রাস্তা পুরো ফাঁকা। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর মে মাসে স্বামীর চাকরি সূত্রে আমরা ম্যাঞ্চেস্টারে আসি।
মার্চ মাসের শুরুতে আমরা সেভাবে বুঝতে পারিনি যে পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। মার্চ মাসের ১২ তারিখ নাগাদ দেখলাম হোম ডেলিভারিতে যে যে খাওয়ার জিনিস অর্ডার দিয়েছিলাম তার বেশিরভাগই ‘আউট অফ স্টক’ হয়ে গিয়েছে। তখন বাধ্য হয়ে বেরতে হল। সুপার মার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখি অর্ধেক জিনিস নেই। সব তাক ফাঁকা। দেখলাম কোথাও বা চাল নেই, কোথাও হ্যান্ডওয়াশ নেই। সবাই মজুত রাখছে এক-দু’মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। আমরাও যেটুকু পাওয়া গেল সেটুকু নিয়ে ঘরে ফিরলাম। তার দু’দিন পর থেকেই স্বামীর ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু হয়ে গেল।
আজ প্রায় এক মাস গৃহবন্দি। রোজ এখানে মৃত্যু মিছিল দেখছি। চারিদিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। রাস্তাঘাটে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরচ্ছে না। রোদ-ঝলমল দিন হাতছানি দিয়ে ডাকলেও উপায় নেই বেরনোর। প্রতিনিয়ত এক ভয়ের মধ্যে বাস করছি। বাইরে বেরতে ভয় লাগছে, আবার সুপার মার্কেটগুলোর হোম ডেলিভারিও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিক ভাবে।
আরও পড়ুন: প্রথম বিদেশ সফর এত ভয়াবহ হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি
আরও পড়ুন: হাইকিং, বোল্ডারিং ছেড়ে অস্ট্রীয়রা গৃহবন্দি, মনে আতঙ্ক আমাদেরও
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাই একটা লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটাও জানি যে এই লড়াই আমরা সবাই একদিন ঠিক জিতব। তার মধ্যেই নিজেরা ভাল থাকার চেষ্টা করছি। কখনও গান করে, কখনও সিনেমা দেখে, আবার কখনও নতুন-নতুন রান্না করে।
আমার পরিবার কলকাতাবাসী। পরিবারের সবার জন্য, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য যখন চিন্তা হয় তখন ওই ভিডিয়ো কলই ভরসা। ইচ্ছে করলেও উপায় নেই যাওয়ার। তবে আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই জন্য ভারতে সে ভাবে করোনা থাবা বসাতে পারেনি এখনও। এই প্রসঙ্গে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা অপরিহার্য। এখানে সেই ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরি করে ফেলা হল। তার পর এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামো খুব ভাল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানের ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম প্রশংসনীয়। এখন একটাই প্রার্থনা, যেন তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যায়।
আমার বিশ্বাস, খুব তাড়াতাড়ি এই অন্ধকারের দিন কেটে যাবে। এবং আমরা নতুন করে আবার এক আলোময় পৃথিবীকে দেখবো।
দেবলীনা মুখোপাধ্যায়, ম্যাঞ্চেস্টার, ইংল্যান্ড।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)