‘কী জাদু বাংলা গানে’ (‘সপ্তক’ ক্রোড়পত্র, ২২-১) পড়ে এই চিঠি। ‘প্রথম কদম ফুল’-এর আশা ভোঁসলেজির গাওয়া ‘কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে’ গানটি নিয়ে একটি ঘটনা বলি।
আশাজির গাওয়া গানটি করার কথা ছিল লতাজির। না, ঠিক বললাম না, আমাদের ইচ্ছে ছিল, ওটি লতাজি গাইবেন। অর্থাৎ সুধীনদা ও আমার। সেই অনুযায়ী বম্বের ‘প্রভু কুঞ্জ’-এ হানা দিলাম আমি একলা। আশাজি ও লতাজি একই ফ্ল্যাটের দুটো ভিন্ন অংশে থাকতেন। লতাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হল না, আশাজির সঙ্গে হল।
আশাজি জানতে চাইলেন, দিদি, অর্থাৎ লতাজিকে কোন গান গাওয়াতে চান সুধীনদা। আমি বললাম, ‘কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে’। আর আপনাকে দিয়ে, ‘ডেকে ডেকে চলে গেছি’। শুনে বললেন, হয় দুটো গান আমি গাইব, নয়তো কোনওটাই গাইব না। অতএব ‘কোন সে আলোর...’ গাইলেন আশাজি। সুধীনদা এর পর গান তোলালেন আশাজিকে দিয়ে।
দীপাংশু দেব
কলকাতা-৩১
মাইলফলক
‘সপ্তক’ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত নিবন্ধগুলির মধ্যে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য দু’কলাম বরাদ্দ রাখলে খুব ভাল হত। বাংলা সঙ্গীত-জগতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র গানগুলি মাইল-ফলক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই পত্রিকার পাতায় বছর দুয়েক আগে তাঁর মুগ্ধতার কথা লিখেছিলেন, “বাজল তোমার অলোর বেণু গানটি কখন হবে, তার জন্যই ঘুম তাড়িয়ে জেগে থাকতাম বাল্যে কৈশোরে। ওই একটি মাত্র গান যে অমন করে শরতের আবাহন হয়ে উঠতে পারে তা চিনিয়েছিল বেতারস্পন্দন। ...আধো ঘুম আধো জাগার মধ্যে শুনতাম ‘জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী’-র মতো চমৎকার সব গান, গানগুলোর সঙ্গে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের খোলা ও সুর লাগানো গলায় ভাষ্য ও চণ্ডীপাঠ। রাত থাকতে উঠে ঘুমে-জাগরণে মেশা ভোরে ওই প্রোগ্রাম শুনতে শুনতেই যেন দুর্গোৎসবের শুরু হত।”
রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ, রবিশঙ্কর, রসগোল্লা ছাড়া বাঙালির আর যে গুটিকয় অহংকারের বিষয় রয়েছে, মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্ছনার আবেদন তার মধ্যে একটি। বাণীকুমার,পঙ্কজ মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই গীতি-আলেখ্যটির আবেদন চিরকালীন।
সরিৎশেখর দাস
চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
শ্রেণিশত্রু!
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ২০০৬-এর সংশোধিত বেতনক্রম কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়ার পরে, নতুন বেতন-কাঠামোয় অধ্যাপকদের মাইনেপত্তর এক ধাপে বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। সেই প্রথম মাস চালিয়ে হাতে কিছু উদ্বৃত্ত হওয়ায়, হায়ার পারচেজ়ে গাড়ি কেনার ধুম ছিল চোখে পড়ার মতো। তাতে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্তে প্রমোশন মিললেও, সমাজের সাধারণ মানুষের চোখে তখন থেকেই প্রায় শ্রেণিশত্রু হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেছিলেন অধ্যাপকেরা।
এই শ্রেণিশত্রুরা আবার এ মাস থেকে আর একটা নতুন বেতনক্রম পেতে চলেছেন। আগেই নাকি লাখ টাকার বেশি বেতন পাচ্ছিলেন, এ বারে যে কত হবে! টাকার অঙ্কটা চায়ের দোকান থেকে ট্রেনের কামরা, মুখে মুখে অম্বানী গোষ্ঠী কিংবা আদানি গোষ্ঠীর উপার্জনকে ছুঁয়ে ফেলল বলে! অথচ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ অনুমোদিত ২০১৬ সালের সংশোধিত সপ্তম বেতনক্রমের নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে সম্প্রতি এ রাজ্যের অধ্যাপকদের যে ভাবে ‘রোপা’র (রিভিশন অব পে অ্যান্ড অ্যালায়েন্স) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাতে চাকরি ও বেতনক্রমের ক্ষেত্রে এত দিনের প্রাপ্ত সম্মান খুইয়ে তাঁরা নেমে এসেছেন সাধারণ কর্মচারীর স্তরে। এমনটা কিন্তু আগে কখনও হয়নি, দেশের অন্য কোথাও হয়নি। ভবিষ্যতে এর ফলে গবেষণাক্ষেত্রে বিদেশযাত্রায় এবং বিশেষ পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগ থেকে বিভিন্ন সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া খুব অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সমাজের অধিকাংশের চোখে এই শ্রেণিশত্রুরা, বড় মুশকিলে পড়েন বাজার-হাট করতে গিয়ে, বাড়িতে কাজের লোক রাখতে গিয়ে, এমনকি চিকিৎসা করাতে গিয়েও! ডাক্তারবাবু প্রেশক্রিপশন লিখতে-লিখতে বলেন, ‘‘একটু দামি ওষুধই লিখে দিলাম, সবাই তো আর অ্যাফোর্ড করতে পারবে না।’’ রসিদ কাটতে-কাটতে চাঁদা আদায়কারী দলের ছেলেটি বলে ওঠে, ‘‘কত লিখব স্যর?’’ আর কে কী দিয়েছে জানতে চাইলে বলে, ‘‘স্যর ওদের সঙ্গে আপনার?’’ অধ্যাপকদের মধ্যেই যে অনেকগুলি স্টেজ এবং গ্রেড আছে, এবং সেই অনুযায়ী বেতনক্রমেরও প্রচুর তারতম্য আছে, সে সব কে খোঁজ রাখে?
এই অর্থবর্ষের শেষ, মার্চ মাস আসন্নপ্রায়। সমাজের নতুন শ্রেণিশত্রুদের যে কী সর্বনাশ! নতুন বেতনক্রম চালু হওয়ার আগেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে ন’মাসের বেতনে বারো মাস কাজ করতে হচ্ছে; অর্থাৎ আয়কর দিয়ে হাতে পাওয়া যায় ন’মাসের বেতন। সেটাও কাগজে-কলমে। কারণ, আয়কর কিছুটা বাঁচাতে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ে যেতেই হয়, যার পরিমাণও কম-বেশি দু’মাসের মাইনে। তা হলে দাঁড়াল কী? সাত মাসের বেতন বারো মাসে চারিয়ে দিলে প্রাপ্ত টাকার অঙ্কটা এই শ্রেণিশত্রুদের চোখ রাঙিয়ে বলে— ‘পুনর্মূষিকো ভব!’ শেষ দফা কর মেটানোর পরে মার্চ মাসে দেখা যাবে, হাতে রইল পেনসিল।
না। আর একটা জিনিসও রইল; ঠিকঠাক আয়কর দেওয়ার জন্য সেন্ট্রাল মিনিস্ট্রি অব ফিনান্স থেকে অভিনন্দন বার্তার সঙ্গে পাঠানো ‘গোল্ড ক্যাটেগরি’ কিংবা ‘ব্রোঞ্জ ক্যাটেগরি’র শংসাপত্র। সেটাই এই শ্রেণিশত্রুরা বসার ঘরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখে সান্ত্বনা খুঁজুন।
উদয়চাঁদ দাশ
পূর্ব বর্ধমান
ভুল যুক্তি
অভিরূপ সরকার লিখিত ‘ভুল যুক্তি, মিথ্যা দাবি’ (৮-২) শীর্ষক প্রবন্ধটি সম্পর্কে এই চিঠি। বিজেপির প্রথম দাবি: সিএএ আইনের পিছনে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে। এই দাবি নিপাট মিথ্যে, কিন্তু যদি সত্যিও হত, তাতেই বা কী? সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে পুষ্ট হলেই কি কোনও আইন মানবিক এবং হিতকর বলে প্রমাণিত হয়? ইতিহাসে আমরা বার বার দেখেছি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রনায়ক তাঁর গোটা দেশকে উৎকট জাতীয়তাবাদ আর জাত্যভিমানের আগুনে সেঁকে ভয়ঙ্কর রাক্ষসে পরিণত করেছেন।
বিজেপির দ্বিতীয় দাবি, পাকিস্তান-বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আপনি পাকিস্তানে গেলে শুনবেন, ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। মৌলবাদীরা এ সব কথা বলে এ জন্য নয় যে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী। এ সব বলে তাদের রক্তলালসার সমর্থনে জনমত হাসিল করবার ধান্দায়। মৌলবাদী, সে হিন্দুই হোক বা মুসলিম, উভয়েরই একই বুলি একই কৌশল একই অজুহাত। ওরা মেরেছে কেন? তাই আমরা মারছি। আপাত দৃষ্টিতে দুই যুযুধান মৌলবাদী শক্তিকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়। ভাল করে নজর করলে বোঝা যায়, ওরা সহযোগীও বটে। পরস্পরের হিংস্র শক্তিকে রস জোগায়, পরিপুষ্ট করে।
বিজেপি চায়, কোটি কোটি নিরপরাধ ভারতীয় মুসলিম নাগরিকত্ব হারাতে বাধ্য হবেন, কেবলমাত্র কয়েকটা কাগজ দেখাতে না পারার জন্য। আর যে জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্বই থাকবে না, তার ভোট দেওয়ার অধিকার, শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার, চাকরি-চাষ-ব্যবসার অধিকার, জমি-বাড়ি-দোকানের অধিকার, আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ইত্যাদি থাকবে? নাগরিকত্ব হরণ করতে পারলে একলপ্তে অনেকগুলো মৌলিক অধিকার হরণ করে নেওয়া যায়। আর তখন, তেমন হলে, গোটা দেশকে জবরদখল, লুটপাট, দাঙ্গায় ডুবিয়ে দিতে বেশি মাথা খাটাতে হয় না।
তৈয়েব মণ্ডল
গাজিপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।