দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গন পড়ুয়াদের ছেড়ে যাওয়ার নিরিখে ক্রমশ নির্জন হয়ে আসার খবর এখন নিত্যই মেলে। অসমের সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার অনুপাত ২০১২ সালে ৮৪ শতাংশ থেকে এখন ৬৮ শতাংশ, যা আগামী ১০ বছরে আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। এই রাজ্যে কলকাতা পুরসভার বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সংখ্যা ২৭ হাজার থেকে ১৮ হাজারে কমেছে। আশঙ্কার এই অন্ধকারে বরেণ্য অর্থশাস্ত্রী কৌশিক বসু মনে করিয়ে দিলেন একটি কল্যাণরাষ্ট্রের জরুরি কর্তব্য, যা উল্লিখিত ‘পরিবর্তন’ (২৮-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে। সেই সর্বজনীন কর্তব্যের বাইরে সরকারি বিদ্যালয় থাকতে পারে না। এবং থাকতে না চাইলে তা যে সম্ভবপর, তা দেশের রাজধানীতে গত কয়েক বছর ধরে ঘটে চলা ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে। বেসরকারি স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে পড়ুয়ারা।
২০১৩ সালে শিক্ষাবিদ আতিশী মার্লেনার নেতৃত্বে যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা দিল্লিতে এই ভোলবদল করেছেন, তাঁরা কেউ নতুন নিযুক্ত নন, অধিকাংশই পুরনো। এই পুরনোরাই নতুন দিশা দেখাতে পারছেন, কারণ শিক্ষা সম্পর্কে আপ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মৌলিক। শিক্ষাখাতে বাজেটের ২৪% খরচ এ দেশের কেন্দ্র, বা কোনও রাজ্য সরকার করে না। আর মন্ত্রিত্বে না থেকেও নেতৃত্বে ছিলেন এমন এক বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি মধ্যপ্রদেশে কিছু অঞ্চলে বিকল্প শিক্ষায় আপ-এ যোগ দেওয়ার আগে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন। রোজগারের সুযোগ হেলায় ছেড়ে, মাসে এক টাকার বিনিময়ে আতিশী এই কাজ করে চলেছেন। সেমিনারে তথ্যপূর্ণ নিটোল বক্তব্য, বা পত্রপত্রিকায় চুলচেরা বিশ্লেষণ ছাড়িয়ে এক শিক্ষাবিদ বাস্তবে কী করতে পারেন, তার নজির দিল্লির শিক্ষাব্যবস্থা— সরকারি আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতায়।
এই প্রেক্ষিতে কলকাতা পুরসভার আপ সরকার থেকে পরামর্শ গ্রহণের উদ্যোগের সংবাদ সাধুবাদযোগ্য। দেশের অন্য দুই রাজ্য কেরল ও তামিলনাড়ু দিল্লির শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে। দিল্লি শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগ সংক্রমিত হোক সারা দেশেই।
মানস দেব, কলকাতা-৩৬
গলদ পাঠ্যক্রমে
‘সরকার ও শিক্ষা’ (২৮-৬) শীর্ষক চিঠিটি পড়লাম। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের এক সন্তান হয়ে আমি তীব্র ভাবে শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরোধিতা জানাই। শিক্ষার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে শিক্ষার বেসরকারিকরণ হলে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয় থেকেই যায়। আমি এক জন গৃহশিক্ষক। সরকারি ও বেসরকারি, দুই বিদ্যালয়েরই ছাত্র পড়াই। একই শ্রেণির একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের বই ও সরকারি বই তুলনা করলে দেখা যায়, পাঠ্যসূচিতে বিস্তর ফারাক। বেসরকারি বিদ্যালয়ের বইগুলি গুণমানে যথেষ্ট উন্নত সরকারি বিদ্যালয়ের থেকে। ফলে, বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেকখানি এগিয়ে থাকছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলের ছাত্রটিকে কোনও একটি বিষয়ের কোনও অধ্যায় নতুন ভাবে শিখতে হচ্ছে, যেটা বেসরকারি স্কুলের ছাত্রটি অনেক আগে থেকেই শিখে এসেছে। ইংরেজির ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভাবে দেখেছি।
সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যবই ও পাঠ্যসূচি ‘আপডেট’ করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমের ‘পঠন সেতু’ বইটির সংযোজন প্রশংসার দাবি রাখে। এ ছাড়াও শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতি মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে (শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি)। প্রতিটি স্কুলে পাঠদান কেমন ভাবে হচ্ছে, তা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দরকার হলে ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। এবং সর্বোপরি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় বদল আনতে হবে। না হলে শিক্ষাখাতে টাকা বরাদ্দব্যর্থ হবে।
তান্তু রক্ষিত, শক্তিগড়, পূর্ব বর্ধমান
নিষেধই যথেষ্ট?
সরকারি তরফে আবার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশন করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিকই, এই কাজটা বন্ধ হওয়ায় উচিত। কিন্তু পাশাপাশি, সরকারি স্কুলগুলোতে ঠিকঠাক পড়াশোনার দায়ও সরকারের নেওয়া উচিত। এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল শুরু হয়েছে, অর্থাৎ তখনই একমাস দেরি হয়ে গিয়েছে। বই পেতে পেতে আরও কিছু দিন। তার পর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য স্কুল বন্ধ থেকেছে। এবং অধিকাংশ স্কুলেই প্রথম মূল্যায়ন শেষ হওয়ার আগেই ৫৬ দিনের গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছিল। তা হলে সিলেবাস শেষ হবে কী করে?
শিক্ষার্থীরা কী শিখল এই ছ’মাসে? কার ভরসায় ছিলেন অভিভাবকরা? এক জন পরিচারিকাও সংসারের খরচ বাঁচিয়ে সন্তানকে টিউশনে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যদি কিছু পড়াশোনা হয়ে থাকে, প্রাইভেট টিউশনেই হয়েছে। যদি প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করতে হয়, তা হলে স্কুলগুলো পড়াশোনার উপযুক্ত করে তুলতে হবে। স্কুল বন্ধ রেখে, যেমন তেমন করে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিলে আখেরে আমাদেরই সর্বনাশ।
শেখর দাস, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
সরকারের দায়
‘সরকার ও শিক্ষা’ চিঠির লেখক সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরে বেসরকারিকরণের পক্ষে সওয়াল করেছেন। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ত্রুটি আছে ঠিকই, কিন্তু তা বলে তার কোনও প্রয়োজন নেই বলাটা বোধ হয় ঠিক নয়। করোনাকালে টানা দু’বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বহু পড়ুয়া পড়া ছেড়ে অর্থোপার্জনের পথ ধরেছে। ক’জনের সামর্থ্য আছে মাসে তিন-চার হাজার টাকা স্কুল ফি দেওয়ার? আজ বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়ার ভিড় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য। তাই সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রয়োজন। আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন। সরকার যদি দরিদ্র মানুষের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যের দায়িত্ব না নেয়, তা হলে সরকারের কাজটা কী?
সুজয় চন্দ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
ভালও আছে
‘সরকার ও শিক্ষা’ চিঠিতে লেখক বলেছেন যে, সরকারি স্কুল, বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলগুলোর অবস্থা শোচনীয়। সে জন্য সরকারি স্কুলগুলো নাকি তুলে দেওয়া উচিত। লেখক গুটিকয়েক স্কুলকে সামনে রেখে কী ভাবে এ রকম একটা সার্বিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? আমি এমন একটা স্কুলকে জানি, যে আরও ৮-১০টি গ্রামের ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ করে। জয়নগর পূর্ব চক্রের অন্তর্গত এই স্কুলটির বর্তমান ছাত্র সংখ্যা-প্রায় ৪০০। এর নিকটবর্তী তিন-চারটি স্কুলেও ৪৫০-৫০০ জন পড়ুয়া রয়েছে।
গাজী ইস্রাফিল, জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ভোলবদল
নিন্তু বিশ্বাসের লেখা ‘গ্রাম মানেই কি শান্তির নীড়’ (২-৭) পড়লাম। গ্রাম সত্যিই শান্তির নীড় আর নেই। রাজনীতি গ্রামের মানুষের মন বিষিয়ে দিয়েছে। এখন কেউ কারও জন্য ভাবে না। শুধু রাজনীতির রং দেখে। তার উপর সস্তা ‘বাংলা’ মদ গ্রামের মানুষকে ক্রমাগত অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। এখন বাংলা সিরিয়াল আর স্মার্টফোনের ধাক্কায় গ্রামগুলোও পিছিয়ে নেই। কিন্তু মানবতা, পড়শির দুঃখে স্বার্থহীন ভাবে পাশে দাঁড়ানো, পড়শির আনন্দকে নিজের আনন্দ ভেবে নির্ভেজাল উদ্যাপন আজ কই?
বসন্ত বর্মন, কলকাতা-৪৮