রেল, বাস, মল, সিনেমা হল, বিনোদন পার্ক, মেলা সবই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সমাবেশ, মিছিল, বাজারে মানুষ গিজগিজ করছে। অথচ সংক্রমণের আশঙ্কায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে না। আজ আট মাসের উপর ছাত্রছাত্রীরা গৃহবন্দি এবং অনেকেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ দিন বাড়িতে বদ্ধ থেকে তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অথচ, সরকারের দিক থেকে স্কুল-কলেজ খোলার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কিছু দিন আগে দেখা গেল, নিট ও জেইই পরীক্ষা পিছোনোর জন্য রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছে। অথচ, তাদের আশঙ্কা যে ভুল, তা প্রমাণিত হয়েছে। পরীক্ষার পর সংক্রমণ বাড়েনি। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। নেতানেত্রীরা ব্যস্ত ভোটের প্রচার নিয়ে। মনে হয় সরকার এক অদ্ভুত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। মাঝে পড়ে এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় তারা পিছিয়ে পড়বে। অথচ, নিকট ভবিষ্যতে রাজ্য সরকার যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না, তা ঘোষণাই করে দিয়েছে (‘এ বছর খুলছে না কলেজ’, ৩০-১১)। মনে হচ্ছে, একমাত্র বিরোধীরা এ ব্যাপারে সরব হলেই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই তাঁদের কাছে আবেদন, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ভেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সরব হন।
অসিত কুমার নায়ক, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। রাজ্য সরকার ক’দিন আগে আমাদের সিলেবাস কমিয়ে পরিমার্জিত সিলেবাস ঘোষণা করেছে। কিন্তু এর ফলে আমরা অত্যন্ত সমস্যায় পড়েছি। কারণ সর্বভারতীয় যত পরীক্ষা আছে, তার কোনওটাতে সিলেবাস কমেনি। সেই সমস্ত পরীক্ষায় আমাদের সম্পূর্ণ সিলেবাস কভার করতে হচ্ছে। সিলেবাস কমিয়ে রাজ্য সরকার যদি মার্চ মাসে পরীক্ষা নেয়, তা হলে আমাদের জীবনের একটা ধাপ নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, আমার অনেক বন্ধু স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে কোনও ক্লাস করতে পারেনি। তা ছাড়া আমাদের কোনও প্র্যাক্টিক্যাল হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করব, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে। অনেকে হয়তো ভাবেন, এক বছর উচ্চ মাধ্যমিক একটু আগে নিলে কী-ই বা হবে? কিন্তু পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশের জীবনে দাঁড়ানোর আশা শেষ হয়ে যাবে।
নীলাদ্রি আচার্য, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
সংশয়
অতিমারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার প্রথম দিকে নিঃসন্দেহে থাকবে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ২০১৯ সালের শিক্ষাবর্ষে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। ২০২০ সালে সদ্য দশম শ্রেণিতে পাঠরত শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সময় পেল মাত্র দু’মাস। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়। অধিকাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নেওয়া হয়। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়নি, সেখানকারও অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পার্শ্ববর্তী পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ‘ইনভিজিলেটর’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
অন্য দিকে, বোর্ড আয়োজিত একাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা একত্রে ২০২০ সালের নির্ধারিত সময়, অর্থাৎ মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয়। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে উভয় পরীক্ষা প্রায় মাঝপথে স্থগিত হয়ে যায়। ফলে যারা ২০২১ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষার পরীক্ষার্থী, তাদের স্কুলের পঠন-পাঠন হয়নি বললেই চলে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করা, সিলেবাস শেষ করে রিভিশন দেওয়া, মাঝে মাঝে পরীক্ষা দিয়ে প্রস্তুতি কেমন হয়েছে তা ঝালিয়ে নেওয়া, প্রশ্ন ও উত্তরের ধরন কেমন হবে তা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে আলোচনা, উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস ঠিকমতো করা, এবং সর্বোপরি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত মূল্যবান পরামর্শ থেকে এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত হল।
এ রকম পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, কলোনি ও বস্তিবাসী দরিদ্র পড়ুয়ারা, যাদের একমাত্র ভরসা বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন, ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহায়তা, তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হল। রাজ্যের একটা বড় অংশের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা গোটা একটা শিক্ষাবর্ষে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত রইল, কারণ অপ্রতুল ইন্টারনেট যোগাযোগ।
এই ক্ষতির অনেকটা হয়তো পুষিয়ে দেওয়া যেত যদি রাজ্য সরকার আরও বেশি সুচিন্তিত পদক্ষেপ করত। কয়েক মাস আগে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছিল, চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা যায় কি না। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। রাজ্য সরকার পড়ুয়াদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও বিরোধীদের সমালোচনার ঝুঁকি নিতে চায়নি।
ইতিমধ্যে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর ঘোষণা করেছে যে, ২০২১ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে না। পড়ে রইল ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে নির্ধারিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষা। অতিমারি পরিস্থিতিতে ও বিধানসভা নির্বাচনের আবহে একেবারে বোর্ডের পরীক্ষায় বাধাহীন ভাবে বসা পরীক্ষার্থীর মূল্যায়ন ও ফল নিয়ে সংশয় থাকছে।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, কলকাতা-১২৩
কী আছে
২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ইংরেজির সিলেবাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গদ্য ও পদ্য ছাড়া গ্ৰামার ও রাইটিং স্কিল আছে। কিন্তু ‘আনসিন’ থাকবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কোনও নির্দেশিকা না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়ে শীঘ্রই স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশিত হওয়া দরকার।
শ্যাম সুন্দর দাস , কলকাতা-৫১
একাদশ
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস কিছুটা কমানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রীরা খুবই উপকৃত হবে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাদশেরও সিলেবাস কমালে ভাল হয়। কারণ দ্বাদশ শ্রেণির সঙ্গে তাদেরও বার্ষিক পরীক্ষা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ দেরিতে হওয়ায় তারা অনলাইন ক্লাসও বেশি করতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য শ্রেণির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে তারা। অপর দিকে, একাদশের সিলেবাসও বেশ বড়। তাই বিনীত অনুরোধ, একাদশের সিলেবাস কমানোর ব্যবস্থা করা হোক।
মঞ্জরী ঘোষ, কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বাচ্য বাদ?
প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ব্যাকরণে বাচ্য শেখানো হয় না। শুধুমাত্র দশম শ্রেণিতেই বাচ্য আছে। সেটা বাদ দেওয়া হল কেন? তা হলে এই শিক্ষার্থীদের আর বাচ্য শেখা হবে না। এই বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার।
সঞ্জিৎ দত্ত, জলপাইগুড়ি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।