আমি এক জন চাষি, এই মুহূর্তে চার বস্তা ধান বিক্রি করে এক বস্তা আলুর বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এক বস্তা ধানের দাম ৫০০ টাকা, অপর দিকে এক বস্তা আলুর বীজের দাম ৫০০০ টাকা। গত বছর যা ১৭০০-১৮০০ টাকা বস্তা ছিল। চাষি যাতে ধানের ন্যায্য দাম পান, অভাবী বিক্রি করতে না হয়, তার জন্য সরকার মান্ডিতে ধান কিনছে। কিন্তু আমরা প্রায় ৫০-৬০ জন চাষি ধান বিক্রির তারিখ চাইতে গেলে ৮ অক্টোবর, ২০২১ সালের তারিখ দিয়েছে বাঁকুড়ার জয়পুর কৃষক মান্ডি। এটা কি প্রহসন নয়? তার মানে, এ বছর আমি সরকারকে ধান বিক্রি করতে পারব না। সরকারি দর ১৮৬৫ টাকা কুইন্টাল হলেও আমাকে ১২০০ টাকা কুইন্টালে বিক্রি করতে হবে। গত বছরও এমন ঘটেছিল। নভেম্বর, ২০১৯-এ ধান বিক্রির তারিখ চাইতে গেলে দিন দেওয়া হয়েছিল জুলাই, ২০২০। চাষি কি অত দিন ধান রাখতে পারেন? আগামী দিন পনেরোর মধ্যে আলুবীজ কিনতে হবে।
এক দিকে ধানের দাম কম, অন্য দিকে আলুবীজের দাম চড়া। পঞ্জাব থেকে এ রাজ্যে বীজ আসে। মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা বীজ স্টক করে রাখছেন, দিচ্ছেন না। এক শ্রেণির ফড়ে-দালাল, অসাধু ব্যবসায়ীদের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে আজ বাংলার চাষিরা পুতুলনাচের কুশীলব। আমি যে আলু বিক্রি করেছিলাম ৫০০ টাকা প্যাকেট (৫০ কিলোগ্রাম), তা-ই আজ বাজারে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঠ থেকে ধান, আলু প্রভৃতি শস্য ওঠার সময় অভাবী দামে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনবে এই সুবিধাভোগীরা। প্রশাসনকে অনুরোধ, ঠিক সময়ে নজর রাখা হোক কৃষির বাজারের উপর। অসময়ে দলবল নিয়ে সব্জির বাজারে ঘুরে বেড়ানোর নাটক বন্ধ হোক।
রাজীব ঘোষ
ময়নাপুর, বাঁকুড়া
বীজসঙ্কট
সদ্য শুরু হয়েছে আলু চাষের মরসুম। কিন্তু আলুবীজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে চাষিদের মাথায় হাত। আমাদের রাজ্যে আলু চাষের উপর নির্ভরশীল বহু চাষি। বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলির চাষিরা সারা বছর অর্থকরী ফসল আলু চাষের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছরের তুলনায় আলুবীজের দাম বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। অন্যান্য বছর পোখরাজ আলুবীজের বস্তা পিছু (৫০ কিলো) দাম ছিল ১৫০০-২৫০০ টাকা। এ বার চাষের শুরুতেই বস্তা পিছু (৫০ কিলো) আলুবীজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০০-৪৭০০ টাকা। এ ছাড়া সার, কীটনাশক ও মজুরি খরচও প্রচুর। সব মিলিয়ে বিঘা পিছু আলু চাষের খরচ চড়া। সেই মতো দাম না পেলে চাষিদের আদৌ কি লাভ হবে? যে হারে আলুবীজের দাম বেড়ে চলেছে, তাতে বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা।
বীজের দাম বাড়ার অনেকগুলি কারণ আন্দাজ করা যায়। বীজ আসে পঞ্জাব থেকে, লকডাউনের জন্য পরিবহণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ রাজ্যের চন্দ্রকোণা প্রভৃতি জায়গায় আলুবীজের যে উৎপাদন হয়, মনে হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। এক দিকে যেমন জোগান কম, অন্য দিকে তেমনই চাহিদা বেড়েছে। এ বছর আলু চাষে লাভ বেশি হওয়ায় বহু চাষি উৎসাহিত হয়েছেন।
কিন্তু কৃষির জন্য সরকারি সহায়তা খুব কম চাষিই পাচ্ছেন। কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণপ্রদান বা সমবায়ের মাধ্যমে সুলভ সার— এ সব সুবিধে পাচ্ছেন প্রধানত গ্রামের সেই লোকরাই, যাঁদের রাজনৈতিক সংযোগ আছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধের খবর প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের কাছে পৌঁছতেই পারে না। তার উপরে বাজারে আলুবীজের অত্যধিক দাম বেড়েছে। এমন অবস্থায় সরকারের উচিত চাষিদের জন্য সহায়ক মূল্যে সমবায় সমিতির মাধ্যমে আলুবীজের ব্যবস্থা করা।
সুকমল দালাল
খণ্ডঘোষ, পূর্ব বর্ধমান
বিপদ
পঞ্জাব থেকে প্রচুর আলুবীজ এসেছে তারকেশ্বরে। চাষিরা দেখছেন, কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের ঠেলায় কিনতে ভয় পাচ্ছেন। হেমাঙ্গিনী আলুর দাম ৪৭০০-৫০০০ টাকা, পোখরাজ এবং সুপার-৬ আলুর দাম ৩৫০০-৪০০০ টাকা। ছয় এবং সাত সুতোর আলু নেই। স্বাভাবিক ভাবেই চাষের খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে। চন্দ্রমুখী এবং জ্যোতি আলুর বীজ এখনও আসেনি। আলুচাষিরা তাই ঘোর বিপদে পড়েছেন।
লক্ষ্মণ সাঁতরা
দাদপুর, হুগলি
রেশনে আলু
বাজারে আলুর দাম এখন আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ শুধু আলুসেদ্ধ ভাত খাবে, তা-ও পারছেন না। হিমঘরের মালিকেরা সমবায় ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় আলু মজুত করেছিলেন, আর লাভের গুড় কে খাচ্ছে? এই মজুতদার, মুনাফাখোরদের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার তার নিজের মজুত-করা আলু কেন বার করে সরকার-নিয়ন্ত্রিত দোকান থেকে বিক্রি করছে না? গরিব এবং নিম্নবিত্ত মানুষ আজ দিশাহারা। এই মুহূর্তে সব রেশন দোকান মারফত সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্য দামে আলু পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বীরেন্দ্রনাথ মাইতি
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
অসাধু চক্র
খুচরো বাজারে আলুর চড়া দাম অনেক দিন ধরেই চলছে। বর্তমানে জ্যোতি আলু ৪০ টাকা ও চন্দ্রমুখী আলু ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, আগামী দিনে আলুর দাম নাকি আরও বাড়তে চলেছে। তাঁদের অভিযোগ, কিছু অসাধু চক্রের কারণে বাজারে আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না। রাজ্যে বছরে আলুর চাহিদা থাকে ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক কোটি মেট্রিক টনের কাছাকাছি। সুতরাং, জোগানে কোনও সমস্যা থাকার কথাই নয়। কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের পরিধি থেকে আলুকে সরিয়ে নেওয়ার পর রাজ্য সরকারেরও হাত-পা বাঁধা। অনতিবিলম্বে অসাধু চক্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আর দিনকয়েকের মধ্যেই প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় কিনতে হতে পারে সাধারণ মানুষকে।
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
অর্ধাহারে
হঠাৎ আলু-পেঁয়াজ দুর্মূল্য হয়ে ওঠার গ্রহণযোগ্য কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। জানা যায়নি যে, এ বছর দেশে আলু-পেঁয়াজ বা অন্যান্য কৃষিপণ্যের ফলন বা চাষ কম হয়েছে। বরং শোনা যাচ্ছে, গুদামে মজুত খাদ্যশস্য সময়মতো বণ্টন না করায় তা পচে নষ্ট হয়েছে। ভাবি, কেন্দ্রে বা রাজ্যে সরকার আছে কী করতে? নেতা-মন্ত্রী ও রাজনীতিকেরা ধনীদের স্বার্থ দেখতেই সদা ব্যস্ত ও চিন্তিত, যাতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। খেটে-খাওয়া মজুর, চাষি, গরিব ও মধ্যবিত্ত, যাঁরা জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ, তাঁদের ভোটে সরকার তথা মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদ নির্বাচিত হন। তবু তাঁরাই উপেক্ষিত, অত্যাচারিত। বহু মানুষ অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাতেও মন্ত্রীদের হেলদোল নেই।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
সুফল চাই
লকডাউন পর্বে প্রয়োজনীয় জিনিস সব জায়গায় পাওয়া যেত না। এর পর আনলক-পর্বে জিনিস পাওয়া গেলেও তা অগ্নিমূল্য। আলু ও পেঁয়াজ-সহ সব আনাজ অগ্নিমূল্য। সরকারের ‘সুফল বাজার’-এ আলু, পেঁয়াজ-সহ অনেক সব্জি সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, খবরে দেখি। এই বাজার কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জায়গায় সীমাবদ্ধ। সরকার থেকে নিয়ম করে সুফল বাজারের সুবিধা আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ এর সুবিধা লাভ করতে পারতেন।
সঞ্জয় সাউ
ডানকুনি, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।