সম্পাদক সমীপেষু: আমরা বিদ্যুৎকর্মী

আমরা যাঁরা বিদ্যুৎকর্মী, আমাদের এই ঘোর বিপদের দিনে প্রাণ বাজি রেখে ছুটতে হচ্ছে কেবল নিজের কর্তব্যবোধের টানে, দায়িত্ববোধের ডাকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৩:০২
Share:

মহামারির মোকাবিলায় সবাই স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, পুরকর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন, সাধুবাদ জানাচ্ছেন। অকাট্য সত্য যে ওঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের প্রতি পদে পদে উপকৃত করে চলেছে। আচ্ছা, বলুন তো, যে বিদ্যুৎকর্মীরা রয়েছেন— তাঁরা কি আপনাদের এই আশীর্বাদ ও কৃতজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও পেতে পারেন না?

Advertisement

টোটাল লকডাউন খুবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল। আমরা যাঁরা বিদ্যুৎকর্মী, আমাদের এই ঘোর বিপদের দিনে প্রাণ বাজি রেখে ছুটতে হচ্ছে কেবল নিজের কর্তব্যবোধের টানে, দায়িত্ববোধের ডাকে। ঝড়-জল-বৃষ্টি, মহামারি, সামাজিক অনুষ্ঠান, সুনামি কিংবা বিশ্বযুদ্ধ— পৃথিবী তোলপাড় হয়ে গেলেও আমাদের কাজে যেতে হবেই। আপনার প্রিয় সিরিয়ালের এপিসোড থেকে শুরু করে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডায়ালিসিস নেওয়া রোগীর প্রাণটাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জোগানের ভরসায় চলতে থাকে। কোনও দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় অংশ ‘রেডার ওয়াল’ বিপর্যস্ত হলে যে কি অকল্পনীয় বিপদ, সেটা না-হয় একটু গুগল করে নেবেন। ওহো, সেটা করতেও তো বিদ্যুৎ লাগে!

লকডাউনের জরুরি অবস্থাতেও আমাদের কাছে সার্কুলার এসেছে, যে ভাবে সম্ভব ডিউটি করে যেতে হবে, রাস্তায় গাড়িঘোড়া কিচ্ছুটি নেই, ট্রেন বাস সব বন্ধ, তাও যেতে হবে। আমাদের অনেক সহকর্মীই দূরে দূরে পোস্টেড, যাঁরা আগেভাগে বাজারহাট করে রাখার সুযোগটুকুও পাবেন না। হয়তো আটকেও পড়তে পারেন অফিসে।

Advertisement

আশা রাখছি অদূর ভবিষ্যতে আমরা এ সব কাটিয়ে উঠব, তবে একটা চাপা কষ্ট মনের মধ্যে থেকে যাবে যে, কেউ আমাদের এই পরিশ্রমের জন্য হাততালি দেবেন না। না কোনও মিডিয়া, না সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, না আপনারা। কেউ দেখবেন না, আমাদের সন্তানেরাও পুজো-পার্বণের দিনে নতুন জামাকাপড় পরে অপেক্ষা করে থাকে কখন বাড়ি ফিরব, কখন ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাব, হয়তো কোনও বছর সেটা সম্ভবও হয়ে ওঠে না।

আমাদের বিদ্যুৎকর্মীদের জীবন আর মৃত্যুর মধ্যেকার রসায়নটা সার্কাসের দড়ির ওপর ব্যালান্সের খেলা দেখানোর মতো। স্মার্টফোনের যুগে অবশ্য দেখেও থাকতে পারেন, কোনও ভাইরাল ভিডিয়োর দৌলতে: আপনাদের সেবা করতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় জ্যান্ত পুড়ছি বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিষ্প্রাণ অবস্থায় তড়িৎবাহী তারের সঙ্গে ঝুলে আছি।

সবচেয়ে অবাক তখন হই, যখন নিজেদের পারিবারিক জীবন সামাজিক জীবনটুকু অবধি অনেকাংশে স্যাক্রিফাইস করেও, কারও কারও কাছে শুনতে হয়, ‘‘এদের আবার রিস্ক অ্যালাওয়্যান্স দেওয়ার কী আছে, এরা সব বাবু, পায়ের উপর পা তুলে থাকে, আসে যায় মাইনে পায়।’’ যদিও যাদের থেকে এই মন্তব্যগুলো উড়ে আসে তাদের কাজের ঝুঁকি বলতে, কেবল মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা ছিঁড়ে পড়ার ভয়টুকুই।

শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়,বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

চিন বিরোধিতা

করোনাভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হওয়ার পরেই কলকাতার চিনা নাগরিকদের সামাজিক বহিষ্কার শুরু হয়েছিল। এখন শহরের রাস্তায় তা হেনস্থার রূপ নিচ্ছে। শহরের এক অংশের মানুষের এই ধরনের আচরণের শিকার হচ্ছেন চেহারার সাদৃশ্য থাকা উত্তর-পূর্বের নাগরিকেরাও। শহরের সাধারণ মানুষ মানবিক সত্তার পরিচয় দিয়ে এই সব ঘটনার নিন্দা করছেন। কিন্তু এই ধরনের জাতি/বর্ণ বিদ্বেষ ভিত্তিক ঘটনাগুলোর পিছনে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলি আছে, তার ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করছি কই?

একটু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, কলকাতায় এই ঘটনা নতুন নয়। ভারত-চিন যুদ্ধের সময় চিনা বংশোদ্ভূত ভারতীয় নাগরিকদের কী পরিমাণ অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে (শুধুমাত্র সন্দেহের বশে) সেটা আমাদের অজানা নয়।

তারাপদ রায়ের লেখায় পাই একটি ঘটনার কথা। ময়দানে দুই বন্ধু বসে কথা বলছে। এক জন আর এক জনকে বলছে, সে গত কাল বাড়ি ফেরার পথে দেখেছে, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে চিনা জুতোর দোকান লুট হচ্ছে। সেও ভিড়ের মধ্যে ঢুকে এক জোড়া জুতো হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখে যে দু’পাটি দুই রঙের। তাই মন খুব খারাপ। এটাও সেই যুদ্ধের বাজারের গল্প। যা খানিকটা হলেও, সেই সময়ে সাধারণ বাঙালির ভূমিকা সম্পর্কে আন্দাজ দেয়।

ফেসবুক জুড়ে সেই সব ভিডিয়ো, যেখানে চিনা ও ‘নর্থ-ইস্ট’-এর মানুষেরা বিশ্রী ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। দেওয়ালির সময় চিনা আতশবাজি আর আলোকসজ্জা বর্জন করার পোস্টে ছয়লাপ হয়ে যায় যখন সমাজমাধ্যমের দেওয়াল, তখনও কি আমরা দুধ আর জল আলাদা করি? (এটা আলাদা প্রসঙ্গ যে সেই পোস্ট করা হয়েছে কোনও ‘মেড ইন চায়না’ ফোন থেকেই)! চিনের বিরুদ্ধে কোনও গণ-িহস্টিরিয়া তৈরির সময়, আলাদা করে কোথাও বলা হয় না যে ব্ল্যাকবার্ন লেনের এই মানুষগুলো আমাদের সহ-নাগরিক।

অমিতাভ পুরকায়স্থ , কলকাতা-১২৯

ই-শিক্ষা

এই মুহূর্তে ‘কোভিড-১৯’ আতঙ্কে রেখেছে বিশ্বের মানুষকে। বিশ্ব জুড়ে যেন জারি হয়েছে কার্ফু। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির মতো এ রাজ্যেও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন তাদের সাধ্যমতো শিক্ষাদানের ব্যবস্থাটা অনলাইন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘পাঠ চলবে অনলাইনে’ (১৮-৩) শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, সরকারি স্কুলগুলি তাদের ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ‘রিপোর্ট কার্ড’ ও ‘স্টাডি মেটিরিয়াল’ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষিকারা তাঁদের লেকচার ভিডিয়ো করে আপলোড করছেন, পড়ুয়াদের যদি কোথাও খটকা লাগে, সেটা ‘ভার্চুয়ালি’ অর্থাৎ বৈদ্যুতিন মাধ্যমেই দূর করা হবে। মৌলনা আজাদ কলেজে স্কাইপের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আধুনিক কালে তথ্য পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘ভার্চুয়াল’ পদ্ধতিটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। সর্বপ্রথম নাসা ১৯৯৪ সালে ‘ই-লাইব্রেরি’ কথাটি ব্যবহার করে এবং তাদের নিজস্ব তথ্যগুলো স্ক্যান করে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ‘ভার্চুয়াল লাইব্রেরি’ কথাটিকে লাইব্রেরিয়ানরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করছেন, এমন একটি লাইব্রেরিকে বোঝাতে, যা স্থানীয় ভাবে প্রদান করা পয়েন্টারগুলির মাধ্যমে বৈদ্যুতিন বিন্যাসে পরিবেশিত তথ্যগুলিতে পাঠককে প্রবেশাধিকার দেয়। এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় লাইব্রেরি ব্যবহার করে।

এই ব্যবস্থার সুবিধে প্রচুর। কষ্ট করে ঘাড় গুঁজে ক্যাটালগ না খুঁজে, কম্পিউটারে বসে লাখ লাখ বই খুলে দেখার মজাই আলাদা। কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পাঠক তাঁর কাঙ্ক্ষিত বইটি ঘরে বসেই পড়তে পারেন। এ ছাড়া, সদস্য হওয়া, অ্যাকাউন্ট খোলা, ফাইন পরিশোধ বা অভিযোগ করার মতো কাজগুলিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজেই করা সম্ভব।

‘ভার্চুয়াল স্কুল’ও এ ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের উপকার করবে। মানুষের ঘরবন্দি থাকার এই অস্বাভাবিক পরিবেশে ভার্চুয়াল পরিবেশই যে চূড়ান্ত ‘বাস্তবতা’, তা সহজেই অনুমেয়। এ রাজ্যের সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলে চালু হয়েছে স্মার্ট ক্লাস। প্রতিটি ছাত্রের ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত সরকারি শিক্ষা পোর্টাল চালু হয়েছে। এই ভাবেই অদূর ভবিষ্যতে সরকারি স্কুলে গড়ে উঠবে ভার্চুয়াল পরিবেশ।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক ছাত্রের অর্থ, জ্ঞান ইত্যাদির প্রতিবন্ধকতা থাকবে। তবু, বিশ্ব করোনামুক্ত হলেও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ‘ভার্চুয়াল’ ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করার সুবিধা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে যাবে চিরন্তন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বাড়িতে বসে কাজ করতে পারবেন।

সৈকত রায়

সেকেন্দারপুর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement