মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, ‘‘কাজ না করতে পারলে নাটক করুন, গানের দল করুন। একদম সেফ।’’
আর ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমরা যারা ষাট-সত্তরে দশকের লোক, তারা দেখেছি সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, অপর্ণা সেন, উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ছবিতে কী ভাবে রাজনীতি উঠে এসেছে। এখন আর কেউ সেটা করে না। এটা আমার কাছে হতাশাজনক। ...কেউ আর পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ছবি বানাতে পারছেন না’’ (‘কেউ সাহস করে...’, আনন্দ প্লাস, ২০-১১)।
সত্যিই, বাংলা নাটক-গান-গল্প-কবিতা-সিনেমায় সমসাময়িক অনাচারের বিষয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠ দেখা যাচ্ছে না। সম্পর্কের জটিলতা, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে, ডাক্তার-রোগী— এর বাইরে বেরোতে পারছে না বিষয়বস্তু।
অথচ দেশের বর্তমান উগ্র জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোর একের পর এক ভেঙে পড়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, েবকারত্ব, দেশের নাগরিকদেরই দেশহীন করে দেওয়ার পরিকল্পনা... বিষয়ের অভাব নেই।
ইউপিএ আইনের কারণে দেশের শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন দেশের জনগণ। বহু মানবাধিকার-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে পথ দেখাতে পারতেন শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা। ব্যতিক্রম যে নেই তা বলব না, তবে তার সংখ্যা খুবই কম এবং সে-স্বরও খুব উচ্চ নয়। উল্টে দেখছি, শাসক শ্রেণিকে সন্তুষ্ট করতে একের পর এক বলিউডি ছবি তৈরি হচ্ছে, তা জাতীয় পুরস্কারও পাচ্ছে।
এ রাজ্যের অবস্থাও প্রায় তা-ই। তাই মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ঠিক কথাই বলেছেন। শিল্পীরা ‘সেফ’ পথই অবলম্বন করেছেন।
প্রকাশ দাস
চন্দননগর, হুগলি
দেশবন্ধু বিষয়ে
‘দেশবন্ধুর দৃষ্টি’ (২৯-১১) পত্রটিতে লেখক লিখেছেন, আমার ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ (৭-১১) চিঠিতে চিত্তরঞ্জনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়েছে। তার প্রত্যুত্তরেই এই চিঠি।
প্রথমত, মেয়র নির্বাচিত হয়ে চিত্তরঞ্জন ১৯২৪ সালের ২৩ এপ্রিল পুরসভার দ্বিতীয় অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রকে মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে মনোনীত করেন। সিদ্ধান্তটি সরকারি ভাবে ১৬ মে অনুমোদিত হয়। কিন্তু ওই পদে সুভাষের নাম ঘোষিত হওয়ার আগেই ১৮ এপ্রিল অমৃতবাজার পত্রিকায় এই বিষয়ে লেখা হয় — “As regards the ‘fitness’ for the post of the Chief Executive Officer, the question will arise, who is the most thorough Congressman, Mr. Sasmal, Mr. Subhas Bose or Bijoy Kumar Bose? The chemical balance will answer”. প্রতিবেদন থেকে এ কথা স্পষ্ট, এই ক্ষমতাশালী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বরাজ দলে যথেষ্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল।
এ কথা ঠিক, চিত্তরঞ্জন এই পদের জন্য সুভাষের পাশাপাশি বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকেও বিবেচনা করেছিলেন। তবে ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় শাসমলের ক্ষেত্রে বিরোধিতার কারণ হিসেবে জাতিবৈষম্য এবং কলকাতা-মফস্সল পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছেন (‘সোশ্যাল কনফ্লিক্ট অ্যান্ড পলিটিকাল আনরেস্ট ইন বেঙ্গল ১৮৭৫-১৯২৭’)। সুভাষের বাল্যবন্ধু ও চিত্তরঞ্জনের ঘনিষ্ঠ হেমন্তকুমার সরকার ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ পত্রিকায় ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১ আষাঢ়, এ বিষয়ে স্পষ্ট লিখেছেন, “অসহযোগের বন্যায় যখন দেশ ভেসে গেছে, দেশবন্ধুর পর জাতীয় আন্দোলনের তরীর কর্ণধার কে হবে, সে সম্বন্ধে সকলেই নিশ্চিত ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে মনে করে। কিন্তু বীরেন্দ্রনাথের দ্বারা দেশের সে আশা পূর্ণ হয়নি— কয়েকটি কারণে। তিনি যখন কলিকাতা কর্পোরেশনের চীফ একজিকিউটিভ অফিসার হতে চাইলেন মাসিক ৫০০ টাকা ভাতায়, তখন দলের