সম্পাদক সমীপেষু: লাল বনাম গোলাপি

গোলাপি বলে স্পিনারদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

‘গোলাপি ভবিষ্যৎ’ (২৯-১১) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। লাল বলের বিকল্প গোলাপি বল হতে পারে না। চার বছরের গোলাপি ইতিহাসে এটা অনুধাবন করা গিয়েছে, ব্যাটসম্যান বা স্পিনারদের তুলনায়, পেস বোলারদের আধিপত্যটা এই বল-এ অনেক বেশি। লাল বল যেখানে ব্যাটসম্যান, পেস বোলার, স্পিনার— সকলের দক্ষতার প্রায় সমান পরীক্ষা নেয়, সেখানে গোলাপি বলে স্পিনারদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এমনিতেই টি-টোয়েন্টির দৌলতে টেস্ট ক্রিকেটের জৌলুস কমতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে ‘টি-টেন লিগ’ বা ‘দ্য হান্ড্রেড’ (১০০ বলের ফর্ম্যাট, ২০২০-তে শুরু হওয়ার কথা) যোগ হয়ে জৌলুস আরও কমবে মনে হয়। অতএব টেস্ট ক্রিকেটের পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে গোলাপি রাস্তায় না হেঁটে, আইসিসি তথা দেশীয় ক্রিকেট বোর্ডগুলোর উচিত এই সব ফর্ম্যাটের আগ্রাসনকে খর্ব করা।

Advertisement

তৌফিক আলম

বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

নতুন অভ্যাস

ধর্ষণের ক্ষেত্রে ছেলেদের মানসিকতার সমস্যা নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। সমস্যাটির ভিত এক গভীর অশিক্ষায়। যেখানে ভারতীয় শিশুদের ঘরেই ছেলেবেলা থেকে যৌনতার প্রতি একটা ভীষণ লুকোচুরি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তার পর কৈশোরের অনিবার্য কৌতূহলে বিকৃত ও ভ্রান্ত পথে যৌনতার সঙ্গে তারা পরিচিত হয়। হরমোনের এই স্বাভাবিক চাহিদা ও প্রাপ্তির অসঙ্গতিতে ধর্ষকের বীজটি সে দিনই বপন হয়, বাঁকা পথে যৌনতাকে অনুসন্ধানের অভীপ্সা মাথা চাড়া দেয় এবং সদ্য বুনিয়াদি স্তরে যৌন শিক্ষা (good touch, bad touch) চালুর ভাবনাচিন্তা করা কেন্দ্রীয় সরকারও অতীতের ভ্রান্ত শিক্ষানীতির দায় এড়াতে পারে না। অনেকেই বলছেন শাস্তির কথা, সোশ্যাল মিডিয়াও ছয়লাপ হয়েছে ফাঁসি, লিঙ্গচ্ছেদ, পুড়িয়ে মারা কিংবা নানা দেশের নানা উদ্ভাবনী ধর্ষকশাস্তির ফিরিস্তিতে। কিন্তু তেলঙ্গানার নারকীয় ঘটনার পরেই আবার আমরা দেখলাম সমবর্বরোচিত নারকীয়তা উত্তরপ্রদেশে। হ্যাঁ, সেই উত্তরপ্রদেশ, যেখানে ৯১.৬% ধর্ষণের ঘটনাই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।

মানা উচিত, ধর্ষকদের অভাবনীয় শাস্তি দেওয়া, আইন পাশ করে কঠোর ব্যবস্থা করা, কোনও কিছুতেই ভিতরের ধর্ষণপ্রবণতাকে চাপা দেওয়া যায় না। এর চাই অঙ্কুরে বিনাশ। যৌনতার সংজ্ঞা কী, সেখানে ভালবাসার ভূমিকা কী আর সেই পরিসরে বিকৃত কাম ও পাশবিকতার ভূমিকাই বা কী, নারীদেহের গঠনতন্ত্রই বা কী রকম, বুনিয়াদি স্তরে পাঠ্যক্রম গঠন করে সেই প্রয়োগটি প্রয়োজন। কেবল ধর্ষণই নয়, গার্হস্থ্য হিংসা, যৌন ঈর্ষা, গণপিটুনির মতো অনেক দুরূহ সামাজিক ব্যাধিরই সমাধানের চাবিকাঠি রয়েছে এই শিক্ষানীতির সংস্কারে, কারণ এই প্রতিটি সমস্যাই এক সুতোয় বাঁধা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, শিক্ষা এক দীর্ঘমেয়াদি বিষয় এবং ভোটব্যাঙ্কের ব্যস্তানুপাতিক বলে, যে কোনও সরকারই এই স্পর্শকাতর বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন।

