কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অত্যাচার এবং অবিচার নিয়ে সারা পৃথিবীতেই প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। আলোচনা চলছে, পৃথিবীর শিল্প-সাহিত্যে কী ভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের এত দিন অপাঙ্ক্তেয় করে রাখা হয়েছে। ভারতের বা বাংলার সাহিত্যিক এবং শিল্পীরা বহু দিন অবধি, বা হয়তো এখনও, আফ্রিকাকে দেখেছেন ঔপনিবেশিকতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ফলে বাংলার শিল্প-সাহিত্যেও অনেক সময়ই আফ্রিকার মানুষের প্রতি এই ইউরোপিয়ান মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘আবার যকের ধন’-এ এক জন আফ্রিকান সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সে অপরাধীদের পোষা ‘দৈত্য’। তার গায়ের রং ‘অন্ধকারের চেয়েও কালো’। আফ্রিকা যাওয়ার পথে জাহাজে এক আফ্রিকান ব্যক্তির চেহারার বর্ণনা দেওয়ার সময় লেখা হচ্ছে, ‘তার রঙ আবলুশ কাঠের মত কালো কুচকুচে ও তার চোখ দুটো আশ্চর্য রকম জ্বলজ্বলে ও জন্তুর মতন হিংস্র’। একটি চরিত্র মন্তব্য করে, ‘ওই কাফ্রিটার চেহারা হল আপনার আছে ভদ্র?’
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ বাংলা সাহিত্যের এক মাইলফলক। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই উপন্যাসেও আফ্রিকার মানুষের বর্ণনা প্রায় নেই। বরং আফ্রিকায় থাকা ইউরোপীয় পর্যটকদের কথাই বেশি। শঙ্কর এত দিন আফ্রিকায় ঘুরল, কিন্তু তার কলমে যে ক’টা চরিত্রের বর্ণনা আমরা পাই, তার সিংহভাগই শ্বেতাঙ্গ। এক জায়গায় আফ্রিকার পর্বতশ্রেণির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ‘এদেশের মাসাই, জুলু, মাটাবেল প্রভৃতি আদিম জাতির মতোই ওর আত্মা নিষ্ঠুর, বর্বর, নরমাংসলোলুপ।’
সত্যজিৎ রায়ের ‘নয়ন রহস্য’ উপন্যাসে আফ্রিকান চরিত্র গাওয়াঙ্গিকে যেমন প্রথম বর্ণনা থেকেই বলা হয়েছে দৈত্য বা দানব। ‘অতিকায় প্রাণী’। বাড়ির দারোয়ান তাকে তুলনা করেছে গরিলার সঙ্গে। বলা হয়েছে, গাওয়াঙ্গির বুদ্ধি নেই বলে তাকে এত সহজে হিপনোটাইজ় করা যায়। উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্সের আগে আবার গাওয়াঙ্গির বর্ণনা দেওয়ার সময় বলা হচ্ছে, ‘এক অতিকায় কৃষ্ণকায় প্রাণী’! এ ভাবে আফ্রিকানদের ‘ডিহিউম্যানাইজ়’ করা ইউরোপীয় লেখকদের বৈশিষ্ট্য ছিল।
সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ উপন্যাসে থমবোটা নামে এক আফ্রিকান চরিত্র আছে। এখানে এক জায়গায় এই চরিত্র বলছে যে ভারতের স্বাধীনতা ‘আমাদের মত অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশগুলোকে’ সাহায্য করেছিল। কোনও আফ্রিকান নিজের দেশ সম্পর্কে এ ভাবে কথা বলেন না। আফ্রিকা যে অন্ধকারে ঢাকা মহাদেশ, সেই চিন্তা একান্ত ভাবেই ইউরোপীয়। আবার আর এক চরিত্র সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে সে নাকি শিশুর মতো সরল। আবার এই নিয়ে ব্যঙ্গও করা হয়েছে যে, সিংহ বা গরিলার দেশের লোক কেন আরশোলা দেখে ভয় পায়।
ইউরোপ, আমেরিকায় এই জর্জ ফ্লয়েড-পরবর্তী পৃথিবীর বিচারে যে প্রাচীন শিল্প গ্রহণযোগ্য নয়, তাকে বাদ দেওয়ার কথা হচ্ছে। আবার কিছু শিল্পের ক্ষেত্রে পাশে লিখে দেওয়া হচ্ছে যে এই সব চরিত্রচিত্রণ বাতিল ধ্যানধারণার ফসল। এ দেশে এই সব সাহিত্য, বিশেষত শিশু সাহিত্য নিয়ে এ রকম কিছু ভাবা যায় না?
রুদ্রজিৎ পাল, কলকাতা-৩৯
আদানপ্রদান
‘শৃণ্বন্তু বিশ্বে’ (২১-৬) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে ‘...সমাজের আন্তরিক তাগিদেই গড়িয়া উঠিতে পারে বিনিময়ের সংস্কৃতি।’ যথার্থই। আমাদের দেশের সঙ্গীতে এই আন্তরিক তাগিদ ছিল এবং আছে। উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ বা উস্তাদ ফৈয়জ খাঁ সাহেবের গানে ‘হরি’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে বারে বারে। মহম্মদ রফি সাহেব গেয়েছেন ‘হরি ওম’ এর মতো একাধিক ভজন। ‘মধুবন মে রাধিকা’ গাইছেন রফি সাহেব, লিপ দিচ্ছেন দিলীপকুমার (ইউসুফ খান)— আমাদের দেশেই তো ঘটেছে এমন ঘটনা। বিনা বাধায়।
রবীন্দ্রনাথের সুরে কিছু ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব আছে। আবার আছে বাউল, কীর্তন এবং দেশজ অন্য লোকসঙ্গীতের স্পর্শ। নজরুল যেমন প্রভাবিত আরবি সুরে, তেমনই কীর্তনাঙ্গে, মার্চিং টিউনেও। হিন্দি সিনেমার কিছু গানও মনে আসে। রাহুল দেববর্মণের ‘মেহবুবা মেহবুবা’ সুর নেওয়া হয়েছে আজারবাইজানের লোকসঙ্গীত থেকে; এ আর রহমানের ‘জয় হো’-র সুরে প্রভাব পড়েছে আরবের লোকগানের। মান্না দে গেয়েছেন বিদেশি সুরের ভিত্তিতে ‘আমি নিরালায় বসে’, ‘হায় হায় গো রাত যায় গো’। ভূপেন হাজারিকার পল রবসন-অনুপ্রাণিত ‘গঙ্গা’। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি তার ছলনায় ভুলব না’ আফগানিস্তানের লোকগান অনুপ্রাণিত। সাম্প্রতিক কালে কবীর সুমন বিদেশি গানকে বঙ্গীকরণের এক বড় দৃষ্টান্ত।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর
হ্যাম রেডিয়ো
অ্যামেচার রেডিয়ো সারা বিশ্বজুড়ে হ্যাম রেডিয়ো নামেই বেশি পরিচিত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের সময় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায় বলে সেই মুহূর্তে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হ্যাম রেডিয়ো। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন হ্যাম রেডিয়ো অপারেটররা। দুর্যোগের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে, উদ্ধারকাজে অপারেটরদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যে হেতু এটি শখের বিজ্ঞান চর্চা, তাই স্কুলস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হ্যাম রেডিয়ো সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে। তবে এই রেডিয়ো অপারেটরদের লাইসেন্স ও কল সাইন থাকা জরুরি। সারা বিশ্বজুড়ে হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সংখ্যা যেখানে প্রায় ত্রিশ লক্ষ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র হাতে গোনা কয়েক জন। প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।
বিশ্বজিৎ বৈদ্য, রাইন, কোলাঘাট
বসন্ত রাইজি
১৩ জুন ভারতের প্রবীণতম ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট ইতিহাসবিদ বসন্ত রাইজি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। বয়স হয়েছিল ১০০ বছর ৪ মাস ১৮ দিন। ১৯৩৯ সালে ভারতের ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাঁর অভিষেক। ১৯৪১-এ প্রথম বার মুম্বইয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে বিজয় মার্চেন্ট-এর নেতৃত্বে ইনিংসের সূচনা করেন। পরে বডোদরার হয়েও খেলেছিলেন। সংক্ষিপ্ত ক্রিকেট জীবনে মাত্র ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২টি হাফ-সেঞ্চুরি-সহ ২৭৭ রান করেন। অবসর জীবনে রণজিৎ সিংহ, দলীপ সিংহ, ভিক্টর ট্রাম্পার, সি কে নাইডু-র মতো ক্রিকেটারের ওপর বই লিখেছেন।
অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩
প্রতিভা
লোকে বলে, বিষেন সিংহ বেদীর জন্যই নাকি টেস্ট খেলা হয়নি রাজিন্দর গোয়েলের। রঞ্জি ট্রফিতে দীর্ঘ দিন এক টিমে খেলেছেন দু’জন। তারকাখচিত সাউথ জ়োনকে হারিয়ে প্রথম বার দলীপ ট্রফি জেতার পর নর্থ জ়োনের গোয়েল ঘুমিয়ে পড়লেন। সে রাতে বেদী ক্যাপ্টেনের খরচে দুই দলকে নিয়ে চিকেন আর হুইস্কি-সহযোগে এক পার্টি দিচ্ছিলেন।
গাওস্করের কথায় বেদীর থেকে গোয়েলকে খেলা বেশি কঠিন ছিল। বেদীকে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করা যেত। গোয়েলের বলে ক্রিজ় ছাড়া যেত না। এই মানুষটি রঞ্জি ট্রফির সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তিনি কখনও টেস্ট খেলেননি। তবু তাঁর আকস্মিক প্রয়াণের পর ক্রিকেটমহলের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়, সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমীর ‘মনে তার নিত্য আসা যাওয়া’।
অরিজিৎ সেন, কলকাতা-৪৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
সোমক রায়চৌধুরী লিখিত ‘এক অন্য করোনা রহস্যের সন্ধান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সূর্যের করোনা অংশের তাপমাত্রা ২০ লক্ষ থেকে কয়েক কোটি সেলসিয়াসের পরিবর্তে কয়েক হাজার কোটি লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।