কয়েকজন ‘মেদিনীপুরের কৈবর্ত’ এসে কলকাতায় রাজত্ব করবে ভেবে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সুভাষচন্দ্রকে খাড়া করাতে শাসমলের মনে দারুণ আঘাত লাগে। শাসমল পদের জন্য লোভী ছিলেন না, কিন্তু তিনি যেভাবে মেদিনীপুর জেলা-বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাজ চালিয়েছিলেন এবং ঐ জেলা থেকে ইউনিয়ন বোর্ড উঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সেই কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ কর্পোরেশনের ভার দেওয়াটা দলের খুবই উচিত ছিল।” (‘স্বাধীনতার ফাঁকি’, বিমলানন্দ শাসমল)।
শাসমলের জীবনীকার প্রমথনাথ পাল এই কথাও লিখেছেন যে, কংগ্রেসের খাদ্য সরবরাহ বিভাগের সম্পাদক হিসেবে দেশপ্রাণ বহু আর্থিক গোঁজামিল ধরে ফেলে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ফলে, কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ তাঁর বিরোধিতা করেন (‘দেশপ্রাণ শাসমল’)।
বিজ্ঞানসাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৯২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, “আপনার Public Life হইতে বিদায় গ্রহণ দেশের পক্ষে বড়ই দুর্ভাগ্য। ...তবে একথাও বলি স্বরাজ্য দল যেরূপ নৈতিক দুর্নীতি ও ব্যভিচার বলে দল পাকাইবার চেষ্টা করিতেছে, তাহাতে কোনও আত্মসম্মান জ্ঞানবিশিষ্ট লোক ইহার মধ্যে থাকিতে পারে না।”
বলা বাহুল্য, শাসমলকে কেন্দ্র করে এই অনভিপ্রেত ঘটনা চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পরে ঘটেনি। কাজেই মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে শাসমলকে নিয়ে দলে এত জলঘোলার পরেও ‘‘তাতে চিত্তরঞ্জনের কোনও দায় নেই’’ বলা সত্যের অপলাপ মাত্র।
দ্বিতীয়ত, ‘চাকরির শূন্যপদে শতকরা ৭৫ ভাগ মুসলমানের নিয়োগ’ বিষয়টি শ্রুতিমধুর হলেও, প্রকৃতপক্ষে কর্পোরেশনে সুভাষ মাত্র ২৫ জন মুসলমানকে নিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন (‘নেতাজি বার্থডে কমেমোরেটিভ ভল্যুম: সেন্টেনারি ইভ ট্রিবিউট ১৯২৪-১৯৪০’, লাডলিমোহন রায়চৌধুরী)।
১৯২৪-এর মার্চে খান বাহাদুর মোশারফ হোসেন যত দিন সরকারি চাকরির প্রতিটি বিভাগে মুসলমানের সংখ্যা শতকরা ৫৫ ভাগ না হয়, অন্তত তত দিন সরকারি পদে শতকরা ৮০ ভাগ মুসলমান নিয়োগ করার কথা বলেন। কিন্তু সেই আশা পূরণে ব্যর্থ চিত্তরঞ্জন, স্বরাজ অর্জনের পরে এই ‘প্যাক্ট’ কার্যকর করার কথা বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান (‘রিপোর্ট অন দি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব বেঙ্গল ১৯২৩-২৪’, পার্ট ওয়ান)।
শুধু তা-ই নয়, ১৯২৩ সালে স্বরাজ দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে জমিদারি প্রথার অবসানের দাবিও করা হয়নি এবং পরবর্তী কালে ভূমি ব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়নি। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই চুক্তি সম্পর্কে মুসলমানদের মোহভঙ্গ হয়।
চিত্তরঞ্জন সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতা। কিন্তু সর্বজনমান্য হলেও তিনি যে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন, সে কথা বলতে গিয়েই ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ শীর্ষক চিঠিতে ইতিহাসসম্মত তথ্যের অবতারণা করা হয়েছে।
দেবোত্তম চক্রবর্তী
দণ্ডপানিতলা, নদিয়া
শুরু হয়েছে
‘ওভারব্রিজ’ (২১-১১) শীর্ষক পত্র প্রসঙ্গে এই তথ্য জানাই: দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের পাঁশকুড়া স্টেশনে নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এটি স্টেশনের উত্তর প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। এই ফুট ওভারব্রিজটি ছয় মিটার চওড়া হবে এবং এর সঙ্গে লিফ্টের সুব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও স্টেশনের উভয় পাশে সার্কুলেটিং এরিয়াকে উন্নত করা হচ্ছে।
সঞ্জয় ঘোষ
মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক,
দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে
এসইউসি নয়
এসইউসিআই(সি) দলকে প্রায়ই লেখা হয় এসইউসি। দলের নাম সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট)। তাই এসইউসিআই(সি) লেখা উচিত।
স্বপন দেব
ওন্দা, বাঁকুড়া