গত পঞ্চাশ বছরে বসবাসকারীর সংখ্যা আনুমানিক পঞ্চাশ গুণ বেড়েছে। কিন্তু বর্জ্য পদার্থ ফেলার মতো কোনও নির্দিষ্ট জায়গা স্থানীয় প্রশাসন এখনও চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি। ফলে স্থানীয় লোকজন রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। কুকুররা মুখে করে সেগুলো রাস্তায় এনে ফেলছে। সামনেই বর্ষা। মশার উপদ্রব বাড়বে। আমরা আতঙ্কে আছি।
অরবিন্দ ঘোষ, দত্তপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা