প্রতীকী ছবি।
2 ‘বন্যাতেও প্রাণভোমরা এনআরসি নথি’ (১৮-৭) পড়লাম। বন্যায় ঘর ভেসে গিয়েছে, সাপের ভয়, দু’দিন খাওয়া জোটেনি আর মানুষ বাঁচাতে ব্যস্ত এনআরসি নথি। এ অমানবিক দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে অসমে। আরও কত দৃশ্যের জন্ম হবে, বলা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করা হবে। অর্থাৎ জনগণই কাঠগড়ায়! আমরা যে দেশের নাগরিক, তা আমাদেরই প্রমাণ করতে হবে!
সীমান্তের ও-পার থেকে কেউ ব্যঙ্গ করে বলতে পারেন, ভাত দেওয়ার মুরদ নেই, আতঙ্ক ছড়ানোর গোসাঁই! কেউ বলতে পারেন, লক্ষ লক্ষ চৌকিদার থাকা সত্ত্বেও কী করে প্রতিটি ইঞ্চিতে অনুপ্রবেশকারী!
কেউ আবার আইন-কানুনের প্রসঙ্গ তুলে সরাসরি বলতে পারেন, বর্ডার সিকিয়োরিটি ফোর্স কী করছিল? স্থানীয় প্রশাসন কী করছিল? তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা করা হবে না? কেন তদন্ত করা হবে না? যারা অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় তুলল, তাদের হাতে আধার কার্ড ধরিয়ে দিল, তাদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে?
আমাদের অবশ্য অত কথায় কান দিলে চলবে না। কারণ, দেশটা সবার নয়। আমাদের অধিকার শুধু ভোট দেওয়া ও নিজেকে বার বার দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ!
পিন্টু পোহান, কলকাতা-৮
সেই গ্রামে
2 কয়েক দিন আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম পুরুলিয়ায়। বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে ঘুরতে গেলাম চড়িদা গ্রামে, যেখানে ছো নাচের মুখোশ তৈরি হয়। এই গ্রামের মানুষ ছিলেন গম্ভীর সিংহ মুড়া, যাঁর প্রচেষ্টায় পৃথিবী জানতে পারে পশ্চিমবঙ্গের ছো নাচের কথা। গ্রামে গিয়ে দেখলাম, প্রতিটি ঘরে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ছো মুখোশ তৈরির কাজে ব্যস্ত। ঘরে ঘরে ছো শিল্পী, যাঁদের অনেকেই বিদেশে পারফর্ম করেছেন। শিল্পীদের হাতের কাজ দেখে অভিভূত হলাম। পাশাপাশি দুঃখজনক অভিজ্ঞতাও হল। শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল, তাই গ্রামের এক মহিলাকে অনুরোধ করলাম, তাঁর বাড়ির শৌচাগার যদি ব্যবহার করতে দেন। মহিলা চুপ করে আছেন দেখে ভাবলাম, অপরিচিতকে তিনি বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করতে দিতে চান না। বললাম, আমার প্রয়োজনটা জরুরি। তিনি ইতস্তত করে বললেন, ‘‘আমরা তো মাঠে যাই। ঘরে তো... আচ্ছা, আসুন...’’ তার পর বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন। একটা খোলা জায়গা। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। টিউবওয়েল আছে। মাটির উনুন দেখে বুঝতে পারলাম রান্না হয়। রান্নার পাশে একটা জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘এখানে করতে পারেন। কোনও অসুবিধা নেই।’’ টিউবওয়েল থেকে বালতিতে জলও ভরে দিলেন। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবিনি। মেনে নিতে হল। অথচ লক্ষ করে দেখলাম, বাড়িটা পাকা, দোতলা হয়েছে, সিঁড়ির পাশের রেলিংটা ঝকঝকে স্টিলের। টিভি আছে। সাইকেল আছে। ভদ্রমহিলার মেয়ে কলেজে পড়ে। ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য বাড়িগুলো লক্ষ করলাম। মনে হল, একই অবস্থা। কথার ছলে আরও একটি বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখলাম, শৌচাগার নেই। মনে রাখতে হবে, এই গ্রামের আন্তর্জাতিক খ্যাতি আছে। যার ফলে এই গ্রামে বিদেশি পর্যটকেরাও আসেন। এর জন্য দায়ী কী? মানুষের অসচেতনতা? শৌচাগার বানাবার টাকা আসে কিন্তু ভ্যানিশ হয়ে যায়? না দুটোই মিলেমিশে?
বন্দনা মিত্র, শান্তিনিকেতন, বীরভূম
মনে রাখুন
2 ত্রিপুরায় ২৭ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮৫ শতাংশ আসন জিতে নিয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এক সময় বাংলায় বামেদের বিরুদ্ধে ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে বেশ কিছু আসনে একই অভিযোগ উঠেছিল। তখন তাদের উত্তর ছিল, বিরোধীদের প্রার্থী কি তারা জোগাড় করে দেবে? মানুষ এই উত্তর মেনে নেননি। পঞ্চায়েত নির্বাচন-সহ আরও নানা ক্ষেত্রে তাদের স্বেচ্ছাচারে অতিষ্ঠ জনগণ এক সময় ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন বামেদের। বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। তারাও নানা ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির অপশাসনে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছিল সাধারণ নাগরিককে। তার পর সকলের চোখের সামনে গুন্ডাবাহিনী নামিয়ে নমিনেশন আটকে গত বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করল। সে ক্ষেত্রেও তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য ছিল বামেদের মতোই। ফলে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তার একটা প্রতিফলন লক্ষ করা গিয়েছে। ত্রিপুরায় বিজেপি একই কথা বলছে। মানুষকে এতটা বোকা ভাবা বোধ হয় ঠিক নয়। মনে রাখা দরকার, বাংলার জনগণ বিজেপিকে যতটা না ভালবেসে ভোট দিয়েছেন,
তার চেয়ে তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিকল্প শক্তি হতে পারে ভেবে ভোট দিয়েছেন। ঠিক যে ভাবে ২০১১ সালে জনগণ বামেদের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রকে হত্যা করে মিথ্যা ভাষণে বেশি দিন ক্ষমতা দখল করে থাকা যায় না।
কৃষ্ণা কারফা, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
উপলক্ষ অন্য
‘হজে যাবেন স্যর, ছুটি দিয়ে স্কুলে ভোজ’ (৭-৭) শীর্ষক সংবাদটিতে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে অহেতুক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন সাংবাদিক। ওই দিন স্কুল অডিটোরিয়ামে আমার সম্ভাব্য হজ যাত্রা উপলক্ষে কোনও প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়নি। আয়োজন হয়েছিল ‘ইদ-মিলন’ অনুষ্ঠানের। যাতে অংশ নিয়েছিলেন ধর্মনির্বিশেষে সমাজের কল্যাণকামী মানুষেরা। ইদ-মিলন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মঞ্চে একটি ব্যানার ছিল, যাতে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে সেটি আমার হজ যাত্রার প্রার্থনাসভার অনুষ্ঠান।
সরকারি বৈধ নিয়মানুযায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এক দিন ছুটি দিয়ে সর্বসাধারণের কল্যাণে ইদের প্রীতি মিলনের মতো শুভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করাটা অমার্জনীয় অন্যায় নয় বলেই মনে করি।
তবে হ্যাঁ, ইদ-মিলন অনুষ্ঠানের এক বারে অন্তিমে কোনও সহৃদয় ব্যক্তি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানান, ‘‘যে হেতু কিছু দিন পর আব্দুল ওহাব সাহেব হজে যাবেন, সে হেতু তাঁর হজ যাত্রার শুভকামনায় সবাই মিলে প্রার্থনা করা হোক।’’ তাই উপস্থিত সুহৃদরা ইদ-মিলনের সম্প্রীতি, সমন্বয়ের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ আমায় ফুল ও উপহার দিয়ে সম্মানিত করেন। তাঁদের আবেগকে আঘাত দেওয়ার মতো হিম্মত সে দিন আমার হয়নি। আবার তাঁদের মধ্যে কতিপয় সুধীই উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের জন্য দুপুরের একটু খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
মহঃ আব্দুল ওহাব প্রধান শিক্ষক, মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন, তপসিয়া
প্রতিবেদকের উত্তর: এই প্রতিবেদক প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা উক্ত অনুষ্ঠানের পুরোটাই হাজির ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত বক্তা প্রধান শিক্ষক হজে যাবেন বলে শুভকামনা জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মনে হয়েছে, ইদ-মিলনের থেকে প্রধান শিক্ষকের হজ যাত্রার বিষয়টি বেশি করে গুরুত্ব পেয়েছে। মাসখানেকের বেশি সময় আগে পালিত হওয়া ইদ উপলক্ষে স্কুল ছুটি দিয়ে ইদ-মিলনের অনুষ্ঠান করতে গেলে মাদ্রাসা পর্ষদের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই স্কুল ছুটি দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। যা পুরোপুরি নিয়মবিরুদ্ধ। প্রধান শিক্ষকের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিপ্রায়ে এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি।
এই সংবাদের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে কোনও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করাও হয়নি। তা সত্ত্বেও এই খবরে প্রধান শিক্ষক আঘাত পেয়ে থাকলে, দুঃখিত।