‘মনে রাখতে হবে’ (২-১১) শীর্ষক পত্রের প্রেক্ষিতে এই পত্র। পত্রলেখক লিখেছেন ‘‘মুসলিম লিগের ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর দাবির সহযোগী ছিল এই কমিউনিস্ট পার্টি।’’ কিন্তু ইতিহাস, কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন দলিলদস্তাবেজ এই উক্তিকে সমর্থন করে না।
১৯৪৭ সালের ৯ এপ্রিল কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘স্বাধীনতা’য় পার্টির বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রকাশিত হল। ‘ভারত বিভাগ এবং বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন করিব কেন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হল, ‘‘উহা ভারত বিভাগ ও বঙ্গভঙ্গ কুপল্যান্ড পরিকল্পিত সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত সফল করিয়া তোলে— উহা বৃটিশের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত জাতীয় আন্দোলনকে ধ্বংস করিবে— উহা কলকারখানার মালিক এবং জমিদার-জোতদারের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনকে টুকরা টুকরা করিবে— উহা সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান না করিয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে স্থায়ী করিবে।’’
১০-৪-১৯৪৭ তারিখের ‘স্বাধীনতা’য় লেখা হল: ‘‘বঙ্গভঙ্গ চাই না, সোহরাবর্দ্দী সাহেবের ‘বৃহত্তর বঙ্গ’-ও চাই না, আমাদের দাবী স্বাধীন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্যবদ্ধ বাংলা।’’
৬ মে ১৯৪৭-এ ‘স্বাধীনতা’র পাতায় রজনী পাম দত্ত বিবৃতি দিয়ে বললেন, ‘‘ভারত ব্যবচ্ছেদ কি বন্ধ করা সম্ভব? এই শেষ সন্ধিক্ষণেও কি ভারতের ঐক্য রাখা সম্ভব? একমাত্র পথ হইতেছে— যদি ভারতের হিন্দু-মুসলমান, কংগ্রেস-লীগ-কমিউনিস্ট তথা সকল দেশপ্রেমিক শক্তি যদি এই গণতান্ত্রিক চুক্তিতে একত্রিত হইতে পারে যে ভারতের ভবিষ্যৎ ভারতীয় জনগণ ঠিক করবেন।’’
১৯৪৭ সালের ২০ জুন বাংলার আইনসভায় বাংলাদেশকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘১৯৪৭ সালের ২০ জুন হিন্দুদের মুক্তির দিন।’’ এন সি চট্টোপাধ্যায় (প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পিতা) হিন্দু মহাসভার আর এক বড় নেতা, বললেন, ‘‘আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করুন।’’
আর গণঅভ্যুত্থানের অভাব দেখে স্বাধীনতার পাতায় দুঃখের সঙ্গে লেখা হল, ‘‘সারা কলিকাতা শহর আইনসভার দুয়ারে ভাঙ্গিয়া পড়ে নাই কেন?— বিপ্লবী অভ্যুত্থানে আইনসভার প্রাসাদভবন কাঁপিয়া উঠে নাই কেন?’’
তবু কমিউনিস্টরা নাকি ভারত বিভাগের সমর্থক! হায় সত্য!
শোভনাভ ভট্টাচার্য
কলকাতা-১১৮
আদালত ও ধর্ম
শবরীমালা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সংখ্যাধিক্যে মামলাটিকে বৃহত্তর সাত বিচারকের বেঞ্চে পাঠিয়ে বলেছেন, বৃহত্তর বেঞ্চ মুসলিম মহিলাদের মসজিদে প্রবেশ, দাউদি-বোহরা সম্প্রদায়ে মহিলার যৌনাঙ্গ-ছেদ এবং সমাজ-বহির্ভূত বিবাহ করেছেন এমন পার্সি মহিলাদের ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স’-এ প্রবেশ— এই সমস্ত বিষয়কে একত্রে এনে বিচার করবেন। আর এটাও বৃহত্তর বেঞ্চের বিচার্য হবে, কোনও সাংবিধানিক আদালতের, ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে কি না! হস্তক্ষেপ করার অধিকার না থাকলে, একই সুপ্রিম কোর্ট ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখে, ৪-১ সংখ্যাধিক্যের রায়ে শবরীমালা মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সি মহিলাদের প্রবেশের পক্ষে কী করে রায় দিল? শুধু তা-ই নয়, এই বিষয় উচ্চতম আদালতের বিচারে আসার আগে নিম্নতর আদালতেও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এটাও লক্ষণীয়, ১৪ নভেম্বরের ৩-২ রায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন মহামান্য বিচারপতি এ এম খানোয়িলকার, যিনি ২৮ সেপ্টেম্বরের রায়ে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশাধিকারের পক্ষে ছিলেন।
যা-ই হোক, আমাদের এখন সাত বিচারকের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুটো বিষয় পরিষ্কার নয়। ধর্মসম্পর্কিত বিষয়ে সাংবিধানিক আদালতের হস্তক্ষেপকে যখন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে, তখন অপরাপর ধর্মকে এক বৃত্তে নিয়ে আসা হচ্ছে কেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, ধর্মের সংস্কার যদি মানবজাতির অর্ধেক অংশ নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের সৃষ্টি করে, তা হলে বিষয়টা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে কি? সেই সংস্কার তখন সামাজিক মূল্য গ্রহণ করে। আদালত সেখানে সাংবিধানিক অধিকারবলে হস্তক্ষেপ করবে না? সুপ্রিম কোর্ট কি মুসলিম তিন তালাকের বিরুদ্ধে রায় দেয়নি, যদিও পরে কেন্দ্রীয় আইনসভাতে তিন তালাক বিল অনুমোদিত হয়?
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রাথমিকে পঞ্চম
‘আসন্ন শিক্ষাবর্ষেই প্রাথমিকে পঞ্চম’ (১৪-১১) খবর পড়লাম। রাজ্য প্রশাসন যে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আর্থিক দিক থেকে অবনমন ঘটাতে চাইছে, তা পরিষ্কার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতেন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তাঁদের পঞ্চম শ্রেণিকেও পড়াতে হবে। অথচ তাঁদের বেতন কাঠামোর কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। এতে দু’দিক থেকে সরকার উপকৃত হবে। প্রথমত স্বল্প বেতনে উচ্চশ্রেণি পড়াতে পারবে, দ্বিতীয়ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মী-সঙ্কোচন ঘটাতে সক্ষম হবে। এমনিতেই রাজ্যের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষিকা বা শিক্ষক নেই। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নিতেই তাঁদের নাভিশ্বাস ওঠে। তার উপর বাড়তি একটি শ্রেণির দায়িত্ব কাঁধে চাপল!
নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ
ইমেল মারফত
ইকমিক
‘ইক্-মিক্ আবিষ্কার’ (এষণা, ১৩-১১) খুব ভাল লেখা। বর্তমানের নানা আবিষ্কারের প্লাবনে এই বস্তুটির বাণিজ্যিক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা হয়তো নেই, কিন্তু কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ওপর কোনও এক বাসনের দোকান থেকে প্রতি মাসে এখনও ছ’সাতটা ইকমিক কুকার বিক্রি হওয়ার খবর শুনেছি। বিশেষ একটি সংস্থা এই বস্তুটি প্রতি মাসে অর্ডার মাফিক তাদের সরবরাহ করে। ইন্দুমাধব মল্লিক সম্পর্কে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের ঠাকুরদা হন। রঞ্জিত এক স্মৃতিচারণে বলেছেন, ‘‘...আজও মাঝে মাঝে আমি দাদুর আবিষ্কৃত ইকমিক কুকারের রান্না খাই। আমার কাছে এ এক অনাস্বাদিত অনুভূতি তৈরি করে আজও। তাই দাদু আমার কাছে থেকে যাবেন সারা জীবন।’’ ইন্দুমাধব মল্লিকের মেজদাদা ললিত মাধবও এমনই একটি চুল্লি আবিষ্কার করেছিলেন। পিতা ও ভাইদের নামের আদ্যক্ষর ধরে ধরে এর নামকরণ হয়েছিল RALPINS। দুঃখের বিষয়, এটি বাজারে চলেনি।
রঞ্জিত কুমার দাস
বালি, হাওড়া
মিম ও সভ্যতা
‘তোমার মন নেই, নেটিজেন?’ (১১-১১) পড়ে এই চিঠি। আসলে, সোশ্যাল মিডিয়ার কৌতুক বা মিম এই মুহূর্তে নীতি, যুক্তি, রুচি, সহমর্মিতা, সব কিছুকে ধ্বংস করছে। বলা হচ্ছে, ‘এটা মজার স্বার্থে তৈরি’ ট্যাগ, অর্থাৎ তার বিরোধিতা করলেই, আপনি মজা বোঝেন না। কিন্তু মজাটি শ্লীলতা অতিক্রম করছে কি না, কারও আবেগে আঘাত করছে কি না, সে খেয়াল রাখার নাকি আদৌ প্রয়োজন নেই। ‘নির্মল শুভ্র সংযত হাস্য’ (‘বঙ্গ কৌতুক’ ক্রোড়পত্র, ১১-১১) প্রবন্ধে, ১৮৭৪ সালে বঙ্গদর্শনের মূল্যায়ন নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘আর যাঁরা তেমন লেখক নন তাঁরা গালি, নিরর্থক ছ্যাবলামিকে ব্যঙ্গ বলে ভাবেন।’’ সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে বোঝা যায়, বাঙালির হাস্যরস ও হাস্যবোধের ফের অবনমন দেখা দিচ্ছে।
সোমশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
রানিগঞ্জ, পশ্চিম বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।