লাদাখে চিনের সেনাবাহিনীর হাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। সেনাদের যখন-তখন মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়ার এ কোন ঘৃণ্য খেলা খেলছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী? না কি, আসন্ন বিহার ও বাংলার নির্বাচনে দেশপ্রেমের আবেগ দিয়ে জয়লাভ করার খেলা চলছে?
২০১৪ সালে নির্বাচনী জয়ের পর মোদীজি চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে ভারতে আমন্ত্রণ জানান! ২০১৮ সালে উহানের হ্রদের ধারে দু’জনে কূটনৈতিক আলোচনায় মাতেন। মাত্র আট মাস আগেও ঐতিহাসিক মামল্লপুরমে দুজনে নৌকাবিহারে ব্যস্ত ছিলেন! চেন্নাইয়ের স্কুলপড়ুয়ারা শি চিনফিং-এর মুখোশ পরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় (ছবিতে)। তিনি এখন হুমকি দিচ্ছেন!
ফেব্রুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আয়োজিত হল ‘নমস্তে ট্রাম্প’। সেই ট্রাম্প দেশে ফিরে হুমকি দিলেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না পাঠালে ফল ভাল হবে না! মোদীজি, এই কি আপনার শক্তিমান রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে লোকদেখানো বন্ধুত্বের খেলা? এক দিকে আপনার দলের লোক বলছেন চিনা জিনিস বর্জন করতে। অন্য দিকে, চিনা ব্যাঙ্ক-কে ভারতে শাখা খুলে ব্যবসা করার ছাড়পত্র দিচ্ছেন? কেন এই দ্বিচারিতা? ও দিকে নেপালও ভারতকে বিপদে ফেলছে! প্রতিবেশীরাই নাকি বিপদে এগিয়ে আসে। কিন্তু মোদীর বিদেশনীতি এমনই যে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো সব বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!
বিজন মজুমদার
ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
কেন এত মৃত্যু
১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষে কোনও গোলাগুলি চলেনি। শুধুমাত্র রড, পাথর ও হাতাহাতিতে এত প্রাণহানি কী ভাবে ঘটল— এই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে উঠছে।
মনে হয়, সংঘর্ষস্থলের ভৌগোলিক অবস্থানটি দেখলেই উত্তর পাওয়া যাবে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। স্থানটি ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উপর এবং আকসাই চিন থেকে খুব কাছে। যে শৈলশিরাগুলিতে হাতাহাতি হয়েছে, সেগুলি থেকে সৈন্যরা নীচে খরস্রোতা হিমশীতল জলের নদীতে পড়ে গেলে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তা ছাড়া, চিনা সৈন্যদল পাথর ছাড়াও লোহার রডের উপর ধারালো লোহার নখ লাগানো এক ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করে। আর ওই উপত্যকায় তুষারক্ষতে মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এ ছাড়া অত্যধিক উচ্চতাজনিত অসুস্থতা তো আছেই। হিমশীতল তাপমাত্রায় সাংঘাতিক ভাবে আহত সৈন্যরা সম্ভবত এই সব কারণেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।
সৌম্য বটব্যাল
দক্ষিণ বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
পোড়ালেই হবে?
ভারতবাসী এখন সব কিছুই জাতীয়তাবাদের আলোতে দেখে। চিন সীমান্তে ২০ জন সেনার মৃত্যুর পরেই আওয়াজ উঠেছে চিনা দ্রব্য বয়কটের। কিছু জায়গায় সে সব জিনিস পোড়ানোও হয়েছে। মনে পড়ে যায় ‘ঘরে-বাইরে’র সেই দৃশ্যের কথা, যেখানে সন্দীপের উস্কানি এবং বিমলার নীরব সমর্থন উপেক্ষা করে, নিখিলেশ বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর বিরোধিতা করেন তাঁর হাটের গরিব পসারিদের কথা ভেবে।
ইন্টারনেট জানাচ্ছে, চিনের মোট রফতানির মাত্র ৩% ভারতে হয়। অর্থাৎ, আমরা যদি আর একটাও চিনা পণ্য না কিনি, তা হলেও, তাদের বাণিজ্যের ৯৭% আগের মতোই থেকে যাবে। ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের একচেটিয়া আধিপত্যের কথা ছেড়েই দিলাম, করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধকের কাঁচামাল, পিপিই— সবের জন্যই বিশ্ববাসীকে তাকিয়ে থাকতে হয় ওই দেশটার দিকে। সুতরাং, ব্যবসার ওই ছোট্ট ভারতীয় ফাঁকটুকু ভরাতে তাদের বেশি দিন লাগবে না। ২০১৯ সালে, চিন থেকে ভারতে এসেছিল ৭৫ বিলিয়ন ডলারের দ্রব্য। সেই সময়ে, ভারত থেকে চিনে গিয়েছিল ১৭ বিলিয়ন ডলারের জিনিস। যৌথ বাণিজ্য বন্ধ হলে ওই সব দ্রব্যের বিকল্প, সম্ভবত অনেক বেশি দাম দিয়ে, অন্য দেশ থেকে কিনতে হবে। করোনা-বিপর্যস্ত এ দেশের রুগ্ন অর্থনীতির ক্ষেত্রে, সেটা হবে মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা!
ভয় আরও। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লোকেদের চিনাদের মতো দেখতে, অর্থাৎ তারা করোনা ছড়াতে পারে— শুধু এই অমূলক আশঙ্কাতেই আমরা হাসপাতালের নার্স-সমেত অনেককে এ রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করেছিলাম। সীমান্ত-সংঘর্ষ এই শহরের চিনাদের জন্য তেমন কোনও বিপদ ডেকে আনবে না তো?
দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০
নতিস্বীকার নয়
চিন পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করছে নিজের স্বার্থে। মাসুদ আজহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ব্যাপারে গত কয়েক বছরে চার বার বাধা দিয়েছে চিন। বেজিং বেশ কয়েক বার মাসুদ আজহারকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ হিসেবে ঘোষণার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে বাধা দিয়েছিল।
পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে চিন একাই যে আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তার মধ্যে লাদাখ, তিব্বত, নেপাল, ভুটান ও অরুণাচল প্রদেশের দখল প্রধান।
সম্প্রতি চিনের সঙ্গে কোভিড সংক্রান্ত ব্যাপারে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশের সম্পর্ক অবনতির দিকে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যও। এটা চিনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ভারতকে চাপে রাখতে চিন, পাকিস্তান এমনকি নেপালও বদ্ধপরিকর। গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবটা থেকেই যাবে। সামরিক দিক থেকে ভারত চিনের কাছাকাছিও আসে না, তবুও লড়াই চালাতেই হবে, ভিয়েতনাম যেমন বছরের পর বছর ধরে লড়াই চালিয়েছিল।
আমরা ১৯৬২-র যুদ্ধে প্রায় চুরাশি হাজার বর্গকিলোমিটার জমি চিনকে দিয়েছি, যা বমডিলা পতনের পর শেষ হয়। নেহরুর পঞ্চশীল নীতিই এর জন্য দায়ী ছিল। এর পর চৌ এনলাই একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন আর আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।
জানি না, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কী সিদ্ধান্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী তথা তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সম্ভবত সর্বাধিক চিন সফর করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি এখন বলেছেন, “ভারত শান্তি চায়। কিন্তু কেউ প্ররোচনা দিলে যে কোনও পরিস্থিতিতে তার উপযুক্ত জবাব দিতেও প্রস্তুত।”
এটা যেন কথার কথা না হয়। তা হলেই বুঝব তাঁর ছাতির মাপ। যুদ্ধ শুরু হওয়া অবশ্যই কাম্য নয়, কিন্তু নতিস্বীকারও নয়।
সুগত গুপ্ত
সল্টলেক, কলকাতা-৬৪
ক্ষতিকর পড়শি
বাড়ির পাশের প্রতিবেশী যদি সারা ক্ষণ আপনার ক্ষতির চিন্তা করে যায়, তা হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যেমন কষ্টকর হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনই ভারতবাসী হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা চিন আর পাকিস্তান নামে এমন দুটো দেশকে প্রতিবেশী হিসেবে পেয়েছি, যারা প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই শুধু আমাদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে গেল। কিন্তু ইতিহাস বলছে, অন্যের সর্বনাশ চিন্তা করে কোনও ব্যক্তি বা দেশ কোনও দিন লাভবান হয়নি।
অরূপরতন আইচ
কোন্নগর, হুগলি
নিহত নয়
এই সংবাদপত্রে গালওয়ান উপত্যকায় দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য যাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, চিনের বাহিনীর হামলায় যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের শহিদ না বলে নিহত বলা হয়েছে। এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা অনুচিত।
রাম কুমার শ
রিষড়া, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।