Letters to Editor

সম্পাদক সমীপেষু: সঙ্কটে সঞ্চয়

৯৮ শতাংশ গ্রাহকেরই অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে টাকা রাখার ঝুঁকি কার্যত শূন্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৫
Share:

‘যদি ব্যাঙ্ক ডোবে, তবু পাঁচ লক্ষ তিন মাসেই’ (১৩-১২) সংবাদটি আসলে একটি দুঃসংবাদ হিসাবে সকলের কাছে গণ্য হবে। ইন্দিরা গাঁধী ১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে যখন ১৪টি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রীয়করণ করেন, তখন জনসাধারণের কাছে তা বাস্তবিকই একটি খুশির খবর ছিল। বস্তুত, সেটি ছিল প্রকৃত এক মাইলফলক। আর এখন ব্যাঙ্ক ডুবলে তিন মাসের মধ্যেই ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার-সহ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও দাবি করেছেন, এই সংস্কার নাকি একটা মাইলফলক! সত্যিই ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আর আমরা যাঁরা এই দু’টি কাজ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, আমাদের কোনটা ভাল বুঝতে চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছে। যদি কারও অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষের বেশি টাকা থাকে, তিনি প্রশ্ন করলে শুনতে হচ্ছে, “৯৮ শতাংশ গ্রাহকেরই অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে টাকা রাখার ঝুঁকি কার্যত শূন্য।”

Advertisement

এখন প্রশ্ন হল, ওই হিসাব তাঁরা কোথায় পেলেন, যেখানে ভারতে নিম্নবিত্তের সংখ্যাও নেহাত কম নয়? আর, ৫ লক্ষ টাকা বর্তমান বাজারে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও অঙ্ক নয়! অনেকে মেয়ের বিয়ে, পরিবারের চিকিৎসা ইত্যাদির কথা ভেবে পাঁচ লক্ষের বেশি টাকা ব্যাঙ্কে রাখেন শুধুমাত্র নিরাপদ ভেবে। এ ছাড়া বহু মানুষ আছেন, যাঁদের অবসরের পর পেনশনের সামান্য টাকায় চলে না বলে অবসরপ্রাপ্ত টাকা ব্যাঙ্কে রেখে তা থেকে প্রাপ্ত সুদের উপর নির্ভর করতে হয়! এবং তাঁদের আমানতের পরিমাণ সকলেরই পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি। তাঁদের ক্ষেত্রে তো ব্যাঙ্ক ডুবলে অবস্থা মর্মান্তিক হতে বাধ্য। সরকার কেন তার দায় নিপুণ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে? বৃহত্তর ক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্পপতিরা ব্যাঙ্কঋণ পরিশোধ না করে বিদেশে আশ্রয় নেন। সেখানে সরকার কিছুই করে না। এ দিকে ব্যাঙ্ক ডুবলে আমানতকারীদের টাকা পুরোটা ফেরত দিতে সরকারের অনীহা কেন?

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা এতটাই ভাল যে, তারা নিজেরাই বাজার থেকে টাকা তুলতে পারছে।” ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা এত ভাল হলে, আমানতকারীদের নিশ্চিত নিরাপত্তা দিতে পারছে না কেন? লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ, ব্যাঙ্ক ডুবলে তিন মাসে নির্দিষ্ট ৫ লক্ষ টাকা ফেরত— এ সব জনস্বার্থ বিরোধী নীতি নেওয়া থেকে বিরত থাকুক। না হলে ভবিষ্যৎ পরিণাম শাসক দলের পক্ষে যে মোটেই শুভ হবে না, তা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে।

Advertisement

তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২

ইন্ধন

ব্যাঙ্ক ডুবলে তা কেন ডুবল, তার কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনও মাথাব্যথা নেই। তিনি বরং তাঁর সমস্ত দায়িত্ব এড়িয়ে মাত্র ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হাত ধুয়ে ফেলতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে যাঁরা অবসর গ্রহণ করছেন, তাঁদের অনেকেই (বিশেষ করে আধিকারিকরা) পিএফ, গ্র্যাচুইটি, পেনশন কমিউটেশন ও লিভ এনক্যাশমেন্ট মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পান। এবং নিজেদের সুবিধার্থে এই টাকা অধিকাংশ মানুষই বাড়ির কাছাকাছি কোনও ব্যাঙ্কের শাখাতে রাখেন। এখন সেই ব্যাঙ্ক ডুবলে আমানতকারী পাবেন মাত্র পাঁচ লক্ষ। বলা বাহুল্য, ব্যাঙ্ক ফেলের ক্ষেত্রে সরকারের তথাকথিত সিদ্ধান্ত বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাঙ্কগুলিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ডোবানোতে পরোক্ষে ইন্ধন জোগাবে, এবং তার ফলে সাধারণ আমানতকারীরা ধনেপ্রাণে মারা যাবেন। আর এ সবই ঘটবে সরকারি নীতির বদান্যতায়।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

অশনিসঙ্কেত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে অ্যাকাউন্ট পিছু ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত পাবেন আমানতকারীরা। এই ঘোষণায় সাধারণ আমানতকারীদের উদ্বেগ বাড়াই স্বাভাবিক। কারণ যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষ টাকার বেশি আমানত রয়েছে, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে তাঁদের আমানত পুনরুদ্ধারের কোনও আইনি উপায় আর থাকবে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিংহভাগ অংশীদারি যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের, তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লাটে ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই। ১৯৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে ২৮টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ডুবে গিয়েছে, সেগুলির দায়িত্ব নিতে হয়েছে কোনও না কোনও সরকারি ব্যাঙ্ককে। অর্থাৎ, এত দিন বেসরকারি ব্যাঙ্ক ডুবে গেলেও তার দায়িত্ব যে হেতু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি নিত, তাই কোনও আমানতকারীর একটা টাকাও খোয়া যায়নি। আজ স্পষ্ট যে, কেন কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা নিচ্ছে। কারণ দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থাকলে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় কোনও কারণ নেই। পিএমসি ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক, তার পর লক্ষ্মীবিলাস ব্যাঙ্ক— নরেন্দ্র মোদীর জমানায় একের পর এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক লালবাতি জ্বেলেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, বেসরকারি ব্যাঙ্ক হলেই বেশি দক্ষ নয়। সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের তফাত কোথায়, একটা উদাহরণ দিলেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে জনধন যোজনা নিয়ে গর্ব করেন, সেই জনধন প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যেখানে ৪০.৫০ কোটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে, সেখানে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছে মাত্র ১.২৫ কোটি। কৃষকদের ঋণ, মাছ চাষ, ছোট ছোট পোলট্রি, ১০০ দিনের কাজের টাকা, পেনশন, বার্ধক্য ভাতা-সহ দেশের সাধারণ ও দরিদ্র মানুষদের পরিষেবা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছাড়া হয় না। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার সরকারি ব্যাঙ্কগুলি তুলে দিতে চাইছে সেই সব কর্পোরেটের হাতে, যারা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে সেগুলি শোধ করেনি।

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

এ কেমন সমাধান

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সন্দেহ হয়, ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা কি এখন এত খারাপ যে, যে কোনও সময়ে, যে কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণা করে বন্ধ হতে পারে? ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের থেকে ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ তথ্য নিয়ে থাকে, কিন্তু গ্রাহকরা ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা কেমন, তার বিন্দুমাত্র আভাস পেতে পারেন না। তাই গ্রাহকদের আগে থেকে সতর্ক হওয়া সম্ভব হয় না।

অনেক প্রবীণ নাগরিক এবং বহু মানুষ ব্যাঙ্কে তাঁদের জীবনের সঞ্চয় রাখেন, যা ৫ লক্ষ টাকার অনেক বেশি। বাকি টাকাগুলি মার গেলে দুর্মূল্যের বাজারে এই মানুষদের কী ভাবে চলবে? সরকারের দেখা উচিত ব্যাঙ্কগুলি কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে এ রকম সঙ্কটে পড়ছে? সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের হাতে এত রেগুলেটরি অথরিটি, আরবিআই আছে, তবুও কেন ব্যাঙ্কগুলির দেউলিয়া ঘোষণার পরিস্থিতি হবে? একটা আইন প্রণয়ন করে ব্যাঙ্ক বন্ধ হলে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ— এটা কোনও সমস্যার বাস্তব সমাধান নয়। সাধারণ মানুষের টাকা এই ভাবে বাজেয়াপ্ত করার কোনও অধিকার নেই।

তপন কুমার রায়, কলকাতা-৭৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement