—ফাইল চিত্র।
‘কুণ্ডপুকুর পাশে নিয়ে সেজে উঠবে নয়া কালীঘাট’ (৮-৯) পড়ে প্রীত হলাম। কালীঘাট মন্দিরের এক জন নিয়মিত দর্শনার্থী হয়ে পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ইতিমধ্যেই মন্দির চত্বরের দোকানপাট রাস্তায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে রাস্তা কিঞ্চিত সঙ্কীর্ণ হয়েছে বটে, কিন্তু মন্দির চত্বর হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে; মন্দির চত্বরে অনেক হাত পা ছড়িয়ে ঘোরাফেরা করা যাচ্ছে।
জ্বালা অন্যত্র। পঞ্চাশ বছর আগে দিদিমার হাত ধরে কালীঘাট মন্দিরে যাওয়ার সময় থেকেই দেখেছি, পায়রাদের গম খাওয়ানোটা কিছু পুণ্যার্থীর অবশ্যকর্তব্যের মধ্যে পড়ে। নানাবিধ উৎপাতে সেই অভ্যাস বজায় রাখা দিন দিন দুরূহ হয়ে পড়ছে। কালীঘাট পুরসভা অফিস থেকে মন্দিরের দিকে যেতে ডানহাতে নির্মল হৃদয়। তাঁরা পায়রা আটকাতে ছাদে জাল লাগিয়েছেন, প্রায়ই দুটো একটা পায়রা জালে আটকাচ্ছে; দোকানদারদের চোখে পড়লে নামিয়ে আনছেন, নচেৎ...। এর মধ্যেই রাস্তার উপর পায়রারা আগে যেখানে খেত সেখানে দোকানঘর গজিয়ে উঠেছে। পায়রাদের জায়গা সীমিত, তার মধ্যেই দু’চাকা চার চাকা গাড়ির দৌরাত্ম্য— পায়রারা শান্তিতে যে খাবে এবং পুণ্যার্থী যে তাদের খাওয়া দেখে প্রীত হবেন, তার জো নেই।
মাননীয় মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ, মন্দিরপ্রাঙ্গণের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পায়রাদের জন্যও একটু জায়গা থাকুক; যেখানে তারা নিশ্চিন্তে খেতে পারবে। দুটো বড় গামলা সিমেন্ট করে পাকাপাকি বসিয়ে দিতে পারলে তো সোনায় সোহাগা— পুণ্যার্থীকুল আপনাকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবে; সঙ্গে সম্ভবত মা-ও।
চামেলি পাল
কলকাতা-১৪০
কারণগুলি
2 আইন আছে, পর্ষদ আছে, পুলিশ প্রশাসন আছে তবুও শব্দ দানবের গলায় লাগাম পরানো যাচ্ছে না। কেন? তার কারণগুলি খুঁজি।
১) এখানে পুলিশ জনগণের সমস্যা সুরাহা করার চাইতে নেতাদের সন্তুষ্ট করতে বেশি পছন্দ করে।
২) তারা জানে মাইক বন্ধ করা মনেই কোনও না কোনও নেতাকে অসন্তুষ্ট করা।
৩) যে ভাবে পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে তাতে শব্দদূষণ বন্ধ করতে পুলিশের আগ্রহ কমবে বই বাড়বে না।
৪) পুলিশ যতই আশ্বাস দিক আজ পর্যন্ত পুলিশ কোনও কেস দেয়নি কাউকে শব্দদূষণ করার জন্য।
৫) বলাগড় থানার ইনছুড়া-তে বিরাট মেলা বসে। প্রায় ৫০০ মাইক জায়গায় বাজে। ভিড় সামলাতে প্রচুর পুলিশ থাকে। কিন্তু শব্দদূষণ বন্ধ করতে কোনও পুলিশ দেখা যায় না।(বাস্তব অভিজ্ঞতা)
পুলিশ যদি সত্যিই শব্দদূষণ বন্ধ করতে চায়, তবে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দু’টি বার্তা দিক— শব্দদূষণকারীদের শাস্তির বার্তা ও জনগণকে পুলিশের উপর ভরসা রাখার বার্তা।
সদানন্দ মণ্ডল
মালঞ্চ, হুগলি
আহা, প্রেম-টুইট
