West Bengal Panchayat Election 2023

সম্পাদক সমীপেষু: সংগঠন কোথায়?

পশ্চিমবঙ্গের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, যা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে মেলে না। সেই সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র যেমন আছেন, তেমন দোল-দুর্গোৎসব থেকে শুরু করে ইদও রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ০৭:২৫
Share:

Sourced by the ABP

দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘উত্তর না-মেলা অঙ্ক’ (২০-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন সমাগত। লোকসভা নির্বাচনেরও খুব একটা দেরি নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সিউড়ি জনসভা তাই কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দলীয় নেতা-কর্মীদের পালে খানিক বাতাস দেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ। অবশ্য বীরভূম জেলাটিকে জনসভার স্থল নির্বাচন করে বেশ চমকের আবহ তৈরি করেছেন অমিত শাহ। এই রাজ্যের কর্মী সংগঠনের হাল-হকিকত তিনি জানেন না, এ কথা বিশ্বাস করা যায় না। তিনি জানেন, সংগঠন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন বৈতরণি পার হওয়া নিতান্তই অসাধ্য। প্রাথমিক ভাবে ‘ভোকাল টনিক’কে তিনি অস্ত্র করেছেন, যাতে নির্বাচন পর্যন্ত নেতানেত্রীদের মনোবল অটুট থাকে। শাসক দলের নেতাদের অনেকেই জেলে, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাটিও কারান্তরালে, তবুও বিজেপির রাজনৈতিক সংগঠনের অবস্থা সেই তলানিতে। এই রাজ্যের মানুষের আস্থা অর্জনে তাঁদের ভরসা এখনও সেই রামনবমীর শোভাযাত্রা। জনসংযোগ যেখানে শূন্য, ভরসা রাখার মতো অথবা সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোকের যেখানে বিস্তর অভাব, সেখানে শুধু ‘নেগেটিভ’ ভোটে ভরসা করে সাফল্য লাভ খুবই দুষ্কর।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, যা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে মেলে না। সেই সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র যেমন আছেন, তেমন দোল-দুর্গোৎসব থেকে শুরু করে ইদও রয়েছে। সেখানে সংগঠনহীন ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে আর ধর্মের জিগির তুলে রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের পথ যে দুঃসাধ্য, গত বিধানসভা নির্বাচন তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। অমিত শাহ পঁয়ত্রিশ আসনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। ঠিক যেমন গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ হেভিওয়েট সর্বভারতীয় নেতারা একাধিক বার এসে দু’শোর বেশি আসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যাঁরা শাসক দলের নেতাদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় আপ্লুত হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে একটাই কথা, আদালতে ‘চোর’ প্রমাণ না করতে পারলে দিনের শেষে অশ্বডিম্ব প্রসব ছাড়া অন্য কিছু হয় না।

রাজা বাগচীগুপ্তিপাড়া, হুগলি

Advertisement

আম্বেডকর

মৃন্ময় প্রামাণিকের ‘লড়াইয়ের প্রেরণা তিনি’ (১৪-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলতে চাই। ভারতের মার্ক্সবাদের বর্ণহিন্দু নেতৃবর্গ পিছিয়ে রাখা সমাজের প্রতিনিধিদের পার্টির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তেমন দেননি। অন্যতম কারণ, জাতপাত। জাতিবাদী বর্ণহিন্দুদের মানসিকতা কেমন, তা বোঝা যায় পশ্চিমবঙ্গের সিপিআইএম-এর প্রথম দিকের কিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতার মন্তব্য থেকেও। শোনা যায়, তাঁদেরই এক জন বলেছিলেন— চাষি-মজুরের ছেলে ইংরেজি শিখে কী করবে? তাদের বেশি লেখাপড়ার দরকার কী? এই মানসিকতা কেবলমাত্র কয়েক জন নয়, উচ্চস্থানীয় প্রায় সকল নেতৃত্বেরই ছিল।

ফলে, নেতৃত্বের মনোভাব ও মানসিকতাই পার্টির নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করে। নেতৃত্বের এ-হেন মানসিকতার ভিত্তিতে সিপিআইএম, আরও স্পষ্ট করে বলা যায় বামফ্রন্টের শিক্ষানীতি নির্ধারিত হয়েছিল। পরিণতিতে, চাষি-মজুরের ছেলেমেয়েরা যে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ত, সেখান থেকে ইংরেজি তুলে নেওয়া হল। বর্ণবাদী নেতৃত্বের মানসিকতা তৈরি করেছিল দলের নীতি, আর দলের নীতি তৈরি করেছিল সরকারের কর্মসূচি— যে কর্মসূচির ফলে চাষি-মজুরের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে ইংরেজিতে দুর্বল হয়ে পড়ল। কিন্তু ভারতের বামপন্থীরা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা যদি মার্ক্স সাহেবকেই অনুসরণ করতেন, তা হলে কিউবার বামপন্থী বিপ্লবের অগ্রপথিক হোসে মার্তির কথায় বলা যায়— “সরকারের কর্তব্য সব মানুষকে শিক্ষিত করা।”

দুই গোলার্ধের দুই বামপন্থী কমরেডের মধ্যে আশ্চর্য অমিল। এর কারণ হল কিউবায় শ্রেণি শোষণ, সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ ছিল। কিন্তু ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে যা আছে তা হল— জাতপাতের ভিত্তিতে শোষণ, আর্য সাম্রাজ্য-পুঁজিবাদ। আর জাতের কারবারিরাই সরকারে বসে আছে। সুতরাং, যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী তখনই আসবে যখন শাসকরা আম্বেডকরের আদর্শকে সরকারের কর্মসূচিতে গ্রহণ করবে। সুভাষের ভারত, গান্ধীর ভারত, নেহরুর ভারত আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমানে আমরা প্রত্যক্ষ করে চলেছি মনুর ভারত, গোলওয়ালকরের ভারত নির্মাণ। কিন্তু আধুনিক ভারতের রূপকার বাবাসাহেব আম্বেডকরের স্বপ্নের ভারত নির্মাণ আজও সুদূর পরাহত।

প্রবন্ধকার লিখেছেন, “...পরবর্তী কালে যোগেন মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর একটি অস্পষ্ট মানসিক দূরত্বও তৈরি হয়...।” এটি একটি ভুল ন্যারেটিভের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বর্ণহিন্দু ভাষ্য। মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো মূলত তাঁর রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক বাবাসাহেব আম্বেডকরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই নিতেন। প্রবন্ধকার এখানে যে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে মহাপ্রাণের সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী প্রয়াত জ্ঞানেন্দ্রনাথ হালদারের কথা স্মরণযোগ্য। তিনি লিখেছেন “...এরপর যোগেন্দ্রনাথ তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে ডঃ আম্বেদকরের সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লী রওনা হয়ে যান। দুই নেতার মধ্যে কয়েকদিন ধরে আলোচনার পর স্থির হলো যে, বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষতঃ দেশভাগজনিত কারণে পূর্ববঙ্গ থেকে ক্রমাগত উদ্বাস্তুর স্রোত ভারতের গায়ে আছড়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এখখুনি কোনরূপ রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করা সম্ভব হবে না; আপাততঃ যোগেন্দ্রনাথের উচিত হবে তাঁর স্বভূমি থেকে উৎখাৎ হওয়া শরণার্থীদের সেবা করা এবং এই মুহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অপবাদ দেয়া হচ্ছে তাকে থিতোতে দেয়া। তাই দিল্লী থেকে ফিরে এসে তিনি রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর নিয়ে উদ্বাস্তুদের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন বলে মনস্থির করলেন।” (মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, বঙ্গভঙ্গ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, সদানন্দ বিশ্বাস, প্রথম প্রকাশ: মার্চ ২০০৪, পৃ ৪)। আম্বেডকরের নির্দেশ তাঁর মৃত্যুর পরেও পালন করেছেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ থেকে আগত দেশভাগের বলি মানুষদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবিচল ছিলেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে আম্বেডকর চর্চার মূল স্থপতি হলেন প্রয়াত রণজিৎ কুমার সিকদার। তিনি আম্বেডকরের জীবনী প্রথম বাংলায় প্রকাশ করেন। তাঁর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী অনুবাদগোষ্ঠীর প্রকাশ ঘটে নব্বইয়ের দশকে, যাঁদের জীবনের লক্ষ্য ছিল আম্বেডকরের বিভিন্ন ইংরেজি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। তার ফসল আট খণ্ডের আম্বেডকর রচনাবলি।

চণ্ডাল বিশ্বাস. চাকদহ, নদিয়া

আনাজের দাম

‘বেড়েছে আলুর দাম, জানেই না রাজ্যের টাস্ক ফোর্স’ (১৫-৫) শীর্ষক সংবাদটি পড়ে আশ্চর্য হলাম না। প্রত্যেক বছর কাঁচা আনাজের দাম বাড়লে বিভিন্ন বাজারে টাস্ক ফোর্সের অভিযান হয়। কিন্তু এর জন্য রাজ্যের সর্বত্র যে আনাজের দাম কমে বা নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রি হয়, এমনটাও নয়। বরং ক্রেতা হিসাবে আমরা তৈরিই থাকি যে, একটি মরসুমে আলু বা পেঁয়াজ খুব কম দামে বিক্রি হচ্ছে মানে ক’মাস পরে দ্বিগুণ মূল্য দিতে হবে। কেন হয়, সরকার জেনেও জানে না। দাম কম থাকলে ও ফলন বেশি হলে তা ভবিষ্যতের জন্য মজুতের তাগিদও নেই। দাম বাড়লে সরকার দিকে দিকে নির্দিষ্ট মূল্যের দোকান ঢাক পিটিয়ে খুলে দেয়। কিন্তু বাজার ঘুরলে দেখা যায় অবস্থা একই। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা বন্ধ করে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ করুক।

অরিত্র মুখোপাধ্যায়, চাতরা, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement