সিএএ-র বিরুধ্যে মিছিল সংগ্রামী নাগরিক উদ্যোগ এর রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত।
‘এনআরসি নিয়ে ভোলবদল শাহের’ (১৫-৩) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। আমার মনে হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মোটেই ভোলবদল করেননি। তিনি কী বলেছিলেন? আগে বলেছিলেন, “ক্রোনোলজিটা বুঝে নিন; প্রথমে সিএএ, তার পরে হবে এনআরসি”; এখন বললেন, “সিএএ-র সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই।” আর একটা কথাও তিনি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছেন, “দয়া করে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের সঙ্গে অবিচার করবেন না।” সবটা মিলিয়ে দেখা দরকার।
প্রথমত, এই প্রতিবেদনে একটা ঘটনার উল্লেখ নেই। তা হল, ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার, বা এনপিআর। সরকারি মতে, ২০১০ সালে এ দেশে প্রথম এনপিআর হয়েছে। ২০১৫ সালে তা আপডেট করার সময় এনপিআর ম্যানুয়ালে বলা হয়েছিল, এনপিআর-এর অধীনে দেশের ১১৯ কোটি সাধারণ বাসিন্দার তথ্যভান্ডার (ইলেকট্রনিক ডেটাবেস) তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালে এনপিআর ম্যানুয়ালে আবার ওই একই তথ্য জানানো হয়। অতএব সরকারি ভাবে দেশের ১১৯ কোটি বাসিন্দার এনপিআর তথ্যভান্ডার তৈরি হয়ে গিয়েছে।
২০২০ সালের এনপিআর আপডেট করার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। ২০১০ সাল থেকে এনপিআর-এর ঘোষিত কর্মসূচি কতটা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আমার অঞ্চলে সংশয় রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই, ২০১৫ সালে আমাদের কাছ থেকে এনপিআর-এর জন্য আধার নম্বর নেওয়া হয়নি। অথচ আমাদের না জানিয়ে, বিনা সম্মতিতে তা এনপিআর তথ্যভান্ডারে যুক্ত করা হয়েছে। ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট মেটিয়াব্রুজ শাখা’-র কর্মীরা সরকারের কাছে একাধিক তথ্যের অধিকারের আবেদন করেছিল। সেগুলির মাধ্যমে এই সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তিস্তা শেতলবাদের ‘বাদ পড়ার আশঙ্কায়’ (৪-৩) শীর্ষক প্রবন্ধে বিষয়টি বিশদে আলোচিত হয়েছে। নাগরিকদের সজ্ঞান সম্মতি ছাড়া সরকারের এই প্রক্রিয়াটি বেআইনি বলেই কি বিবেচিত হবে না?
অমিত শাহের হেঁয়ালিটার অর্থ হয়তো আমরা বুঝতে ভুল করছি। ২০১৯ সালে অসমে এনআরসি-তে ১৯ লক্ষের মধ্যে এক বিপুল সংখ্যক বাঙালি হিন্দু বাদ পড়ায় তড়িঘড়ি করে সিএএ আনা হয়েছিল। তাই তো এখনও তিনি বলছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের সঙ্গে অবিচার যেন না করা হয়। ‘ক্রোনোলজি’ মেনে এনপিআর-এর মধ্য দিয়ে আসবে এনআরসি! ২০০৩ সালের সিএএ তো সে ভাবে আগেই এনপিআর-এনআরসি’র ছক তৈরি করে রেখেছে! সত্যিই তো সিএএ ২০১৯-এর সঙ্গে সরাসরি এনআরসি সম্পর্কিত নয়।
২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সারা দেশে তাই আওয়াজ উঠেছে, সিএএ-এনপিআর-এনআরসি বাতিল করো। এনপিআর-এর প্রস্তুতি চোখ এড়িয়ে গেলে চলবে না।
জিতেন নন্দী, কলকাতা-১৮
দলবদল
রাজনৈতিক নেতাদের দলত্যাগের হিড়িক চলেছেই। এক সময়ে যে দলের প্রশস্তিবাক্যের ফুলঝুরি ছোটাতেন কোনও নেতা, তিনি হঠাৎই দলবদল করে আগের দলের নিন্দা করছেন। নির্বাচনের প্রাক্কালে দলত্যাগ করার পুরস্কার স্বরূপ মিলছে ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট। সারা জীবন একটা দলেই থাকতে হবে, এমন কোনও লিখিত নিয়ম নেই। মত পরিবর্তনের ইচ্ছে থাকতেই পারে। কিন্তু যাঁদের রায়ে তিনি জিতেছিলেন, সেই ভোটদাতাদের ইচ্ছাকেও প্রাধান্য দিতে হয়। ভোটদাতাদের রায়ের অমর্যাদা করে দলবদল অনৈতিক। বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়ক রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী, রানাঘাটের মুকুটমণি অধিকারী ও বনগাঁর বিশ্বজিৎ দাস দলত্যাগ করে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিলেন। এঁদের বিধায়ক পদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও তিন বছর বাকি। তবু তাঁরা ভোটারদের রায়ের কোনও মূল্য না দিয়ে মেয়াদ ফুরোনোর বহু আগেই অন্য দলের সদস্য হলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা বিধায়ক পদে পদত্যাগ না করে অন্য দলের প্রতীকে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রাজনৈতিক ময়দানে নেমে পড়লেন। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা অঞ্চলের ভোটারদের প্রতি এঁদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? দল পরিবর্তনের প্রয়োজন হতেই পারে, কিন্তু জনপ্রতিনিধি পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কি সেই জনপ্রতিনিধি দলত্যাগ করতে পারেন? সংসদীয় গণতন্ত্রের এ এক চরম অনাচার, দ্বিচারিতার পরিচয়। তাপস রায় বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে দলত্যাগ করলেন বটে, কিন্তু তিনিও ভোটদাতাদের রায়ের অমর্যাদা করলেন। বিধায়ক পদে ইস্তফা না দিয়ে দলত্যাগ করে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধায়ক পদ খারিজ হয়। সে ক্ষেত্রে তো আবারও সেই সব বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন করতে হবে। সেই খরচ কে বহন করবে?
দেবাশ্রিত রায়, রানাঘাট, নদিয়া
ফলের চিন্তা
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে এক প্রশান্ত কিশোর ছাড়া কেউ প্রকাশ্যে বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত দেওয়ার মতো সাহস অর্জন করে উঠতে পারেননি। আগের লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টা সিট পাওয়া বিজেপি তখন টগবগ করে ফুটছে। জাহাজ ডোবার ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ঘাসফুল থেকে নেতা-কর্মীর দল ভিড়তে শুরু করেছিলেন পদ্মফুলের দলে। ১০ বছরের শাসনকালের শাসক-বিরোধী হাওয়া, আর ক্রমশ উন্মোচিত দুর্নীতির সংবাদ থেকে অনেকের মনে এই ধারণা জন্মেছিল যে, বাংলার মসনদে বিজেপির বসা শুধু ভোট গোনার দিনটির অপেক্ষা। কিন্তু খেলা আমূল ঘুরিয়ে দু’শোর উপর আসন পেয়ে বাংলার তখ্তে তৃতীয় বার বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বারও পরিস্থিতি রাজ্যের শাসক দলের জন্য প্রতিকূল। একটার পর একটা আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ভার চাপছে। সন্দেশখালিতে স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের অমানবিক, হাড় হিম-করা অত্যাচারের অভিযোগ সাধারণ মানুষকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। এর মধ্যে আসরে এসে গেল সিএএ, যেটাকে কেন্দ্রীয় শাসক দল তুরুপের তাস বলে ভেবে একেবারে ভোটের আগে সামনে আনল। নিঃশর্ত নাগরিকত্ব মতুয়া সমাজের এক বিশাল অংশের কাছে আবেগ। যে কারণে তাঁদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন। সেই নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য এল ‘শর্তপ্রদান’ করা আইন। আর সেই আইনের ব্যাখ্যা নিজের মতো করে রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরতে দু’মাসের উপর সময় পেল তৃণমূল। এটা হয়তো এ বারের ভোটে রাজ্যের শাসক দলের কাছে অযাচিত উপহার হয়েই ধরা দেবে।
দুটো কথা এই বিষয়ে বলা প্রাসঙ্গিক। ১) প্রশান্ত কিশোর এ বার বাংলায় বিজেপির সম্ভাব্য আসনের সংখ্যা তৃণমূলের চেয়ে বেশি হবে বলে আগাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। ২) বাম-কংগ্রেস জোট করে ২০১৬-র ভোটে লড়াই করার সময় অনেকের ধারণা হয়েছিল, সেই জোট ক্ষমতায় আসবে। ধারণা সে বারও মেলেনি। এ বার মেলার সম্ভাবনা কতটুকু? অপর পক্ষে, চ্যালেঞ্জ সামনে এলে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে খেলাকে নিজের পক্ষে আনা যায়, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু আগে দু’বার প্রমাণ করে দিয়েছেন।
বার বার তিন বার মমতা কি জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন?
পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি
শৌচাগার
আমি এক মহিলা ক্যাবচালক। কাজের জন্য সারা দিন বাইরে কাটাতে হয়। কলকাতার অনেক এলাকায় পাবলিক টয়লেটের সামনে পার্কিং-এর জায়গা নেই। শৌচাগারে যাওয়ার জন্য গাড়ি দাঁড় করালে পুলিশ ফাইন করে দেয়। এ বিষয়ে পুরসভা ও ট্র্যাফিক পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তনিমা বিশ্বাস, কলকাতা-৯