মানুষ অভ্যাসের দাস। আজ সব মানুষই যদি নগ্ন হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটত, সেইটাই হত অভ্যাস। প্রতিটা মানুষই যদি মানুষের লিঙ্গ দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যেত, মুক্তমঞ্চে যৌনতার অভ্যাস যদি সর্বজনদৃষ্টিগ্রাহ্য হত, লালসা পরিতৃপ্তির জন্যে গোপনীয়তা, পাশবিক অত্যাচারের প্রয়োজনটাই থাকত কি? ইউরোপ আমেরিকায় মেয়েরা খোলামেলা পোশাকে হাঁটাচলা করে দেখে ভারতীয় শুচিবায়ুগ্রস্তরা নাক সিটকান, কিন্তু বুনিয়াদি স্তর থেকেই ওই সব দেশের শিশুদের এই শিক্ষাটুকু বুনে দেওয়া হয় যে, খোলামেলা পোশাক পরাটা অপরাধ নয়। ২০১০ সালের মার্চ মাসে সিডনি অপেরা হাউসের সামনে প্রায় ৫০০০ নরনারী নগ্ন জমায়েত ঘটিয়েছিলেন, নিছকই অভিজ্ঞতার জন্যে, ‘সিডনি গে অ্যান্ড লেসবিয়ান মার্ডি গ্রা’ ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে। না, রাষ্ট্র সেখানে প্রশ্ন তোলে না, যৌনতা সেখানে এতটাই অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত। আর্থ-সামাজিক নীতিতে বিধ্বস্ত আমাদের সমাজ এখনই হয়তো সে পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না, কিন্তু ভেবে দেখতে দোষ কী?

সায়ক সিংহ

কলকাতা-১১০

সংরক্ষণ

ভারতবর্ষের সংবিধানপ্রণেতা বি আর অম্বেডকর নিচু বর্গের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন শুধুমাত্র ১০ বছরের জন্য। আজ সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। অনেক দিন তো জাতপাতভিত্তিক সংরক্ষণ চালু রয়েছে, তাতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে, যারা বংশপরম্পরায় সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে চলেছে। এখন সংরক্ষণ প্রয়োজন লোকসংখ্যাভিত্তিক ও মেধাভিত্তিক। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস-এ ভর্তি লোকসংখ্যাভিত্তিক জেলাপিছু নির্ধারিত হত। যদি পশ্চিমবঙ্গে লোকসংখ্যা ১০ কোটি হয় ও এমবিবিএস-এ সিট ৪০০০ হয়, তখন লক্ষ পিছু সিট দাঁড়ায় ৪ জন। এর ভিত্তিতে প্রতি জেলায় এমবিবিএস-এ সিট নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ, সর্ববিধ নিয়োগ ও ভর্তিতে সারা দেশে রূপায়ণ হওয়া দরকার। যদি কোনও রাজ্যে ৫০০০০ শিক্ষক বা পুলিশ বা সেনার নিয়োগ হয়, তা লোকসংখ্যাভিত্তিক হিসেব করে জেলা স্তরে বা মহকুমা স্তরে নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। আইএএস, আইপিএস বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগেও লোকসংখ্যাভিত্তিক রাজ্যপিছু বা জেলাপিছু সিট নির্ধারিত হলে ভাল।

তপন কুমার কর্মকার

বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

মনের অসুখ

2 রত্নাবলী রায়ের ‘পুজোর থিম মানসিক রোগ!’ (১৮-১১) প্রবন্ধটি পড়ে বোঝা গেল, মনোরোগীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ খুব বদলায়নি। বেশির ভাগ মানুষ এখনও মানসিক অসুস্থকে দেখলে সমব্যথী হওয়া তো দূর, ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকে। আজও অনেকে মনে করেন, মানসিক হাসপাতালে যন্ত্রণাদায়ক বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নিরাময় করার চেষ্টা করা হয়। এই কারণে প্রচুর দরিদ্র বাবা-মা বা দাদা নিজের মানসিক বিকারগ্রস্ত সন্তান বা ভাই-বোনকে, ‘স্নেহবশত’ ও আর্থিক কারণে, মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে না গিয়ে, বাড়িরই একটা ঘরে বন্ধ করে, পায়ে শেকল পরিয়ে, দু’বেলার খোরাক দিয়ে, দায়মুক্ত হন। তা ছাড়া ‘মানসিক হাসপাতাল’ না বলে, তাকে ‘পাগলা গারদ’ বলে অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করে দিয়ে, এক ভয়োদ্রেককারী প্রতিষ্ঠানে বদলে দেওয়া হচ্ছে।

শ্রীজিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বালি, হাওড়া

জবাব নেই

সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন কারণে গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে শুরু করে বিধানসভার বিভিন্ন প্রতিনিধির দ্বারস্থ হতে হয়। বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক কোনও সমাধান পাওয়া তো দূরস্থান, কথার সামান্য উত্তর অবধি পাওয়া যায় না। এমনকি প্রতিনিধি মুখ তুলে তাকিয়ে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেন না। অবশ্য দেখবেন কী করে? তিনি তো তখন ঠিকাদার, প্রোমোটার, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত।

তবে কথার বা প্রশ্নের উত্তর অন্যরা দেন— জনপ্রতিনিধিকে ঘিরে থাকা কিছু ক্যাডার। তাঁদের বাঁকা বাঁকা জবাবের চোটে, ওই দরবারে হাজিরার সাধ পুনরায় জাগবে না।

আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, যিনি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন, তিনি হয়তো এর আগে কোনও সামাজিক কল্যাণকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেননি। প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে নির্বাচনের টিকিট জোগাড় করলেই, আর জিতে গেলেই কি হঠাৎ সামাজিক কাজ করার স্পৃহা জাগ্রত হবে? সব দলেরই এটা খেয়াল রাখা দরকার। কারণ যাঁরা নির্বাচিত হচ্ছেন, তাঁরা তো দশটা-পাঁচটার অফিস করতে আসছেন না। আসছেন সমাজের সেবা করতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement