ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট প্রচুর শেয়ার হচ্ছে। অসংখ্য লাইক, কমেন্ট পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, “পুলিশদের দিয়ে রোদে ডিউটিও করাবেন আবার তাদের রক্ত নিয়ে নেবেন? একটু স্কুল টিচারদের ডাকুন, সমাজসেবা করার সুযোগ দিন।’’ এই ধরনের বক্তব্য পেশ করা ও একে সমর্থন করা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। শিক্ষকরা কি সমাজসেবা করেন না? সমাজের যে কোনও স্তরে যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই কোনও না কোনও ভাবে সমাজসেবা করেন। বহু শিক্ষকই রক্তদান করে থাকেন। অনেক শিক্ষকই এই সঙ্কটের সময়ে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করেছেন। অনেক শিক্ষক গৃহহীন মানুষদের সাহায্য করছেন। পথের পশুদের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন। যাঁরা শিক্ষকদের নিন্দা করছেন, তাঁরা এই সময়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে কী ধরনের সমাজসেবা আশা করছেন? শিক্ষকরা কি পারবেন পুলিশের কাজ করতে, বা ডাক্তার, নার্সদের কাজ করতে? যাঁর যেটা কাজ, তিনি সেটাই করুন। অযথা শিক্ষকদের এ ভাবে টার্গেট করা কেন? আসলে কিছু লোকের বদভ্যাস হয়ে গিয়েছে, অযথা অন্যকে অপমান করা। যাঁরা এত দিন বিভিন্ন কারণে পুলিশ, ডাক্তার, নার্সদের আক্রমণ করতেন, নিগ্রহ করতেন, তাঁরাই আজ পুলিশ,ডাক্তারদের প্রশংসা করে, শিক্ষকদের টার্গেট করছেন। তাঁরা বরং এক বার নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই সঙ্কটে তিনি কী করছেন, ফেসবুকে বড় বড় কথা বলা ছাড়া।
অচিন্ত্য সরকার
দেবীনগর, উত্তর দিনাজপুর
এটাও দেখুন
‘ব্যাঙ্ককর্মীরা’ ও ‘না করলে চলে’ (৯-৪) চিঠি দুটিতে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা কত অবুঝ। নিশ্চয় অনেক গ্রাহক বিশ্রী আচরণ করেন, কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অধিকাংশ কর্মীর আচরণ কি খুব চমৎকার? আমার দুটো অভিজ্ঞতা উল্লেখ করছি।
১) আমি প্রত্যেক তিন-চার মাস অন্তর, অসুস্থ মা’কে (৭৯ বছর বয়স) নিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যাই, পেনশনের টাকা তুলতে। স্ট্রোকের ফলে আমার মা ভাল করে হাঁটতে এবং কথা বলতে পারেন না। এবং উইথড্রয়াল স্লিপে টিপসই দিয়েই টাকা তুলতে হয়, ভেরিফিকেশনটা হয় ব্যাঙ্কের আধিকারিকের সামনে। পাসবই (যাতে মা’র ছবি আছে) এবং টিপসই সহ আধিকারিকের কাছে উইথড্রয়াল স্লিপ জমা দেবার পর, আধিকারিক জিজ্ঞেস করলেন মা’কে: ‘‘এটা আপনার টিপসই?’’ মা অর্ধেক কথা বুঝতে পারেন না, আমার মুখের দিকে তাকালেন। আমি ঘাড় নাড়াতেই বললেন, হ্যাঁ। আধিকারিক: ‘‘কত টাকা তুলবেন?’’ মা বললেন, ‘‘জানি না, ছেলে জানে।’’ এ বার আমি বললাম, ‘‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা করা আছে, তা সত্ত্বেও প্রত্যেক বার একই কথা জিজ্ঞাসা করেন কেন? আপনি তো জানেন, মা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসা করছেন?’’ আধিকারিক: ‘‘না, আপনি জানেন না, কত রকমের ফ্রড হয়, এক জনের টাকা আর এক জন তুলে নিয়ে যায়। পরে ব্যাঙ্ক ঝামেলায় পড়ে।’’ আমি: ‘‘আপনার দায়িত্ব হল পাসবই, টিপসই, ছবি মিলিয়ে টাকা দিয়ে দেওয়া। প্রয়োজনে আপনি আমার প্রমাণপত্র দেখতে চাইতেই পারেন। যদি তাতেও সন্তুষ্ট না হন, পুলিশকে রিপোর্ট করবেন। প্র্যতেক বার একই কথা কেন জিজ্ঞাসা করেন?’’ বিরক্ত হয়ে আধিকারিক অ্যাকাউন্ট চেক করে, ভেরিফিকেশন করে উইথড্রয়াল স্লিপে সই করলেন।
ক্যাশিয়ারের কাউন্টারে গিয়ে আবার সেই সব প্রশ্নের মুখোমুখি, কে? কী? কেন? কোথায়? তাঁর কথায়, কুড়ি হাজার টাকার বেশি হলে আধিকারিকের সম্মতি লাগবে। আবার গেলাম সেই আধিকারিকের কাছে। থিকথিকে ভিড়। আধ ঘণ্টা দাঁড়াবার পর আবার অ্যাকাউন্ট চেক (আগে কী চেক করেছিলেন কে জানে?) করলেন এবং সই করলেন। তত ক্ষণে, আমার মা বেঞ্চিতে শুয়ে পড়েছেন, এবং আরও দশ জন লোক দাঁড়িয়ে পড়েছেন।
দ্বিতীয় ঘটনা। এটাও একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। কিছু টাকা ট্রান্সফার করব বলে নেফট ফরম ফিল আপ করে চেক সহ জমা দিতে গিয়ে, ডুপ্লিকেট ফর্মটায় একটা ‘রিসিভড’ ছাপ মেরে দিতে বলায়, উত্তর পেলাম, ও সব হবে না। মোবাইলে ট্রানজ়াকশন আইডি তো পেয়ে যাবেন। বললাম, আমার মোবাইলে ব্যাঙ্কের এসএমএস আসছে না, যদি দয়া করে একটা স্ট্যাম্প মেরে দেন, ইনকাম ট্যাক্সে লাগবে। রেগে চেঁচিয়ে বললেন, ম্যানেজারের কাছে যান। গেলাম, তিনি স্ট্যাম্প মেরে দিলেন। আবার সেই কর্মচারীকে বললাম, ট্রানজ়াকশন আইডি-র জন্য। বললেন বিকেলে আসুন। তিনি ব্যস্ত। বিকেলে গেলাম, তিনি নেই। পাশের লোককে অনুরোধ করলাম, বললেন, সেই স্টাফ ছাড়া কেউ দিতে পারবে না, ম্যানেজারের কাছে যান। যাইনি।
পরের দিন আবার গেলাম, কাগজ পড়ছিলেন, দেখে বিরক্ত হলেন। বললাম, কাল বিকেলে আপনার দেওয়া সময়ে এসেছিলাম, আপনি ছিলেন না। আগুনে ঘি পড়ল, “আপনারা সব ঘোড়ায় জিন লাগিয়ে আসেন, সেলুনে গেলে অবধি আধ ঘণ্টা বসতে হয়, আর ব্যাঙ্কে এলেই যত তাড়া!” কোনা থেকে এক কর্মচারী চড়া গলায় বললেন, ‘‘অত তাড়া নিয়ে ব্যাঙ্কে আসবেন না, অসুবিধা হলে অ্যাকাউন্ট তুলে নিয়ে প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চলে যান।’’
এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অধিকাংশ কর্মচারীই প্রতি পদে, উঠতে-বসতে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে নিয়ম বলে চালিয়ে দেন এবং ‘‘কাল আসবেন’’ বলে ভিড় হালকা করবার কৃতিত্ব নিয়ে থাকেন।
আশীষ দাস
কলকাতা-১৩২
ভুল দৃষ্টিভঙ্গি
‘না করলে চলে’ (৯-৪) শীর্ষক পত্র প্রসঙ্গে এই লেখা। পত্রলেখককে মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু লকডাউনই, কার্ফু নয়। সে কারণেই যাবতীয় জরুরি পরিষেবা অব্যাহত আর সে পরিষেবা গ্রহণের জন্য ঘরের বাইরে পা বাড়ানো অবশ্যই কোনও নৈতিক বা আইনগত অপরাধ নয়। ব্যাঙ্ক সেই জরুরি পরিষেবাই প্রদান করে থাকে, আর তাই তা খোলা আছে। মাসান্তে পেনশনের টাকা তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জীবনে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ আইন মেনেই তাঁরা তা তুলছেন। এর মধ্যে সমস্যা কোথায়? আর এই অসহায়দের হাত ধরে যে স্বজনরা তাঁদের পিতা/মাতা/আত্মীয়কে ব্যাঙ্কের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁদেরই কিনা ‘অপরাধী’র কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল! তা হলে কি ‘তোমার পেনশন তুমিই তুলে আনো’ বলে তাঁদের একা একা ছেড়ে দিলে ভাল হত? অশীতিপর পিতা/মাতাকে সরু গেট দিয়ে ‘টেনে হিঁচড়ে’ যদি ব্যাঙ্কে প্রবেশ করাতে হয় লাইফ সার্টিফিকেটে টিপসই দিয়ে তা জমা করার জন্য; সেই লজ্জা ও কেলেঙ্কারিটা ঠিক কার? এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা, ব্যাঙ্কের নিয়মকানুন (লাইফ সার্টিফিকেট ফর্মালিটি) ও তার সরু গেট! অনেক দুঃখেই স্বজনরা বাধ্য হন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পিতা-মাতাদের নিয়ে এই ভাবে ব্যাঙ্ক অভিযান করতে। বরং পত্রলেখকের উচিত রাষ্ট্রের কাছে দরবার করা, যাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পেনশন প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। বাড়িতে এসে লাইফ সার্টিফিকেটে সই করিয়ে নেওয়া হয়। তা ছাড়া, প্রত্যেক পরিবারের আর্থিক নাড়ি-নক্ষত্র না জেনে উনি কী করে লেখেন, ব্যাঙ্কের কাজকর্ম এই সময় না করলেও চলে?
কাজল চট্টোপাধ্যায়
সোদপুর
তাঁদের ভূমিকা
গ্ৰামাঞ্চলে ওষুধের দোকানে যে পাশ করা ডাক্তারবাবুরা বসতেন, তাঁরা প্রায় কেউই বসছেন না। এই অবস্থায় যাঁরা গ্ৰামের অসুস্থ মানুষদের নীরবে চিকিৎসা করে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করে চলেছেন, তাঁদের কথা যেন ভুলে না যাই। এঁরা গ্ৰামীণ চিকিৎসক, যাঁদের আমরা হাতুড়ে বলতে অভ্যস্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে এঁদের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের নিবিড় সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।
সন্দীপ সিংহ
হরিপাল, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।