‘‘ভুবন’ ভোলা সহজ নয়’’ (২৬-৬) নিবন্ধের তৃতীয় বাক্যেই লেখক দেবাশিস ভট্টাচার্য ভুবনের নামের আগে ‘বখাটে’ বিশেষণটি ব্যবহার করেছেন। আজকের দিনে সাধারণ মানুষ কি ভুবনবাবুদের সম্পর্কে এই বিশেষণটি সর্বসমক্ষে ব্যবহার করার হিম্মত রাখে?
ভুবনবাবুদের নামে পুলিশে অভিযোগ জানানো বা আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য কার আছে? ভুবনবাবুদের গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কি পুলিশেরও আছে? আজ আর ভুবনবাবুদের আইন আদালতে ভয়ডর নেই। থানা বা আদালতে হাঙ্গামা করে সব ভন্ডুল করে
দেওয়াও আজকাল তাদের কাছে জলভাত। তাই ভুবনবাবুদের মাসিদের আজ আর সে দুর্দিন নেই যে ফাঁসির সাজা পাওয়া বোনপোর সঙ্গে দেখা করতে হবে। তাঁদের কানকাটা হওয়ার ঝুঁকিও নেই।
আর মাসি যদি বিপদ বুঝে নিজের কাঁধ থেকে দায় ঝেড়ে ফেলে ভুবনবাবুদের ওপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেন, তবে ভুবনবাবুদের সামনেও রাস্তা খোলা। মুহূর্তে দলবদল। তাই বিদ্যাসাগর মশাইয়ের বর্ণপরিচয়ের গল্পটির নীতি-উপদেশ আজ আর কাজে দেবে বলে মনে হয় না। গল্পটি নতুন করে লেখার দিন এসেছে।
সত্যরঞ্জন দাস
ইমেল মারফত
মাসির দায়
দেবাশিস ভট্টাচার্যের নিবন্ধের প্রায় নব্বই ভাগ জুড়ে ‘ভুবন’দের দুষ্কর্মের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যে মাসির জন্য ভুবন ফাঁসিতে ঝুলতে বসেছে, তাঁকে চিহ্নিত করার বিষয়টি খুব কৌশলে লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। ভুলে যাওয়া ঠিক নয় যে, তিনিই তাঁর ছবি দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছিলেন। বলেছিলেন, সব জায়গায় আমিই প্রার্থী— আমাকে সমর্থন করুন। ফলে কোনও জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব থাকছে না জনগণের প্রতি।
তাঁরা জানেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুছিয়ে নিতে হবে।
এই সংস্কৃতি বামফ্রন্ট আমলেও ছিল। কিন্তু একটা বাধ্যবাধকতার মধ্যে ছিল। এখন সব উন্মুক্ত। কোনও লজ্জা, মানবিকতা, সম্মানবোধ— এ সব কিছু আজকের ভুবনদের নেই। বাড়ি নির্মাণ, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্র তো বটেই, কলেজে ভর্তি অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণের জন্যও ‘তোলা’ দিতে হয়। এ লজ্জার দায় মাসিকে অবশ্যই নিতে হবে।
ছন্দা দাস সরকার
কলকাতা-১০৩
মিডিয়ামাসি
‘ভুবন’রা সাহস দেখালে প্রথমেই কিন্তু ‘মিডিয়া’র কান কামড়াবে। কারণ এই মিডিয়া সবাইকেই ভুল বুঝিয়েছে, ভুবনদেরও। প্রকৃত সমালোচনা করার ক্ষমতা মিডিয়ার ছিল না। ভয়ের চোটে এবং আখের গোছানোর জন্য, মিডিয়া আসল কথা বলতে পারেনি। প্রতিনিয়ত ‘মাসি’র পাশে তাঁর সফরসঙ্গী হয়ে গান গেয়ে মিডিয়া ‘জো হুজুর’-এর দলে ভিড়েছিল। এখন যেই ৪২-এ ১৮ হয়েছে, ‘তাঁর’ পায়ের তলার মাটি আলগা হয়েছে, অমনি মিডিয়াও ডিগবাজি খাচ্ছে। তাই ‘ভুবন’দের উচিত, মিডিয়ামাসিরও এক কান কামড়ানো।
দেবাশীষ দত্ত
কলকাতা-৬৩
স্বাধীনতা দিন
ছাত্রী কৃত্তিকা পালের অনভিপ্রেত মৃত্যু নিয়ে এই চিঠি। মনের যত্নের ব্যাপারে জানাই, আমি এই জগতের মানুষ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আক্রান্ত ব্যক্তি ও অভিভাবক কেউই এ ব্যাপারে সচেতন নন। তাঁরা ভাবেন, এটা খুব সাধারণ ব্যাপার, আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা অসম্ভব, সকল মানুষের কিছু সময় অন্তর বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত। আক্রান্তের পরিবার বুঝতে পারে না, ঘরের কোণ যেমন পরিষ্কার করতে হয়, তেমনই মনের কোণটাও নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরাও ‘কাউন্সেলিং’ ব্যাপারটা এড়িয়ে যান। যে হেতু পারিবারিক তথ্য এখানে প্রকাশ পায়, তাই তাঁরা এ বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। মনোবিদ ওষুধ দেন না, সঙ্গে সঙ্গে এই চিকিৎসার ফলাফল ধার্য করা যায় না, এটি দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি— এই সব কারণে আক্রান্তের পরিবার চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে না।
বুঝতে হবে, প্রাচুর্য জীবনের সব নয়। প্রাচুর্যে থাকলে মনের খোরাক মেটে না। তার চাহিদা অন্য পথে হাঁটে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিক্ষণের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে। অভিভাবকরা সর্বদাই যে সন্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং তাকে কম সময় দেন, তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত নজরদারিও কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ সকল ব্যক্তির মানসিক চাহিদা স্বতন্ত্র। ‘অনাদর’ও খুব বড় স্বাধীনতা। সকলেরই এই মানসিক স্বাধীনতাটুকু দরকার, আপন মনের মাধুরী মিশায়ে বেড়ে ওঠার জন্য।
পলি সরকার (ভট্টাচার্য)
হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
তাঁরা নিজেরা?
যে মা-বাবারা সন্তানের কাছে আকাশছোঁয়া ফল আশা করেন, তাঁরা কি নিজেদের শিক্ষাজীবনে সেরা ফল করেছেন? তাঁরা কি ভেবে দেখবেন, কত নম্বর পেয়ে তাঁরা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন?
সঞ্জীব বাগচি
ইমেল মারফত
একটি ঘটনা
আমি একটি অতি গরিব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিছু দিন আগে, নবাঙ্কুর শ্রেণিতে (৩+) একটি ছাত্র প্রথম পিরিয়ড থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে। ক্লাস টিচার কিছুতেই থামাতে পারেননি। অথচ ছাত্রটি অত্যন্ত চঞ্চল এবং হাসিখুশি। তৃতীয় পিরিয়ডের শুরুতে ছাত্রটিকে আমার কাছে আনা হল। আমি কাজ করছি আর ও কাঁদছে। কিছু ক্ষণ পর আমার কাজ বন্ধ রেখে ওর পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। ওর পিঠে হাত রেখে বললাম, তুমি দু’মিনিট কান্না থামাও, তোমার সঙ্গে একটা আলোচনা করব এবং সিদ্ধান্ত নেব। তার পর তুমি আবার কেঁদো। মন্ত্রের মতো কাজ হল। ও চুপ করল। বলল, ‘‘বলো কী বলছ।’’ বললাম, তুমি কাঁদছ কেন? ও বলল, ‘‘আমি বাড়িতে খুব দুষ্টুমি করছিলাম, আসার সময় মা বলল, স্কুলে যা, এসে দেখবি আমি মরে গিয়েছি।’’ বলেই জোরে জোরে কাঁদতে থাকল। আমি বললাম, এই, তোমাকে আমি কী বললাম? আলোচনা করব, সিদ্ধান্ত নেব, তার পর তুমি কাঁদবে। সিদ্ধান্তটা নিই, সেটা তুমি শোনো। আবার চুপ করল। ওর মাকে ফোন করে আধ ঘণ্টার মধ্যে আমার অফিসে আসতে বললাম।
আবার কাজে মগ্ন হলাম। কিছু ক্ষণ পর দেখি, আর ও কাঁদছে না। ঘরের বিভিন্ন জিনিস তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এমন সময় ওর মায়ের প্রবেশ। বললাম, ছেলেকে কী বলেছেন? বললেন, ‘‘কই, কিছু তো বলিনি।’’ তখন কথাটা বললাম। মা বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ইয়ার্কি মেরে বলেছি।’’ বললাম, জানেন, এই কথাটার জন্য ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উনি বললেন, ‘‘আর বলব না।’’ বললাম, আমাকে বলতে হবে না। ওকে কোলে করে বাইরে নিয়ে গিয়ে বলুন, বোঝান। চুপ করলে আমার কাছে আসবেন। কোলে নিতেই বাচ্চাটি দু’হাত দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করল। আমি আবার কাজে মগ্ন হলাম। মিনিট দশেক পরে ওরা আমার ঘরে ঢুকল। এখন আর বাচ্চাটি কাঁদছে না, কিন্তু মায়ের ঘাড় থেকে মুখ তুলছেও না। আন্টিকে ডেকে বললাম, ওর বাক্স আর জলের বোতল দিয়ে দিন, ওর আজকে ছুটি।
রামমোহন চক্রবর্তী
গৌতম শিশু মন্দির, নবদ্বীপ, নদিয়া
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।