Coronavirus

খাঁ খাঁ করছে গোটা শহর, এ যেন এক মৃত্যুপুরী

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যার সিংহভাগ এই নিউইয়র্কের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪৬
Share:

খাঁ খাঁ করছে শহর। —নিজস্ব চিত্র।

আমি গত ১১ বছর ধরে দেশের বাইরে। পড়াশোনার সূত্রে প্রথমে লন্ডন আর এখন নিউইয়র্ক। কিন্তু এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন এই প্রথম। নিউইয়র্ককে বলা হয় বিনিদ্র রাতের শহর। হ্যাঁ, স্বীকার করতে বাধা নেই, প্রথম যখন টাইমস্ স্কোয়্যারে এসে দাঁড়াই, মনে হয়েছিল দুর্গা পুজোর ভিড়কেও বোধ করি হার মানিয়ে দেবে। পশ্চিমের যত দেশে গিয়েছি, এমন লক্ষাধিক মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত জনসমাগমের সাক্ষী সেই প্রথম বার হই। সেই প্রেমে পড়ে যাওয়া টাইমস্ স্কোয়্যার আজ জনমানবহীন। খাঁ খাঁ করছে পুরো শহরটাই। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।

Advertisement

গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যার সিংহভাগ এই নিউইয়র্কের। এই শহর আসলে ক্যাপিটালিস্ট মোড়কে মোড়া সোশ্যালিস্ট শহর। তাই এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সারা শহর জুড়ে মোট ৪২৫টি আউটলেট খোলা হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, যাতে মানুষ তিনবেলা খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। বয়স্ক এবং বাচ্চা নিয়ে কোনও পরিবার যাতে অভুক্ত না থাকে। বিনা পারিশ্রমিকে ডাক্তার এবং নার্সদের বাচ্চাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের জন্য রাস্তায় পার্কিং বিনামূল্যে করে দিয়েছেন মেয়র। কলম্বিয়া ফ্রন্টলাইনের স্বাস্থ্যকর্মীদের ১২০০ মার্কিন ডলার করে দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এবং গভর্নর শহরে থাকা সমস্ত ভেন্টিলেটর পুরো দামে কিনে নিতে চলেছেন, যাতে বিনা চিকিৎসায় একটা প্রাণও না যায়। লক্ষাধিক আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৩ হাজার মৃত, তবু এই শহরে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তাই ভয় পাচ্ছি না।

আমার স্বামীও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী। আমাদের ছোট বাচ্চা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে ও আপাতত বাড়ি থেকেই কাজ করছে। কিন্ত পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হলে আক্রান্ত মানুষের সেবায় ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে গিয়ে থাকতে হতে পারে। আমিও বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছি। আমরা অনলাইনে বাচ্চার খাবার, ডায়পার, মুদিখানা এবং বাকি প্রয়োজনীয় জিনিস এখনও কিনতে পারছি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ১২ লক্ষ ছাড়াল বিশ্বে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত ৬৪ হাজারেরও বেশি​

আরও পড়ুন: রাত ৯টায় প্রদীপ জ্বালুন, প্রমাণ হবে আমরা এক: ভিডিয়ো বার্তা ঋতুপর্ণার​

এই ঘরবন্দি জীবনে বাবা-মা ,বৃদ্ধ ঠাকুমা—দিদা, শাশুড়ি আর আমার একান্নবর্তী পরিবারের জেঠু, জেঠিমা, কাকা, কাকিমা, মাসি, পিসি, ভাইবোন— সবার জন্য ভীষণ উদ্বেগে রয়েছি। সেইসব মানুষগুলো, যাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক খারাপ আছেন, কষ্টে আছেন, জীবন এবং জীবিকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি যত তাড়াতাড়ি কেটে যায়, ততই ভাল। আমি চাই, নিদ্রিত শহর আবার বিনিদ্র হয়ে উঠুক। আমার পরিবার, আমার শহর, আমার দেশ ভাল থাকুক। সকলে সুস্থ থাকুন।

আদৃতা মুখোপাধ্যায়, শিক্ষিকা, নিউইয়র্ক

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement