‘ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ থেকে পিছু হটছে কেন্দ্র’ (১০-৮) প্রসঙ্গে এই চিঠি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভায় আসনসংখ্যা হ্রাস এবং শরিকদের উপরে নির্ভরশীলতার ফলে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ থেকে আপাতত পিছু হটার ইঙ্গিত দিল কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভায় আসনসংখ্যা হ্রাস হওয়ার কারণে কেন্দ্র পিছিয়ে গিয়েছে, এ যুক্তি মেনে নিতে কষ্ট হয়। বিরোধী গোষ্ঠীর প্রধান শরিক কংগ্রেস, যারা গত লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসনে জয়লাভ করেছে, তারাও বেসরকারিকরণের পক্ষে। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, তখনই সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের সূচনা হয়েছিল। বিরোধী জোটের অন্য অনেকেও বেসরকারিকরণের পক্ষে। শরিকরাও বেসরকারিকরণের বিরোধিতায় কখনও তেমন গলা তুলেছে বলে আমার জানা নেই। যেটুকু পিছু হটেছে তার কারণ ব্যাঙ্ক-কর্মচারীদের, ব্যাঙ্ক-গ্রাহকদের এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের বিরোধিতা। এঁদের বিরোধিতার প্রধান যুক্তি হল, জনগণের শ্রম এবং অর্থের বিনিময়ে তিল-তিল করে গড়ে ওঠা সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে ব্যক্তি-মালিকদের মুনাফার স্বার্থে বিক্রি করে দেওয়া অন্যায়। এমন সর্বনাশা পদক্ষেপ ধনকুবেরদের ধনসম্পদকে আরও স্ফীত করবে এবং সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করবে। তবে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ থেকে কেন্দ্র সাময়িক ভাবে পিছু হটলেও শেষ পর্যন্ত আবার যে এগিয়ে আসবে না, তেমনটা নয়। এ এমন এক পরিকল্পনা যার সঙ্গে এ রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্রকে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, বেসরকারিকরণ থেকে পিছু হটলে বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি তাদের, অর্থাৎ রাষ্ট্রের পরিচালক রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমা করবে না। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে শিল্পপতিরা তো আর এমনি এমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারে নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক। নির্বাচনী বন্ডকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী অর্থনীতিবিদ পরকলা প্রভাকর বলেছিলেন, এ হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বেসরকারিকরণ থেকে পিছু হটা এক সাময়িক পদক্ষেপ।
গৌরীশঙ্কর দাস, কলকাতা-১৩
পরীক্ষার চিত্র
অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, বিভিন্ন পরীক্ষায় টাকার বদলে প্রশ্নপত্র বিক্রির ঘটনা যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি মেডিক্যালের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হালহকিকত দেখেও তেমনই মনে হল। পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন অসৎ ও অনৈতিক উপায় অবলম্বন করতে দেখা গেল। হল জুড়ে অবাধে চলছে টুকলি, চিট সাপ্লাই, মাইক্রো জ়েরক্স। অভিযোগ উঠছে, পরীক্ষা শুরুর আগেই টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। একাধিক মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রনেতারা পরীক্ষা চলাকালীন হলে ঢুকে চিট সাপ্লাই করছে, এমনও অভিযোগ উঠেছে।
এক দিকে স্থায়ী চাকরির অভাব, পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে হাউসস্টাফশিপ না পাওয়ার আশঙ্কা, অন্য দিকে শাসক দলের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা নানাবিধ অসৎ উপায়ের হাতছানি— এই সবের মাঝে আজ মেডিক্যাল শিক্ষার ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক। মেডিক্যাল শিক্ষার সততা আজ প্রশ্নের মুখে, এ কেবল শিক্ষার্থীদের সমস্যা নয়। অতীতে সহমর্মিতা, নীতিনৈতিকতা, মেডিক্যাল এথিক্সই এই পেশাকে তার গৌরব অর্জন করতে সাহায্য করেছিল, অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মডেলের ডাক্তাররা হয়ে উঠেছিলেন রোগীর পরিবারের এক জন। আজ নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া ছাত্ররা কি পারবে মেডিক্যাল শিক্ষার গৌরব রক্ষা করতে? আবার এই দুর্দশার মাঝে দাঁড়িয়েও যে সব ছাত্র সততার সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেই ছাত্ররাও আজ হতাশ।
শুধু মেডিক্যাল শিক্ষাই নয়, সম্প্রতি নিট (ইউজি), ইউজিসি-নেট পরীক্ষার মতো জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় দুর্নীতির খবর আমরা দেখেছি। নিট-ইউজি পরীক্ষার মতো এত বড় একটা কেলেঙ্কারির পর, এত হাজার হাজার ছাত্রের স্বপ্নভঙ্গের পরে, সব কিছুকে ‘সামান্য ব্যাপার’ বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। এই সব ঘটনাই কি লাগামহীন পরীক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতিকে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছে না? এই সঙ্কটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। দেরি হয়ে গেলেও এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। এখনই এই সব অনৈতিক উপায়কে আটকাতে না পারলে ভবিষ্যতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর বৃহত্তর সঙ্কট নেমে আসবে।
সায়ন দাস, সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
তফসিলের নাম
প্রেমাংশু চৌধুরী তাঁর ‘নীরবতার রাজনীতি’ (৮-৮) শীর্ষক লেখায় তফসিলি জাতি হিসাবে মতুয়াদের উল্লেখ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ২০১১ সালের তফসিলি জাতি গণনা প্রতিবেদনে মতুয়া বলে কোনও তফসিলি জাতির নাম নেই। আছে নমশূদ্র জাতির নাম। যাঁদের সংখ্যা ৩৫,০৪,৬২৪ জন। নমশূদ্র ও মতুয়া সমার্থক নয়। নমশূদ্র জাতির বহু সংখ্যক মানুষ মতুয়াধর্মী নন, মতুয়া নন। নমশূদ্র জাতির একটা অংশ উনিশ শতকে মতুয়া ধর্ম নিয়ে মতুয়া হন বটে, কিন্তু তাতে সমগ্র নমশূদ্র জাতি ধর্মান্তরিত হয়নি। মতুয়া হওয়ার পরে ওঁদের কার্যত ও আইনত নমশূদ্র থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রেমাংশু চৌধুরী তফসিলি জাতি হিসাবে নমশূদ্র জাতি নামের আগে ‘মতুয়া’ শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং এক বার নমশূদ্র শব্দকে বাদ দিয়ে লিখেছেন— “আর্থসামাজিক জাত গণনা না হলে রাজবংশী, মতুয়া, পৌন্ড্র, বাগদি, বারুয়ের মতো তফসিলি জাতির মানুষ...” ইত্যাদি। এখানে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম তফসিলি জাতি নমশূদ্রকে বাদ দিয়ে মতুয়াদের ঢোকানো তথ্যগত, আইনগত, যুক্তি ও ন্যায়শাস্ত্রগত ভাবে অনুচিত তথা একদেশদর্শী, বিতর্কিত, বিভ্রান্তকারী বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের নমশূদ্র জাতির মানুষেরা।
মনোরঞ্জন মৈত্র, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
সিভিক পুলিশ
রাজ্যের প্রায় সর্বত্র সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ ও তাদের কার্যকারিতা নিয়ে অনেক বার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আদালত থেকেও নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ চলবে না। বাস্তবে কিন্তু দেখা যায়, কলকাতা ও রাজ্য পুলিশে স্থায়ী পুলিশের সংখ্যা এতই কম যে, থানা-সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রাথমিক কাজটা সিভিক ভলান্টিয়ার করছে। কলকাতা ও আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়, যেগুলো করার ব্যাপারে তাদের কোনও প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়নি। রাস্তায় না থেকে তাদের একমাত্র কাজ হল সিগন্যাল ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে আইনভঙ্গকারী গাড়িগুলো ধরে সার্জেন্টদের হাতে সঁপে দেওয়া। এর যে পরিণাম কী, তা প্রত্যেকটি গাড়ির চালকই ভাল জানেন। পুলিশদের নিয়ম বহির্ভূত অনেক কাজের সঙ্গী হিসাবে এদের নাম উঠে আসে। গ্রামেগঞ্জে এরাই সর্বশক্তিমান, পুলিশের কাজ করে থাকে।
আমার বক্তব্য, রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ কোনও প্রকার শিক্ষা বা শারীরিক সক্ষমতা দেখে হয় না। তারা রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের অনুগত কি না, সেটাই দেখা হয়। রাজ্যে চাকরি নেই অথচ দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকা মাইনের চাকরি দিতে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ চলছেই। এটা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। যাদের এ কাজে নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের পরিষেবামূলক কোনও কাজে নিয়োগ না করা উচিত। নিয়ম হোক, পুলিশ দিয়ে যে কাজ করানো হয়, সে সব কাজে কোন সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা যাবে না।
অসিত কুমার চক্রবর্তী, কলকাতা-১৪১