LPG

জনতার নাভিশ্বাস

২০১৩ সালের ইউপিএ সরকারের ‌তুলনায় ২০২২ সালের এনডিএ সরকারের আমলে ‌গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১৬ শতাংশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১৯
Share:

সমস্ত জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল বেরোনোর কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই পেট্রল-ডিজ়েল’সহ রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এক লাফে ৫০ টাকা বেড়ে ১৪.২ কিলোগ্রাম ভর্তুকিহীন রান্নার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ টাকায়। আর এই দামেই যে এক জন গ্রাহক সিলিন্ডার হাতে পান, তা-ও নয়। অনেক গ্রাহককেই মূল দামের সঙ্গে দিতে হয় অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ, যা ধরলে এক-একটি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ন্যূনতম হাজার টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে ১৪.২ কিলোগ্রাম এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৩৫৬ টাকা! আর গত বছরের জানুয়ারি থেকে ধরলে এখনও পর্যন্ত তা বেড়েছে ২৫৫ টাকা! অথচ, ভর্তুকির অঙ্ক কানাকড়িও বাড়েনি। বরং গত বছরে যে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৫০ টাকা, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে নামমাত্র ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ, চূড়ান্ত উচ্চবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে পার্থক্য ‌হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই ১৯.৫৭ টাকা। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ইউপিএ সরকারের ‌তুলনায় ২০২২ সালের এনডিএ সরকারের আমলে ‌গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। অথচ, আশ্চর্যজনক ভাবে উল্টো দিকে ওই সময়কালেই বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ।

Advertisement

গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কেরোসিন, কয়লার মতো যে সব জ্বালানি রয়েছে, তার দরও একেবারে আকাশছোঁয়া। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার কেরোসিনের উপর থেকে সমস্ত রকম সরকারি ভর্তুকি‌ তুলে নেওয়ায় এই মুহূর্তে রেশন দোকানে কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে বাজার মূল্যে। ফলে এক প্রকার উপায়হীন হয়েই যে কোনও বর্ধিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও বেকারত্বের আবহে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের পক্ষে হাজার টাকা খরচ করে একটা সিলিন্ডার কেনা কি আদৌ সম্ভব! কেন্দ্রীয় সরকারের ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের কার্যকারিতাও তো এখন প্রশ্নের মুখে। এই প্রকল্পের অর্ন্তগত পরিবারগুলিকে বিনা পয়সায় গ্যাসের সংযোগ ও প্রথম সিলিন্ডারটি প্রদান করা হয়। কিন্তু সর্বদা ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের সাফল্যের জয়গান করা কেন্দ্রীয় সরকার কখনও‌ কি ভেবে দেখেছে, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলি কী ভাবে পরবর্তী কালে এই বিপুল মূল্যে সিলিন্ডার কিনবে? সিলিন্ডারের মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলে বিনামূল্যে সংযোগ দিয়ে লাভটা কী? বলা বাহুল্য, করোনা ও লকডাউন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এক দিকে আর্থিক মন্দা আর তারই মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির করাল গ্রাসে পড়ে নাজেহাল আমজনতা।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

মহার্ঘ ওষুধ

অতিমারি কালে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন বহু মানুষ। ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে বহু ছোট ব্যবসার। হুহু করে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। ভোজ্যতেলের দাম আকাশছোঁয়া। তার মাঝে বেড়েই চলেছে পেট্রল, ডিজ়েলের মূল্য। এর সঙ্গে অনেকটাই লাফিয়ে দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাসের। সব মিলিয়ে যেন হেঁশেলে আগুন ধরার অবস্থা। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভাল নেই। অথচ, এই ঊর্ধ্বমুখী দাম বৃদ্ধিতে নেই কোনও আন্দোলন, কোনও প্রতিবাদ। এ ভাবেই আমাদের চলতে হবে। বাঁচতে গেলে মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

এরই মধ্যে আবার বাড়তে চলেছে অত্যাবশ্যক জীবনদায়ী ওষুধের দাম। এর কারণে রীতিমতো চাপে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে, বইতে হবে বাড়তি বোঝা। ঘোষণা অনুযায়ী, যে ওষুধগুলি দামি হচ্ছে, সেগুলি হল প্যারাসিটামল, ডায়াবিটিসের ওষুধ, ব্যথা কমার ওষুধ, সংক্রমণ, হৃদ্‌রোগ এবং বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, ফেনিটোইন সোডিয়াম, ফেনোবার্বিটোন ইত্যাদি আরও বেশ কিছু ওষুধ। প্রায় সাড়ে আটশোটি ওষুধের দাম বাড়তে পারে বলে খবরে প্রকাশ। পাইকারি দর বাড়বে ১০.৭৬ শতাংশ।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরু থেকেই বর্ধিত হারে সাধারণ মানুষকে কিনতে হবে প্রয়োজনীয় ওষুধ। যেখানে ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলিকে ২ শতাংশ বাড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছিল, সেখানে এক ধাক্কায় ২০২২ সালে তা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ছাড়পত্র দেওয়া হল। প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে প্যাকেজিং— সবেরই খরচ বেড়েছে। তাদের মতে, অনেক বছর পর এই মূল্যবৃদ্ধি হল। সাধারণ মানুষের চিন্তা না আছে সরকারের, না আছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির। বিশেষ করে এই মূল্যবৃদ্ধি বয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেকটাই হবে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

সরকারের দায়িত্ব

বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী, সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামে আগুন, গ্যাস দোসর, জীবনদায়ী ওষুধ নাগালের বাইরে— এটাই কি ‘অচ্ছে দিন’-এর নমুনা? এমন অবস্থায় মানুষ খাবে কী? বিগত দুই বছর করোনার আবহে খুচরো দোকানদার তথা সাধারণ মানুষের উপার্জন তলানিতে চলে গিয়েছিল। সবেমাত্র তাঁরা নিজেদের কারবার আবার গুছিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করছিলেন। প্রতিটি জিনিসের বেলাগাম দাম আবার মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। অসুস্থ মানুষের জন্য আরও খারাপ খবর হল, কেন্দ্রীয় সরকারের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি থেকে অত্যাবশ্যক বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র পেতে চলেছে ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলো। এর পর যদি দরিদ্র মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে ওষুধ কিনতে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হবে। অনেকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বললেও এ কথা বলা যায়, বিশ্ববাজারে যখন অপরিশোধিত তেলের দাম কম ছিল, তখন কিন্তু সরকার তেলের দাম কমায়নি। আর এখন রয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের বাহানা! ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে পরিবহণ খরচ বেড়ে গিয়েছে, যার কোপ পড়ছে জিনিসের দামে। কিন্তু সরকারের কি কোনও দায়িত্ব নেই? সরকার কি শুধু নির্বাচনের অপেক্ষা করছিল?

পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া

সয়ে গিয়েছে

‘টানা মূল্যবৃদ্ধিতেও জনতা নির্বিকার’ (৩-৪) শীর্ষক সংবাদে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা এখন মানুষের কাছে সহনীয় হয়ে গিয়েছে। যে কংগ্রেস এখন আন্দোলনে উদ্যত, তাদের আমলে মূল্যবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কেও পৌঁছেছিল। মানুষ তা মনে রেখেছে। এখন তো কেন্দ্রীয় সরকারের অজুহাত রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ।

ভারতীয়রা জানে, যে সরকারই আসুক না কেন শাসকের চরিত্রে বদল আসে না। মূল্যবৃদ্ধি, শোষণ, বেকারত্বের সমাধান হয় না। দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র, দমননীতি বহাল তবিয়তেই থাকে। মানুষের ক্ষোভকে ঠান্ডা করতে সরকার বাহুবলের প্রয়োগ করে। মিডিয়াকে ধমকে চমকে সরকার-বিরোধী খবর প্রকাশ না করতে বাধ্য করে। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য স্তরে প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করে গারদে পোরা হয়। গণতন্ত্রের নামে চলে একনায়কতন্ত্র।

ভারতের গণতন্ত্রের বাস্তব রূপ মানুষ উপলদ্ধি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আর এ সব নিয়ে মাথা ঘামান না। ঠকতে ঠকতে তাঁরাও সঙ্গত কারণেই চালাক হয়ে গিয়েছেন।

স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement