Child Labour

সম্পাদক সমীপেষু: ইটভাটার শিশু

ঠিকাদার কিংবা লোভী দালাল স্থানীয় বাহুবলী নেতার প্রচ্ছন্ন মদতে পরিবারের দারিদ্রের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত করছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৪:৩৫
Share:

‘বন্দি শৈশবের দায় কে নেবে’ (১-৬) প্রবন্ধে আশিস কুমার রায় ইটভাটায় শিশুদের শৈশব হরণের যথার্থ ছবিটি তুলে ধরেছেন। শিশু কখনওই স্বেচ্ছায় শ্রমিক হয় না। তাকে শ্রমিক করে তারই স্বগৃহের দারিদ্র। অভিভাবক কিছু অর্থের বিনিময়ে শিশুকে কাজে যুক্ত হতে বাধ্য করেন, যদিও পেটের আগুন নেবাতে গিয়ে এতে দারিদ্রকে দীর্ঘায়িত করা হয়। অন্য দিকে, এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ঠিকাদার কিংবা লোভী দালাল স্থানীয় বাহুবলী নেতার প্রচ্ছন্ন মদতে পরিবারের দারিদ্রের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত করছে। লেখক যথার্থই বলেছেন, “শিশুর বোধ তৈরি হওয়ার আগেই তারা মজুরে পরিণত হয়।” আমার স্মরণ আছে, ১৯৯৪ সালে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে ব্রাসেলস ও লাক্সেমবার্গে পাঠানো হয় জাহাজ ভর্তি কার্পেট। ওই কার্পেট ভারতে ফেরত এসেছিল। কারণ সেখানে লেখা ছিল না, ‘শিশুশ্রম ব্যবহারমুক্ত’ (ফ্রি ফ্রম ইউজ় অব চাইল্ড লেবার)। রফতানিযোগ্য কোনও জিনিস শিশুশ্রমিকের হাতে তৈরি নেওয়া চলবে না।

Advertisement

মানবাধিকারের মধ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদির অধিকার থাকার মতোই আছে শিশুদের শ্রমমুক্তি। সংবিধান (২৪ ধারা) অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সে কোনও শিশুকে কর্মে নিযুক্তি এক বিবেচনাধীন অপরাধ। যদিও ২০১১ সালের সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে শিশুশ্রমিক এক কোটির বেশি। দারিদ্রই যদি শিশু দাসের জন্ম দেয়, তা হলে মানতে হয় যে, দারিদ্র মোচনের কর্মসূচি ছাড়া কল-কারখানা, ইটভাটা কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হওয়া প্রায় অসম্ভব। অতএব রাষ্ট্রের উচিত শিশুশ্রমিকদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনের সঙ্গে যুক্ত দারিদ্র দূরীকরণের কর্মসূচি যোগ করা।

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

Advertisement

চেতনার দৈন্য

অপরাজিত ছবিটি দেখে চিঠি লিখেছেন অঞ্জন মৈত্র (‘হৃদয়ে অপু-দুগ্গা’, ৮-৬)। তাঁর দুশ্চিন্তা ছিল ব্যাপারটি ‘শান্তিগোপাল’ ধরনের কিছু হবে না তো? চলচ্চিত্রটি দেখার পর উনি নিশ্চিন্ত— না, তেমন হয়নি। প্রশ্ন হল, কে এই শান্তিগোপাল?

অপরাজিত চলচ্চিত্রটির ভালমন্দ নিয়ে, বলা বাহুল্য, আমার পত্র নয়। আমি পাঠকপাঠিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি ‘শান্তিগোপাল’ নামটি যে অশ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে, সেই বিষয়ে। চিরকাল বাংলার তথাকথিত সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ যাত্রাশিল্পকে অবজ্ঞা এবং পরিহাস করে এসেছেন, তার পিছনে যে কত বড় চেতনার অভাব এবং দৈন্য কাজ করে এসেছে, ২০২২ সালে পৌঁছে তা আরও প্রকট।

নাটকের পরিবারে জন্মগ্রহণের সুবাদে যে কোনও শিল্পমাধ্যম সম্পর্কে একটা ধারণা এবং শ্রদ্ধাবোধ ছোটবেলা থেকেই তৈরি হয়েছিল। শান্তিগোপাল নামটিও সেই ভাবে শোনা। তবু শুধুমাত্র স্মৃতির উপর নির্ভরশীল না হয়ে, বন্ধু অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে কথা বললাম যাত্রা এবং নাট্য বিষয়ক গবেষক প্রভাতকুমার দাশের সঙ্গে। ওঁর স্মৃতি এবং তথ্যের ভান্ডার থেকে বেরিয়ে এল যে ইতিহাস, তা একটি পত্রে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলি, বাংলা চলচ্চিত্র এবং বাংলা থিয়েটারের মতো বাংলা যাত্রাপালার ইতিহাসও অত্যন্ত গর্বের। শান্তিগোপালবাবুর কীর্তি সেই সমৃদ্ধশালী ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। জীবনীমূলক চলচ্চিত্র এবং নাটকের যে সাম্প্রতিক সাফল্য ও ঝোঁক বাংলা এবং বাংলার বাইরে সর্বভারতীয় স্তরে দেখা যাচ্ছে, তা তো শিকড়হীন কোনও বিচ্ছিন্ন প্রবণতা নয়। তরুণ অপেরা, অমর ঘোষ, শান্তিগোপালবাবুর মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৬৮ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে ‘হিটলার’, ‘লেনিন’, ‘কার্ল মার্ক্স’, ‘রামমোহন রায়’, ‘বিবেকানন্দ’ প্রভৃতি ভূমিকায় শান্তিগোপালের অভিনয় হাজার হাজার মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামেগঞ্জে উপচে পড়ে মুগ্ধ হয়ে দেখতেন। আমাদের শৌখিন নাট্য ও চলচ্চিত্রচর্চা যখন অ্যাকাডেমিতে, রবীন্দ্র সদনে বা মধুসূদন মঞ্চে অথবা নন্দন-এ দেখানো হবে কি হবে না-র বিতর্কে মাথা খোঁড়ে, তখন যুক্তফ্রন্ট আমলে ১৯৬৮-তে শান্তিগোপাল, অমর ঘোষ-রা ফ্যাসিবাদের কুৎসিত চিত্র তুলে ধরেছেন হিটলার পালার মাধ্যমে। দরিদ্র মানুষ, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ সেই পালা দেখেছেন। তাঁদের চোখের সামনে জ্যান্ত হয়ে উঠেছে রুশ বিপ্লবের ইতিহাস, মার্ক্সবাদের ইতিহাস, রামমোহনের লড়াই, বিবেকানন্দের দর্শন। হয়তো সরল ভাবে, হয়তো সূক্ষ্মতার অভাব ছিল, তবু প্রচেষ্টাটা যে অসামান্য, সেই ইতিহাস ব্যঙ্গ বিদ্রুপে ভুলিয়ে রাখার প্রয়াসটি বড়ই বেদনাদায়ক।

১৯৬৭ সালে স্বপনকুমার-এর অসামান্য অভিনয়ে সমৃদ্ধ মাইকেল দেখে, শোনা যায়, সাঁওতাল রমণীরা কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন। মধুসূদন দত্তের জীবন, তাঁর বাংলা সাহিত্যে কী অবদান, এ সব তাঁরা কিছুই জানতেন না। আমাদের দেশের কোনও শাসক, কোনও কালেই চান না, মানুষ তার ইতিহাস, তার প্রকৃত ঐতিহ্যের কথা জানুক। তবু চলচ্চিত্র-নাটক-যাত্রা-ছবি-কবিতা, কখনও-কখনও সমস্ত বাধা অতিক্রম করে প্রমাণ করে দিয়েছে, শিল্পে ‘আমরা-ওরা’ হয় না।

সময় জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে, বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করার আয়োজনও প্রায় সম্পূর্ণ। প্রয়োজন প্রকৃত সত্যকে জানার। প্রয়োজন, ইতিহাসের সঠিক পাঠ।

কৌশিক সেন, কলকাতা-২৬

নারীপাচার

‘পাচার চলবে, আর সবাই চুপ’ (২-৬) প্রবন্ধটি মর্মস্পর্শী। খাদিজা বানু গ্রামবাংলার মেয়েদের জীবনের দারিদ্র, বঞ্চনার করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। পূর্বের সেই অমানবিক সতীদাহ, কাশীবাস, কঠোর বৈধব্য, এ সব কুপ্রথা বন্ধ হলেও বর্তমানে মেয়েদের জীবনে অবৈধ পাচার, যৌন দাসত্ব, পীড়ন অনেক বেড়ে গিয়েছে। মুসলিম সমাজের অবস্থা আরও করুণ। দারিদ্র, অশিক্ষা, বহুবিবাহ, অবৈধ তালাক, শ্বশুরঘর থেকে বিধবা বধূ বিতাড়নের মতো কুপ্রথার কবলে নিপীড়িত অসহায় নারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, পাচার আরও সহজ হচ্ছে। নানা প্রলোভনের শিকার হয়ে মেয়েরা হারিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ, প্রশাসন, পঞ্চায়েত-ব্যবস্থা, প্রযুক্তি ও মিডিয়া এখন অনেক আধুনিক ও উন্নত হলেও এই সব সংগঠিত অপরাধ-চক্রের জাল, ব্যবসায়িক স্বার্থ ও আর্থিক প্রভাবে পুলিশ-প্রশাসন সব সময়ে যথার্থ পদক্ষেপ করতে পারে না, দেরি হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনও প্রলোভিত হয়ে অন্ধ হয়ে থাকে। জনগণের সার্বিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া নারীদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ, পাচার ঠেকানো যাবে না। অসহায় নারীদের সংগঠিত হতে হবে। পাচারের পণ্য না হয়ে সমাজের মূল স্রোতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হবে। নারীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে নিরলস প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো জরুরি। তা না হলে এই অসহায় নারীদের জীবন সুরক্ষিত হবে না।

সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

পরোক্ষে মদত

আমি ধুলিয়ান শহরের বাসিন্দা। আমার রিটেল স্পিরিটের দোকান আছে। আইনত, কোনও নির্দিষ্ট থানার অন্তর্গত এলাকার দোকানগুলিতে ‘সরকারি পারমিট’ প্রাপ্ত ডিলারাই একমাত্র স্পিরিট সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোক পারমিট না থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে স্পিরিট বিক্রি করে চলেছে। তারা কোনও রকম সরকারি করও দেয় না। প্রশাসনের কি এই সমস্ত বেআইনি কার্যকলাপ আটকানো কর্তব্য নয়? যাঁদের সরকারি লাইসেন্স রয়েছে, তাঁরা কেনই বা কর দেবেন, যেখানে ওরা কম দামে জিনিস বিক্রি করে বাজার দখল করে রেখেছে? লাইসেন্স-প্রাপ্ত ডিলারদের তেমন কোনও লাভ থাকে না, লাইসেন্স নবীকরণের টাকা পর্যন্ত ওঠে না। বিনা কর ও বিনা লাইসেন্সে ব্যবসা করার সুযোগ যখন প্রশাসন নিজেই করে দিচ্ছে, তখন লাইসেন্স ও কর নামক ব্যবস্থাটা বজায় রাখা অর্থহীন।

তামান্না হোসেন, সামশেরগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement