দ্রুত বাড়ি ফেরানো হোক। জমানো টাকাও প্রায় শেষ। ছবি— রয়টার্স।
চিঠি-১: প্রবল আর্থিক সংকটে, ফেরানোর ব্যবস্থা করুন
ভেলোরে মা-র চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য এসেছিলাম গত ১৭ তারিখ। এখন অসুস্থ মাকে নিয়ে আমরা আটকে পড়েছি। এই পরিস্থিতিতে এখানে একেকটা দিন খুবই অসহায় ও চিন্তার মধ্য়ে দিয়ে কাটছে। একেই তামিলনাড়ু সারা দেশের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে। যতদিন যাবে, ততই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফেরাটাও অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এখনও সুস্থই আছি। কিন্তু কতদিন থাকতে পারবো জানি না। এখানে অপরিকল্পিত ভাবে দীর্ঘদিন থাকার ফলে প্রবল আর্থিক সংকটে পড়েছি। দয়া করে আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রক দ্বারা ঘোষিত সব নির্দেশ আমরা অবশ্যই পালন করবো।
চিঠি-২: হাতে টাকা নেই, এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি
আমার নাম হাফিজুল মণ্ডল। আমি পূর্ব বর্ধমানের নিত্যানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। আমি ও আমার গ্রামের ১৫ জন ছেলে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের কাছে খাবার কেনার আর টাকা নেই। কাজের তাগিদে আমরা এসেছিলাম মুম্বই মালাড ওয়েস্ট মালবনি। দয়া করে আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।
ফোন নম্বর—৯৭৪৯০৩০২৩৬।
চিঠি-৩: কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি শেষ, লকডাউনের জন্য ফিরতে পারছি না
আমি প্রসাদকুমার বিশ্বাস। পিতা ভূপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। গ্রাম— খাঁটুরা, পোস্ট অফিস— খাঁটুরা, থানা—গোবরডাঙা, জেলা— উত্তর ২৪ পরগনা, পিন—৭৪৩২৭৩।
আমি একজন ভারতীয় রেজিস্টার্ড সিফেরার। কোম্পানির সঙ্গে আমার কাজের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে অনেকদিন কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছি না এবং কবে পারব সেটাও নিশ্চিত নয়। আমার বাড়িতে স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছেন। তাঁদের জন্য আমি উদ্বিগ্ন। আমার মতো হাজারো রেজিস্টার্ড সিফেরার আছেন, যাঁরা এই লকডাউনের কারণে জাহাজে আটকে পড়েছেন। কারওর পিতৃ/মাতৃ/প্রিয়জন বিয়োগ হওয়া সত্ত্বেও দেশে/বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। চুক্তি শেষ হলেও ছুটি পাচ্ছেন না, যার জন্য মানসিক চাপে আছেন বলে কর্মস্থলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের পোর্টে সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে ডিল করতে হচ্ছে পিপিই ছাড়াই।
কারণ সময়মতো পিপিই সাপ্লাইও আসছে না, যার জন্য কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিরন্তর পণ্য পরিবহনের কাজ করে চলেছেন। আমরা চাই, সরকার আমাদের বিবেচনা করে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক, না হলে হয়তো কোনও হতভাগ্যের আর কখনও পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে না। তাঁর প্রাণহীন শরীরটাও হয়তো পরিবার পাবে না। আপনার কাছে একান্ত অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সম্পর্কে লিখুন, যাতে অন্তত বিষয়টি সরকারের নজরে পড়ে। আর আমরা দেশে ফিরতে পারি।
প্রসাদ কে. বিশ্বাস, হোয়াটসঅ্যাপ ০৯৭৩২০১০১৫৩
আমি, আমার স্বামী এবং আমার ছ’ বছরের মেয়ে ১৬/০৩/২০২০-তে বিহারে এসে আটকে পড়েছি। ২৪/০৩/২০২০-তে ১৩১০৬ নম্বর রেলের ফেরার টিকিট ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমরা এক মাস পর্যন্ত এখানে আটকে পড়েছি। মেয়ে কান্নাকাটি করছে। কলকাতায় তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারলে বয়স্ক মা-বাবা বল ভরসা পেতেন।
Fatma Azam <fatmaazam334@gmail.com>
চিঠি-৫: বিপদ ঘনাচ্ছে কৃষকদেরও
আমি হুগলি জেলার গৌরহাটির বাসিন্দা। কিন্তু পড়াশোনর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ব্যারাকপুরে থাকি। বর্তমানে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্তিম বর্ষের ছাত্র। গ্রামের ছেলে আমি। বাবা চাষি না হলেও জ্যাঠুরা সকলেই চাষি। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক বিপদ সকলেরই ঘনিয়ে আসছে। চাষিরাও তার বাইরে নন। হয়তো পরিযায়ী শ্রমিকদের মতো অত বিপদ না হলেও, চাষিদের অবস্থাও ধীরে ধীরে খারাপেরই দিকে।
আমার এক জ্যাঠামশাই রবি ফসলগুলির চাষ করেন। তার জন্য অনেক বেশি শ্রম লাগে আর লাভও ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতিতে ফসলের পাইকারি রফতানি তো বন্ধই। খুঁচরো বাজারও সপ্তাহে একদিন বসে। কীরকম পরিস্থিতি তার একটা উদাহরণ দিই। টম্যাটো আমরা শহরে কিনছি প্রায় ২৫-৩০ টাকা কিলো দরে। অথচ উনি গ্রামে প্রায় ৬ থেকে ৭ কুইন্টাল টম্যাটো রফতানিই করতে পারছেন না। গত তিন দিনে উনি ৭ টাকা কেজি দরে এক কুইন্টাল টম্যাটো রফতানি করতে পেরেছেন।
এই একই চিত্র অন্যান্য সব্জির ক্ষেত্রে। পরবর্তী ১৯ দিন সরকারের এই দিকে নজর দেওয়া উচিত। অন্যথায় সব্জির অভাবে বাজারে ক্রমশই দাম বাড়তে থাকবে। আরও একটি ছোট্ট ঘটনা ঘটছে। গ্রামে একটিই মাত্র ব্যাঙ্ক। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য দুপুর দুটো পর্যন্ত খোলা থাকে। সদ্য সরকার থেকে প্রত্যেক মহিলার জন্য ৫০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য ধার্য করা হয়েছে। আর সেই অর্থ তোলার জন্য যা ভিড় হচ্ছে, তাতে আর যাই হোক সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না, এ টুকু বলতে পারি। ৫০০ টাকায় বাজারে কি মিলবে সে প্রসঙ্গে না-ই বা গেলাম।
অভিজিৎ মান্না, ব্যারাকপুর।
চিঠি-৬: লুধিয়ানায় আটকে, ফেরানোর ব্যবস্থা করুন
আমরা সাত জন লুধিয়ানাতে আটকে আছি। আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। দয়া করে আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।
Pratima Das <pratimadas944@gmail.com>
চিঠি-৭: ভেলোরে আটকে মা-বাবা
আমার বাবা, মা, বোন এবং ভাইপো চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়েছিল। গোটা দেশ জুড়ে লকডাউন চলায় ওরা আটকে পড়েছে। আমাদের বাড়ি দুর্গাপুরে। ট্রেনের টিকিট ইতিমধ্যেই ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। ওদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থও নেই। ওরা যাতে বাড়ি ফিরতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিন। আমার বোনের ফোন নম্বর ০৮৬১৭০৪৯৭৭৩। বাবার ফোন নম্বর ০৯০০২৭২৫৩০৬।
সুদীপ রাউত, দুর্গাপুর।
চিঠি-৮: স্ত্রী ও দেড় বছরের মেয়েকে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন
আমার স্ত্রী ও দেড় বছরের মেয়ে মালদা থেকে ব্যারাকপুর গিয়েছে। মালদায় আমার বাড়ি। লকডাউনের জন্য ওরা ফিরতে পারছে না। ওদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিন অথবা স্ত্রী ও মেয়ের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
সুরজিৎ রায়, ৯৮০৪০৮০৯৬০