বিজ্ঞানকে একটি গোটা পাতা বরাদ্দ করার জন্য ধন্যবাদ। অতিমারি ভারতে প্রবেশ করার সময় থেকেই ‘এষণা’-র পাতায় ভাইরাসের হালহকিকত, প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে ভাইরাসের জ়ুনোসিস, সংক্রমণের কারণ হিসেবে মানুষের অসাবধানতা ও ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্যসমৃদ্ধ অনেক প্রবন্ধ পেয়েছি আমরা। কিন্তু ঘটনা হল, ভারতের মতো দেশে বেশির ভাগ মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। গোটা দেশের বিজ্ঞানমনস্কতাই তলানিতে। এর জন্য অবশ্য দায়ী বিজ্ঞানচর্চার মুখ্য ভাগে থাকা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে জনসাধারণের বিরাট দূরত্ব। এষণা-র হাত ধরে সেই দূরত্ব কিছুটা কমানোর চেষ্টা হয়তো চলছে। কিন্তু অতিমারি আবহে কুসংস্কার নিয়ে এখানে কোনও লেখা চোখে পড়েনি।
এ ছাড়া অতিমারি থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা রকম মত, যেগুলির বেশির ভাগই বিভ্রান্তিকর। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় লকডাউনের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কোভিড-১৯ আসলে কোনও ভাইরাসই নয়, পুরোটাই চিকিৎসাব্যবস্থা সংক্রান্ত ব্যবসার কারণে মিথ্যে প্রচার, এমন ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে দ্রুত। সেই সূত্রেই ল্যাবরেটরিজাত জটিল বিজ্ঞানকে সহজ করে পরিবেশন করা ছাড়াও বিজ্ঞান নিয়ে ভুল ধারণা ও জনমানসে তার বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলে ভাল হয়।
অরূপ সরকার
অশোকনগর
শেষে পাপড়?
বাজারে এল করোনার মহৌষধ ‘ভাভী জী পাপড়’। এই পাপড় খেলে নাকি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা করোনাকে প্রতিরোধ করবে, এমনটাই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল!
ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ শফিকুর রহমান প্রচার করেছেন— “কোভিড কোনও রোগই নয়, আমাদের পাপের জন্য আল্লার দেওয়া শাস্তি এবং সর্বশক্তিমানের কাছে ক্ষমা চাওয়াই নিষ্কৃতির একমাত্র রাস্তা।” কিছু দিন আগে এক বিশেষ সংগঠনের সদস্যরা গোমূত্রকে করোনার মহৌষধ বলে দাবি করেছিলেন। এবং তাঁদের প্রচারে প্রভাবিত হয়ে বহু মানুষ দূষিত গোমূত্র সেবন করে অসুস্থ হয়ে যান।
এমন চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করছেন নির্বাচিত সাংসদরা! এ তো এক ধরনের জালিয়াতি, যা দেশের জনস্বাস্থ্যে বিরাট ক্ষতি করতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের উচিত এঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা করা, যাতে ভবিষ্যতে কারও এমন পরামর্শ দেওয়ার সাহস না হয়।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
চাই গবেষণা
সুমিত মিত্রের সুচিন্তিত নিবন্ধের (‘আত্মনির্ভর নয়, চিননির্ভর’, ২১-৭) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। যে কথাটা অনুচ্চারিত থেকে গেল, সেটা হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ভিন্ন অন্য কোনও সংক্ষিপ্ত পথ নেই। ভারতের নির্ভরতা কেবল চিনের ওপর নয়, বহু দেশের ওপর।
কয়েক বছর আগের পরিসংখ্যান বলছে, উৎপাদন ও মূল্যের মাপকাঠিতে ভারতীয় ওষুধ শিল্পের স্থান যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্দশ। কিন্তু এত বড় শিল্পের মধ্যে মাত্র গোটা ছয়েক সংস্থা কিছুটা গবেষণার কাজ করে। বাকি সবাই ‘জেনেরিক’ ওষুধ বেচে। অর্থাৎ যে সব ওষুধের মেধাস্বত্বের মেয়াদ শেষ, তার ওপর একটু কারিকুরি করে তা বিক্রি করে। আর এক ধনী শিল্প-ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। এখানেও গবেষণার ব্যয় রোজগারের তুলনায় যৎকিঞ্চিৎ।
বিজ্ঞান গবেষণায় জিডিপি-র মাত্র ০.৮ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে বহু বছর ধরে। আর ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ওটাকে ২ শতাংশ করা হবে। ভারতীয় শিল্পপতিদেরও বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থব্যয়ে অনীহা রীতিমতো পীড়াদায়ক। উন্নত দেশে যেখানে বেসরকারি শিল্প ও সরকারের খরচের অনুপাত ৮০:২০, আমাদের দেশে সেই অনুপাত প্রায় উল্টো। গবেষণায় ব্যয় করার জন্য সরকারের তরফে শিল্পপতিদের অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কাজ হয়নি।
কোনও দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাফল্যের কতগুলো মাপকাঠি মোটামুটি মেনে নেওয়া হয়। স্বীকৃত এই সব মাপকাঠির একটাতেও ভারতের স্থান আশাব্যঞ্জক নয়। উদ্ভাবনা সূচক এমনই এক মাপকাঠি। ২০১০-২০ সালকে ভারত সরকার ‘উদ্ভাবনার দশক’ বলে ঘোষণা করেছিল। সেই দশকে ১২৯টা দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ২০১৯-এ ৫২-তম। ভারতের অনেক আগে চিন তো বটেই, রয়েছে তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, গ্রিসের মতো দেশও। লক্ষণীয়, উদ্ভাবনের তালিকার ওপর দিকে যে সব দেশের স্থান, তারা প্রত্যেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় অগ্রণী বলেই পরিচিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত না হলে উদ্ভাবনা কেবলমাত্র জোড়াতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা।
অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে তৈরি হল ‘নলেজ কমিশন’। কয়েক বছর কাজ করে বিরাট মোটা রিপোর্ট প্রকাশ পেল। এই রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ ছিল। তার পর কী হল, কেউ মনেই রাখে না। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের স্লোগান— ‘২০২০-র মধ্যে ভারত এক উন্নত দেশে পরিবর্তিত হবে’— মাতামাতির পর আজ বিস্মৃত। এর মধ্যে নতুন সরকার নিয়ে এল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। তার সাফল্য নিয়েই যখন অনেক প্রশ্ন, তার মাঝে উপস্থিত হল ‘আত্মনির্ভরতা’। তাতে এক বারও উচ্চারিত হল না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার কথা। অর্থনীতিবিদদের কাছে অনুরোধ কেবলমাত্র জিডিপি-র মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিজ্ঞানের কথাও একটু বলুন।
সুব্রত ঘোষ
কলকাতা-৬৮
চার্চিলের অসুখ
পথিক গুহ (‘কবর খুঁড়ে ভাইরাস’, রবিবাসরীয়, ২৬-৭) লিখেছেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিক তখন আসেনি। ফলে রোগী মারা গেল অনেক। দেখা গেল মৃত্যুর আশু কারণ নিউমোনিয়া।’’ এ প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৪৪ সালে ধরা পড়ে উনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। সেই সময়ে একটি ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘মে অ্যান্ড বেকার’ প্রথম বাজারে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ট্রায়াল দেয়। প্রয়োগ করা হয় চার্চিলের উপর। তিনি সুস্থও হয়ে ওঠেন। পরবর্তী কালে ‘মে অ্যান্ড বেকার’-কে ব্রিটিশ সরকার সম্মানিত করে। (সূত্র, জার্নাল অব রয়্যাল কলেজ অব ফিজ়িশিয়ান, এডিনবার্গ)।
শোভনলাল বকসি
কলকাতা-৪৫
অকারণ আতঙ্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনও ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে মতামত দেওয়া অনুচিত। সাধারণ মানুষ এই সময় যে কোনও নির্দেশিকাকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, বিশেষত তা যদি আসে ‘হু’ বা আইসিএমআর-এর মতো সংস্থার কাছ থেকে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় করোনাভাইরাস, পোশাকে লেগে থাকে ভাইরাস— ইত্যাদি খবর প্রকাশিত হয়েছে। বাজারের থলি, সবজি থেকে ওষুধের শিশি— সব স্যানিটাইজ় করে ঘরে তোলা, কারণে-অকারণে দরজা, বেসিন, সুইচ ইত্যাদি স্যানিটাইজ় করা, খবরের কাগজ বাড়িতে না ঢোকানো— এ সবই নানা খবরে তৈরি ভাইরাস-ভীতি। এতে জীবনের জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি, আমরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করব ও অকারণ আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসব।
দীপঙ্কর সেনগুপ্ত
রাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।