পরিচিতি, সম্মান, যশ, অর্থ, খ্যাতি-এত কিছু প্রাপ্তির পরও খেদ থেকে যায় কি? অপ্রাপ্তির নয়, পরিচিতির সাধ পূরণের স্বীকৃতি-পর্ব সম্ভবত অধীর, অস্থির।
সেলেব্রিটিদের আকাঙ্ক্ষা-প্রকাশপিয়াসি মানসিকতার পরিমাপ বোধ হয় কোনও মানদণ্ডের নিরিখে পরিমেয় নয়। সে তিনি প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় বা ফিল্মস্টার যা-ই হোন না কেন; নিজের সুখ-বৈভব-আনন্দলগন দর্শানোর একটা চোরাস্রোত প্রবহমান থাকেই তাঁদের অন্তরের গভীরতম প্রদেশে, যাকে গোদা বাংলায় জাহির করা বলে। অবশ্যই যদি তিনি বা তাঁরা খ্যাতির শীর্ষদেশে অবস্থান করেন। সাধারণ মানুষ সেলেব্রিটিদের সম্পর্কে জ্ঞাত হতে আগ্রহী থাকেন। তাই চলচ্চিত্র-বিনোদন-সংবাদ বহনকারী পত্রপত্রিকার বিক্রিবাট্টা স্বাস্থ্যকর। তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন, প্রেম-অপ্রেম, সাংসারিক বিচ্ছেদ, কেচ্ছা কাহিনি, পরকীয়া— মুচমুচে ভাজাভুজির মতো হটকেক।
কিন্তু, দৈনিক সংবাদপত্র তো একটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দাবি করে। যদিও এখন রাজনীতি, নিত্য খুনজখম-ধর্ষণ-কাটমানি-দলত্যাগজনিত অশান্তি-উষ্ণায়ন-বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং ভারতের বেহাল অর্থনীতি ব্যতীত খবর কোথায়? স্থানীয় সংবাদ বলতে মেট্রোরেলজাত দুর্ঘটনা এবং আসন্ন পুজোর হাল হকিকত পরিবেশন-না, নতুনত্বের আস্বাদন অসম্ভব। সবই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
এ সবের মাঝেই তাঁদের আত্মপ্রকাশ বা প্রদত্ত পোজ়। ক্যাপশন— ফুরফুরে। স্ত্রী অনুষ্কার সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে অবসর বিনোদনের ছবি টুইট করলেন বিরাট। আহা! কী আনন্দ পেনু জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না বস্! হলেও হতে পারে বিকিনি পরিহিতা স্ত্রী এবং সুইমিং সুট পরিহিত তিনি স্বয়ং। আরও স্বল্পবাস প্রকাশেই বা কী ক্ষতি ছিল? কিন্তু, টুইট করা এই ছবি কি সংবাদপত্রের জন্য প্রদত্ত? খুব প্রয়োজন ছিল? ব্যক্তিগত সুন্দর মুহূর্ত, একান্ত ব্যক্তিগত দুর্লভ সঙ্গ, সবই কি শেয়ারযোগ্য? একদা বিকিনি পরিহিতা ‘এন ইভনিং ইন প্যারিস’-এর বিকিনি পরিহিতা নায়িকার ছবি ঝড় তুলেছিল। আরও পরে ‘মোহনার দিকে’ বাংলা ছবির নায়িকার ছবিও কলকাতার রাজপথ জুড়ে চমক সৃষ্টি করেছিল। শুদ্ধাচারীরা নাসিকা কুঞ্চন করেছিলেন। মধ্যবিত্ত মানসিকতায় আঘাত লাগে, আঁশটে গন্ধে রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া ছবি দেখতে যেমন চুপিসারে মাঝবয়সি মানুষ এক সময়ে ঢুকে পড়তেন নুন-শোয়ে, এখন আর অত রাখ ঢাক গুড় গুড় নিষ্প্রয়োজন। সব সাধ মিটিয়ে দিতে ইউ-টিউবই সক্ষম। তবু, খ্যাতিমানদের কত আত্মপ্রকাশের মহিমা! একে তো বোকা-বাক্স খুললেই অমুক-তমুক শক্তিশালী রড-বার দিয়ে বাড়ি তৈরি করার বিজ্ঞাপনী মহিমা প্রচার। কেন যেন মনে হয়, মন, তোমাদের মন নাই বালিকা-বালক? অবশ্য, তাঁদেরই বা দোষ দিই কী করে? বিজ্ঞাপন, অর্থ, প্রলোভন যে মুখিয়ে আছে! আরও চাই, আরও যে!
হ্যাঁ, তিনি ক্রিকেট-দুনিয়ায় বিরাট-যশস্বী। আজ বিশ্বব্যাপী ভারতের ক্রিকেট-দুনিয়া শাসনকারীদের তালিকায় তিনি সর্বাগ্রে নব্য-প্রজন্মের সর্বাধিনায়ক। প্রশংসিত, চূড়ান্ত-ফিট ক্রিকেট-নায়ক। প্রাণবন্ত, টগবগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের তিনি আন্দোলিত-আইডল।
তবু, কেন যেন মনে হয় এই সব আলফাল ছবি না টুইট করলেই বোধ হয় মঙ্গল। তাঁদের রাজকীয়-বিবাহ সংবাদ মিডিয়া বাহিত হওয়ার সুবাদে জনগণেশ হামলে, চেটেপুটে খেয়েছে। এখন তাঁরা বিনোদন-অবকাশে কোথায় ভ্রমণ করছেন, শপিং করছেন, সমুদ্র-স্নান বা জলকেলিরত, তার ছবিও অকাতরে বিলোচ্ছেন। না, পাপারাৎজ়িদের কম্মো নয় এ সব। তাঁদেরই বিলোনো। আহা! বেশ সুখপ্রদ। শুধু কারণ বা হেতু বোঝে না নির্বোধ জনগণ। সমালোচকরা বলবেন, তোমাদের খ্যাম্তা নেই, ফুত্তি করতে পারো না, তাই রাগে গরগর করে ফুঁসছ! তোমাদের মুরোদ তো বাপু মেরেকেটে দিঘা-দার্জিলিং। সেখানেও কত্তো রং-ঢং। সুবিশাল মধ্যপ্রদেশ, শর্টস পরিহিত বাবুদের ঢেউয়ের সঙ্গে দাপাদপি। বেমানান শরীর, তবু ছোটখাটো, তাপ্পি মারা জিনস পরিহিতা ললনাদের ঝাঁপাঝাঁপি। তখন মনে হয়, কোথায় যেন অন্তঃসলিলা ফল্গুর মতো কাজ করে নায়ক-নায়িকাদের অনুকরণের ছবি। নাই বা মানাল! ক্ষতি কী? ঘর হতে বাহির, দু’পা ফেললেই যে চক্ষুস্থির! চারিদিকে আনন্দ-অধীর! নেই বাড়ির বড়দের শাসানি-অনুযোগ। অতএব, চাট্টিখানি লুটোপুটি এবং সঙ্গে সঙ্গে পোস্টানোর সে কি হিড়িক! এবং তুড়ন্ত লাইক-লাইক-আর লাইক। যশ-খ্যাতিহীন তারা নিমিত্তমাত্র সাধারণ চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ী বা নিখাদ বেকার যুবক-যুবতী। অথচ, সবারই অন্তঃস্থলের অনুভব নিজেকে, নিজেদের জাহির করবার তাগিদ। এ ভাবেই সাধারণ থেকে অসাধারণদের জীবনেও সেলেব্রিটিদের প্রবল উপস্থিতি। তবে, তাদের ভুলে যাওয়া অনুচিত, কোথাও একটা থামতে হয়। একটা সীমারেখা দরকার। একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো সবই কি দ্রষ্টব্য? তা হলে, কেনই বা বাকি থাকে বাপু শয্যাদৃশ্য?
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী
কলকাতা-১২৫