‘একই কাহিনি’ শীর্ষক পত্র (১৯-৭) প্রসঙ্গে বলি, প্রায় প্রত্যেক বিখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়েই এমন কিছু জনশ্রুতি চালু আছে, যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। কখনও অতিকথনের অভিঘাতে বদলে যায় এক জনের জীবনের ঘটনা। কখনও এক ব্যক্তির জীবনের ঘটনা ‘হাতবদল’ হয়ে অন্যের উপর আরোপিত হয়।
মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রাতের অন্ধকারে উত্তাল দামোদর পেরিয়েছিলেন, এমন জনশ্রুতি চালু আছে। প্রামাণ্য জীবনীতে এর প্রমাণ মেলেনি। জাদুকর পি সি সরকার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি একটি আসরে দেরি করে পৌঁছনয় দর্শকরা যখন অভিযোগ জানায়, তিনি তাদের ঘড়ি দেখতে বলেন। সবিস্ময়ে তারা দেখে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে গিয়েছে। ঘটনা হল, এই জাদু তিনি কখনও দেখাননি।
অধ্যাপক রেজাউল করিমকে ‘ব্রাহ্মণভোজন’ করিয়ে ছাত্রীরা শিবরাত্রির উপবাস ভঙ্গ করেছিল। অতিকথনের দৌলতে তা দাঁড়িয়েছে যে, রেজাউল করিম ছাত্রীদের আহ্বানে সরস্বতী পুজোয় পূজারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। খলনায়কের ভূমিকায় অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির অভিনয়ে স্থান, কাল, পাত্র ভুলে বিদ্যাসাগর চটি ছুড়েছিলেন। মুস্তাফি সে চটি তুলে বলেছিলেন, এটি তাঁর অভিনয় জীবনের সেরা পুরস্কার। এই ঘটনা একাধিক বিখ্যাত অভিনেতা সম্পর্কে চালু হয়ে গিয়েছে।
প্রদীপনারায়ণ রায়, শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
শুধুই স্বজন?
সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আকস্মিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল দেশ। দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অনুরাগীরা। কোনও কোনও বৈদ্যুতিন মাধ্যমও এই খবর পরিবেশন করছে মশলা-সহযোগে। নেটিজ়েনরা কেউ শোকাতুর, কেউ উত্তেজিত। আমরা অন্তহীন আলোচনা করছি, স্বজনপোষণ নিয়ে। যে ভয়াবহ সময়ে আমরা বাস করছি, তার প্রতি আমরা উদাসীন। অসম ও বিহার ভয়াবহ ভাবে বন্যাপ্লাবিত। শুধু অসমেই প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, শতাধিক মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন হাজার গ্রাম ভেসে গিয়েছে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও পবিতরা অভয়ারণ্যও জলের নীচে। বিহারের অবস্থাও প্রায় একই রকম। আক্ষেপের বিষয়, এই দুর্গতদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলোতে কোনও সদর্থক আলোচনা হচ্ছে না। সমাজমাধ্যমও চুপ। নেপোটিজ়ম, ডিপ্রেশন-এর মতো বড় বড় শব্দগুলোর পাশাপাশি এই বন্যাকবলিত মানুষদের দুর্দশাকেও একই ভাবে সমাজমাধ্যমের কেন্দ্রে আনা যায় না কি? সমাজমাধ্যমের যে বিশাল ক্ষমতা, তা দিয়ে প্রশাসনকে বাধ্য করা যায় না এক সদর্থক ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ করতে? নেট নাগরিকরা তাত্ত্বিক বা বিশ্লেষক হয়তো হয়ে উঠেছেন, কিন্তু নাগরিক হয়ে উঠতে পারেননি।
শিবাশিস মণ্ডল, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
ভোরের যূথিকা
‘তিন মাসে বিক্রি হল ষাট হাজার’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটি (রবিবাসরীয়, ৫-৭) শিল্পী যূথিকা রায় সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলবে। বছর দশেক বয়সে বরাহনগরের জ্ঞানরঞ্জন সেনের কাছে তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা শুরু। কাজী নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জ্ঞানরঞ্জন। তাঁর বাড়িতে নজরুল প্রথম যূথিকাদেবীর গান শুনেছিলেন। ১৯৩৩ সালে জ্ঞানরঞ্জনের কথা ও সুরে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেছিলেন, তবে তা প্রকাশিত হয়নি। ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয় ভগবতী ভট্টাচার্যের উদ্যোগে প্রণব রায়ের কথা ও কমল দাশগুপ্তের সুরে সেই ঐতিহাসিক রেকর্ড— ‘সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে’ এবং ‘আমি ভোরের যূথিকা’। প্রথম বাংলা গানে অর্কেস্ট্রা ব্যবহৃত হয়েছিল। তবলাহীন এই গানে রঞ্জিত রায় পিয়ানো ও পরিতোষ শীল বেহালা বাজিয়েছিলেন। ডিলাররা এই গানের নমুনা শুনে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন— এ গান দুটো একদম চলবে না। না হয়েছে পাশ্চাত্য সঙ্গীত, না হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, না হয়েছে রাগপ্রধান। সৌভাগ্যক্রমে, নজরুল ওই মিটিং-এ হঠাৎই উপস্থিত হন এবং সবটা শুনে রেকর্ড প্রকাশের পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করেন। বাকিটা ইতিহাস।
এ প্রসঙ্গে বিমান মুখোপাধ্যায় স্মৃতিচারণায় লিখেছেন— ‘‘… তাই মন চাইছিল এমন গান যার কথা ভাবনা গায়নভঙ্গি সব যেন মনে হবে এ আমার নিজের মুখের কথা। নিজে যে ভাবে বলি, ভাবি তার সবটুকু নিয়ে আমার এ গান— এমন গানের জন্য যখন মধ্য তিরিশের বাঙালি মন তৃষিত চাতকের মতো প্রতীক্ষায় ছিল, তখনই হঠাৎ যূথিকা রায় এসে পড়লেন। এবং এলেন, গাইলেন আর জয় করে নিলেন গোটা গানপাগল বাঙালি জাতটাকে।’’ শ্রোতারা হঠাৎ মুখোমুখি হল চলতি গানের ছাঁচভাঙা, শাস্ত্রীয় বা দেশজ গানের প্রভাব ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসা এমন এক জাতের গানের, যা বাংলা গানের ঠিকুজি-কুলুজি সমেত ভোলটাই যেন পাল্টে দিল।’’
যূথিকা রায়ের গাওয়া হিন্দি গীত, গজল ও ভজন দেশের বাইরে বর্মা, জাভা, ব্যাঙ্কক, মালয়েশিয়া, পশ্চিম এশিয়ায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতার আগের দিন ১৪ অগস্ট বিকেল থেকে রাত বারোটা— এই যুগ সন্ধিক্ষণে তিনি বেতারে একটানা দেশাত্মবোধক গান, ভজন, ও ভক্তিমূলক গান পরিবেশনের বিরল দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সরিৎশেখর দাস, চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
নারায়ণচন্দ্র
জ্যোতির্বিজ্ঞানী নারায়ণচন্দ্র রানার (সম্পাদক সমীপেষু, ১-৭) জীবন নিয়ে বই আছে। ২০১৭ সালে দীপককুমার দাঁ-র সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী নারায়ণচন্দ্র রানা, যাতে রয়েছে তাঁর বাংলা বিজ্ঞান রচনার সঙ্কলন এবং তাঁর ‘স্মরণ ও মূল্যায়ন’। বইটির প্রকাশক মণীন্দ্র-নারায়ণ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ট্রাস্ট। ২০১৬ সালে বেরিয়েছে নারায়ণচন্দ্র রানার জীবন অবলম্বনে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর উপন্যাস পাউডার কৌটোর টেলিস্কোপ (মিত্র ও ঘোষ), যাতে বর্ণিত হয়েছে এক প্রান্তিক গ্রামের দরিদ্র বালকের মহাকাশবিজ্ঞানী হয়ে ওঠার সংগ্রামের আশ্চর্য কাহিনি।
বিজ্ঞানের ইতিহাসচর্চার জগতেও নারায়ণচন্দ্র রানা আলোচিত। ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’-র পত্রিকা ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিস্ট্রি অব সায়েন্স-এর ৫১-তম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় (২০১৬) প্রকাশিত হয়েছে উৎপল মুখোপাধ্যায় এবং শৈবাল রায়ের গবেষণানিবন্ধ এন সি রানা: লাইফ অ্যান্ড হিজ় কনট্রিবিউশনস ইন অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল সায়েন্স।
সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তম প্রস্তাব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০ জনের অতিরিক্ত নিমন্ত্রিতদের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন (‘বিয়ে ও শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিতে ছাড়’, এক নজরে, পৃ ১, ১-৭)। পরামর্শটি বেশ সময়োপযোগী। নিমন্ত্রিত পরিবারও কুরিয়ারের মাধ্যমে নবদম্পতিকে উপহার পাঠিয়ে দিতে পারবেন। আজকাল তো ই মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে নিমন্ত্রণ বেশির ভাগ মানুষই মেনে নিয়েছেন।
কুশল রায়, কলকাতা-১০৮
বই ও প্রকাশক
‘অস্বাস্থ্য, অস্বস্তি থেকে ত্রাণ’ (২৭-৭) নিবন্ধে পিরিয়ড সম্পর্কে মেয়েদের অনুভব-অভিজ্ঞতা বিষয়ক বইটির ‘প্রকাশক’ বলা হয়েছে আমাকে। এগারোয় পা: মেয়েদের অন্তরঙ্গ কথা বইটির প্রকাশক গাঙচিল। অহনা বিশ্বাস এবং আমি বইটির যুগ্ম-সম্পাদক।
শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত, কলকাতা-৪৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।