Girl

সম্পাদক সমীপেষু : মেয়েটি ছিল দলিত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০১:২১
Share:

2 উনিশ বছরের যে তরুণীকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হল হাথরসে, তাঁকে অনেকেই তুলনা করছেন ‘নির্ভয়া’ কিংবা হায়দরাবাদের প্রিয়ঙ্কা রেড্ডির সঙ্গে। এই তরুণীর দলিত পরিচয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দোলন গঙ্গোপাধ্যায়কে (‘হাতেনাতে প্রমাণ করল হাথরস’, ৩-১০)। যৌন নির্যাতন দলিত ও প্রান্তবাসী মানুষদের উপর হিংসার একটি প্রধান উপায়। এবং গত ১০ বছরে দলিতদের উপর হিংসা বেড়েছে ২৫ শতাংশ, বলছে ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর রিপোর্ট। দলিতদের বিরুদ্ধে হিংসায় দেশে এখন শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে দলিত মেয়েদের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

Advertisement

এই বর্ণবৈষম্য এমনই এক অস্বস্তিকর সত্য, যাকে এড়িয়ে যেতে চায় পুলিশ-প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশ। তাই নির্যাতিতার দলিত পরিচয়ও অগ্রাহ্য করা হয়। যদিও তফসিলি জাতি ও জনজাতির বিরুদ্ধে হিংসাকে বিদ্বেষজনিত হিংসা বলে স্বীকৃতি দিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করেছে আইন।

পুরুষের যৌনক্ষুধাই ধর্ষণের প্রধান কারণ নয়। এর পিছনে কাজ করে ক্ষমতার বৈষম্য, আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। লিঙ্গবৈষম্যের মতোই নিম্নবর্ণের উপর উচ্চবর্ণের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাও কারণ। হাথরসে দেখা গেল, সরকারও এই ধারণার বশবর্তী। অপরাধীর গ্রেফতার থেকে ধর্ষিতার চিকিৎসা, সবেতেই বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে। লেখক বলেছেন, এ হল ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণ। তাই কি? না কি সরকারই তা প্রতিষ্ঠা করছে?

Advertisement

অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়

গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

শুধুই শাস্তি?

ভাবুন তো, যাঁকে ক্ষতবিক্ষত করা হল, জিভ কেটে দেওয়া হল, গুটিকয়েক বিকৃত মানুষকে শাস্তি দিলেই কি তাঁর প্রতি ন্যায় করা হবে? অবশ্যই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই। কিন্তু যে সমাজ তাঁর নারীজন্মকে অপমানিত করল, তাকেও কি ওই নির্যাতিতা দায়ী করেননি? ধর্মের অছিলায়, ক্ষমতা ও অহঙ্কারের আধিপত্য বজায় রাখতে নিরন্তর শোষণ চলছে। তাই কেবল প্রতিবাদই যথেষ্ট নয়। তার চেয়েও বড় কাজ এখন নারীদের পথ ছেড়ে দেওয়া, সামাজিক বৈষম্য ভেঙে ফেলা।

নারী উন্নয়নের সরকারি পরিকল্পনা, অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ করা হলেও, মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে কোনও সরকারের পক্ষ থেকেই তেমন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। আজও ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যার হার বেশি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ব্যর্থতার শিকার হচ্ছেন মেয়েরাই। বলি হচ্ছেন একের পর এক ভারত-কন্যা, যাঁদের সংখ্যা বছরে চল্লিশ হাজারেরও বেশি। সরকার এর দায় কী ভাবে ঝেড়ে ফেলতে পারে? সাধারণ মানুষের ভূমিকাই বা কী? সেখানে মোমবাতি মিছিল বা দু’দিনের সহানুভূতির পাশাপাশি কিছু সতর্কবার্তা, দাবি। তার পর? এর এক অংশ ফিরে গিয়ে সেই একই নির্যাতন করে যাবেন। প্রশাসনও চুপচাপ রাতের অন্ধকারে নীরবে পুড়িয়ে ফেলবে নির্যাতিত নারীদেহগুলোকে।

দিনবদলের সঙ্গে প্রযুক্তি যতই সুযোগের দিগন্ত বিস্তৃত করুক না কেন, নারীদের সম্পর্কে সমাজ কিন্তু সেই সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধে চালিত। বরং আরও জাঁতাকলে পেষা হচ্ছে, গলিত ব্যাধির মতো অঙ্গক্ষতও প্রসার পাচ্ছে। যেমন, লিঙ্গনির্ণয় করে গর্ভপাত করানো ও কন্যাসন্তান হত্যা, পণের জন্য বধূহত্যা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন, নারী পাচার ও মেয়েদের দেহব্যবসায় বাধ্য করা, চারিত্রিক দোষগুণ তুলে ধরে নিপীড়ন। আর এ সবের পরও ইদানীং যা বিশেষ উল্লেখযোগ্য, তা রাজনৈতিক ফায়দা লোটা এবং আইনি শিথিলতা।

ঊর্ণনাভ

শর্মাপাড়া, বর্ধমান

সংবাদে ধর্ষণ

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় আবার একটা ‘খবর’-এর উত্থান ও কাটাছেঁড়া। নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারকে শোক বা সহমর্মিতা জানানোর ভাষা নেই। জাতি, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে পুরুষরা দাবি করে, তারাই মেয়েদের রক্ষাকর্তা। নিয়ন্ত্রণকর্তা। অথচ দেখা যায়, মেয়েদের ‘শিক্ষা’ দেওয়ার নামে তারাই মেয়েদের চরম নির্যাতন করে কার্যত নিজের লালসা চরিতার্থ করে। কোথায় আমাদের লজ্জা, অনুতাপ অথবা সম্মান? কোথায় আমাদের ‘প্রাচীন’ সভ্যতার গর্ব? আমরা তা হলে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি, যা নারীকে সম্মান করতে শেখায়নি? কেন রাষ্ট্র নাগরিককে সুরক্ষা দিতে এখনও ব্যর্থ?

রাষ্ট্রের আইনব্যবস্থা এই ধরনের অন্যায়কে দ্রুততার সঙ্গে বিচার ও শাস্তি দিতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে, ভারতীয় পরিবার ব্যর্থ হয়েছে নারীকে সম্মান করার শিক্ষা দিতে। চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, ওয়েব সিরিজ়, সিরিয়ালে নারীকে এখনও ‘ভোগ্যপণ্য’ হিসেবে দেখিয়ে যাচ্ছে, জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের সেই উত্তর খোঁজার দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রসেনজিৎ সরকার

ফ্লোরিডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

লজ্জা

‘কী জ্বলিতেছে’ (২-১০) সম্পাদকীয়ের প্রসঙ্গে জানাতে চাই, হাথরসের সেই মাঠে সে দিন গভীর রাতের অন্ধকার ভেদ করা অগ্নিশিখা ছিল বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জ্বলন্ত লজ্জা! সেই লেলিহান শিখা ভস্ম করেছিল নারী স্বাধীনতার বস্তাপচা লেকচারকে। নারী দলিত না উচ্চবর্ণের, সে প্রশ্ন নয়! প্রশ্ন হচ্ছে যে, একটা স্বাধীন দেশের নারীদের নিরাপত্তা এত ঠুনকো? যার যখন

ইচ্ছা হবে, নারীদেহ নিয়ে বিকৃত উল্লাসে মেতে উঠবে? ধিক এই পাষণ্ডদের।

বিশ্বজিৎ কর

কলকাতা-১০৩

তিন বালিকা

2 ‘লজ্জা কাহার’ (সম্পাদকীয়, ২৬-৯) নিবন্ধে জলপাইগুড়ির দুইটি কিশোরী কন্যা আর বীরভূমের এক কিশোরী কন্যার নির্যাতন, লাঞ্ছনার প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। এই মাসেই আরও কত শিশুকন্যা, বালিকা, যুবতী, গৃহবধূ, স্বামীহারা নারী ধর্ষিতা হয়েছেন। সরকারের কানে কি এঁদের আর্তি পৌঁছায় না? প্রথম দু’টি স্কুলছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এক জন মারা গিয়েছে। অন্য জন বেঁচে থাকলেও কি সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? সামাজিক নির্যাতন, লাঞ্ছনা, মানসিক নিষ্পেষণ ইত্যাদির আশঙ্কা তাদের গ্রাস করেছিল। একবিংশ শতাব্দীতেও ধর্ষিতার প্রতি সমাজের চরম অবমাননা কেন?

মানিক কুমার বসু

কলকাতা-৯০

রাজনীতি কেন?

2 উত্তরপ্রদেশে একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সমালোচনায় ফেটে পড়েছেন বিরোধীরা। কোনও দলই কি বলতে পারবে যে তারা ক্ষমতায় এলে রাজ্যে ধর্ষণ পুরোপুরি আটকে দেওয়া যাবে?

ধর্ষণের পিছনে শুধু যৌন উত্তেজনাই থাকে না, থাকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্যবাদ। ছোটবেলা থেকেই যে পুরুষ দেখে এসেছে নারীদের পদে পদে লাঞ্ছিত করা যায়, সেই পুরুষ ভাবতে শেখে নারীকে চাইলেই ভোগ করা যায়, অপমান করা যায়। শিশুকে শেখাতে হবে নারী-পুরুষ সবাই সমান।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement