—ফাইল চিত্র।
সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ধুর, কিচ্ছু হবে না’ (২৬-৪) নিবন্ধ পড়ে এই চিঠি। প্রথম যখন ‘স্টর্ম ফোরকাস্টিং’-এ আসি, তখন সিনিয়ররা বলতেন, এই পেনসিল ছেড়ে দিলে চার্টে যেখানে পড়বে, সেটাই ঝড়কেন্দ্র। কারণ ঘূর্ণিঝড় বাসা বাঁধছে বললেই জাহাজ উধাও। যার আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ আমাকে ঝড়কেন্দ্র ঠিক করতে পথ দেখাবে, সে-ই যদি নিজের স্থানে না থাকে, তা হলে কী করে কাজ হবে? কমপক্ষে তিনটি জাহাজের রিপোর্ট এলে কাজ সহজ হয়। কিন্তু পাওয়া যেত না। তার পর এল, ভাসমান বয়ার উপর যন্ত্রপাতি রেখে টেলিমেট্রি করে তথ্য পাওয়া। সে আবার চোরেরা মাছ ধরতে এসে তুলে নিয়ে যেত।
তার পর ১৯৬০ সালে এল, আমেরিকার পোলার অরবিটিং আবহ উপগ্রহ TIROS সিরিজ়। সমুদ্রের ভিতরে কোথায় বজ্র-মেঘের দল জমে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিতে পারে, সেই স্থানটা চিহ্নিত হল। দিনে দুটো করে পাস (pass) হত উপগ্রহের, বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগরের উপর দিয়ে। মুম্বই কেন্দ্রে একটা আমেরিকার যন্ত্র বসেছিল। ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের নিজেদের তৈরি APT বা Automatic Picture Transmission যন্ত্র প্রধান আবহাওয়া কেন্দ্রগুলোতে বসানো হল। আমেরিকার মতো না হলেও, তথ্য আহরণের একটা পথ করে দিল। কিছু দিনের মধ্যেই স্যর ভার্নন এফ ডি’ভোরাক, উপগ্রহের ছবিতে থাকা মেঘের বক্রতা ও অক্ষির আকার ইত্যাদি নিয়ে তার মধ্যে বাতাসের বেগের মান ও তা কোন দিকে সরবে তা বার করে ফেলেন। পরে তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি উন্নততর পূর্বাভাস দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এরই মধ্যে স্যর রিচার্ডসন নাসা থেকে ‘নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন’ নামে কম্পিউটার-ভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাস পদ্ধতি বার করলেন। যদিও প্রথম ফোরকাস্ট মেলেনি। তবুও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নততর মডেল বার হল কম্পিউটার-সমৃদ্ধ দেশে। এঁদের মধ্যে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। আমরা, মানে ভারতীয়রা, শুরু করি অনেক পরে, যখন আবহাওয়ার কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করতে শিখি।
আমেরিকার মতো রাশিয়ারও আবহ উপগ্রহ ছিল। নাম Meteor series। পরে NOAA নামে আমেরিকার আবহ উপগ্রহগুলোর নামকরণ হয়। তার পর ছিল ESA বা ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির উপগ্রহ। এদের কল্যাণে আমি আলিপুর আবহাওয়া অফিসে কাজ করার সময়, ‘লোকাল অসিলেটর’-এর ফ্রিকোয়েন্সি বদলে বদলে গোষ্ঠমামার মতো খাপ পেতে বসতাম। ধরতামও কোনও কোনও দিন। আমেরিকার উপগ্রহের পাস না থাকলে, রাশিয়ান বা ইউরোপিয়ান উপগ্রহের ছবি পাওয়ার চেষ্টা করতাম।
তার পর এক সময়ে ভারত মহাকাশ যুগে প্রবেশ করল। একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় তিনটি ভারতীয় উপগ্রহের নজরদারি চলতে লাগল। 93.5 E, 84.0 E, আর 73.0 E উপগ্রহের ছবিগুলো খুব কাজ দিত। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নিউমেরিক্যাল আবহবিদরাও দক্ষ হয়ে উঠেছেন।
এ ছাড়াও, ভারতের দীর্ঘ উপকূল জুড়ে আবহাওয়া রেডারের ঘন বুনটের মাধ্যমে, উপকূলীয় অঞ্চলের ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে আবহাওয়ার তথা ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য আহরণের ক্ষমতা, আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে ত্রুটিহীন করতে সাহায্য করেছে। উপগ্রহ-ভিত্তিক আবহাওয়া তথ্য আহরণ (Data Collecting Platform) ও ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র (Disaster Warning System) সে ভাবে সফলতা না পেলেও, উন্নততর পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হতে পেরেছে।
১৯৬০ থেকে ২০২০— এই ৬০ বছরে ভারতের আবহাওয়া অফিস প্রবল উন্নতি করেছে, একে একটা বিরাট লাফ হিসাবে ধরা যায়।
তপন কুমার বসু
অবসরপ্রাপ্ত আবহাওয়া বিজ্ঞানী
এই দেশে
অনিতা অগ্নিহোত্রী ‘চাই কেন্দ্রের পর্যাপ্ত সহায়তা’ (২৩-৫) প্রবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পে কি এখনও অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ ঘর পাননি?’’— এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর লেখাতেই আছে, পাননি। কিন্তু আরও বড় কথা হল, এ দেশে, যদি বা ঘর দেওয়া হয়, যে মানুষের ঘর পাওয়ার কথা সে ঘর পায় না, পায় ক্ষমতাসীন কিছু মানুষ! এবং একই লোক হয়তো ঘর পায় এক বার নয়, দু’বার, তিন বার! তাই তথ্যে বা হিসেবের খাতায় ঘর হয়, কিন্তু ঘরহীন মানুষ ঘরহীন-ই থাকে!
আরও প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্দশা সম্পর্কে সর্বভারতীয় নিউজ় চ্যানেলের নীরবতা নিয়ে। গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশ জুড়ে প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়, তাতে অনেক মানুষের ক্ষতি হয়েছে, কোনও সর্বভারতীয় নিউজ় চ্যানেল দেখায়নি। এমনকি কলকাতার কোনও নিউজ় চ্যানেলও পাত্তা দেয়নি! রাজ্যের ‘করোনা’ পরিস্থিতি নিয়েও কলকাতা এবং তার আশপাশের কয়েকটি জেলাকে কেন্দ্র করে যত আয়োজন-প্রচার, বাকি জেলাদের ঘিরে তা নেই।
বিপ্লব রায়
কলকাতা-৬
শব্দগুচ্ছ
‘বাংলা অভিধানে’ (১৭-৫) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে বলি, এই অতিমারি সংক্রান্ত আরও দুটি শব্দগুচ্ছ: ‘ফ্ল্যাটেনিং দ্য কার্ভ’ এবং ‘নিউ নর্মাল’ও বহুল প্রচার পেয়েছে।
সুবীর সেন
দিল্লি
ভাল আছি, মা
‘‘কেমন আছিস খোকা?’’ জননীর এমন প্রশ্নের জবাবে নেহাত বলতে হয়, আমি ভাল আছি। সত্যের সঙ্গে খানিকটা মিথ্যে মিশিয়ে দিয়ে মা’কে সান্ত্বনা দিলাম। প্রবাস জীবনে হোম কোয়রান্টিনে আছি দু’মাস হতে চলল। চার পাশে করোনার ছড়াছড়ি। পরিচিত এক প্রবাসী ছোটভাই ২৪ দিন আইসোলেশনে থাকার পর দেখা গিয়েছে, সে করোনা পজ়িটিভ। ডরমিটরিতে মহিন নামের এক ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুব ওঠাবসা ছিল। দু’জনে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতাম। এক দিন শুনলাম সেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত। আমি যে ব্লকে থাকি, তার পাশের ব্লকে এক দিনে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। দু’দিন পরে ওই একই ব্লকে আরও ১০ জন আক্রান্ত হয়। দিন যাচ্ছে আর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কী হবে বুঝতে পারছি না।
শুনেছি বাবা মারাত্মক অসুস্থ। স্ট্রোক হয়েছে। একটা পা নষ্ট হওয়ার পথে। লকডাউনে কোথাও ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। বহু দৌড়াদৌড়ি করে শেষে এলাকার পল্লি-চিকিৎসকের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট চলছে।
মনে পড়ে, বাবা আমার স্কুল জীবনে, স্কুলের পাশের দোকানটা বরাদ্দ করে দিতেন, টিফিনের সময়ে যা ইচ্ছে তা-ই খাওয়ার জন্য। আমার বাবা সাধারণ কৃষক হয়েও আমাদের কোনও কিছুর অভাব রাখেননি।
প্রবাস জীবনে আমরা আজ বড় অসহায়। গত ৩৭ দিন যাবৎ একই ঘরে আমরা ১২ জন এক সঙ্গে আছি। সরকার খাবার পাঠায়। মনে হয়, যদি বেঁচে থাকি, দেশে ফিরতে পারি, বাবাকে দেখতে পাব তো!
ক’দিন আগে পাশের ঘরে এক জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হল। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হল। এমন অবস্থাতেও মা’কে বলতে হয়, ‘‘আমি ভাল আছি মা। আমার এখানে করোনাভাইরাসের তেমন প্রভাব নেই।’’
এম হৃদয়
ক্রাঞ্জি, সিঙ্গাপুর
মনে থাকবে
করোনা আতঙ্কের এই আবহের মধ্যে দুটি ঘটনা মনে রেখাপাত করল।
১) সাইকেলে অসুস্থ বাবাকে চাপিয়ে জ্যোতি কুমারীর ১২০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা।
২) অভিনেতা সোনু সুদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় বাসের মাধ্যমে তাঁদের আপনজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
সৌগত কাঞ্জিলাল
রামপুর, বাঁকুড়া