Government Employees

সম্পাদক সমীপেষু: অবাক জলপান

টিফিনের সময়টা কর্মীদের নিজস্ব সময়। ওই সময় কর্মীরা কী করবেন তা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ সময় তাঁরা ব্যক্তিগত কাজ করতে পারেন, নিজস্ব কেনাকাটার প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে পারেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৫:২৩
Share:

সরকারি অফিসে নির্দিষ্ট টিফিন টাইমে কোনও মিটিং-মিছিল করা যাবে না। —ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি নবান্নের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি অফিসে নির্দিষ্ট টিফিন টাইমে কোনও মিটিং-মিছিল করা যাবে না (‘মেজদা’, সম্পাদকীয়, ২৭-৫)। ওই সময়ে কেবল খাওয়া-দাওয়া করা যাবে। নিয়মের লঙ্ঘন হলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে অফিসে অনুপস্থিত বলে ধরা হবে। কাজের সময় কাজ ছাড়া অন্য কিছু করা যাবে না— এই নির্দেশের অর্থ বোধগম্য। তাই বলে টিফিনের সময় এক জন কর্মচারী কী করবেন, সরকার তা নির্দিষ্ট করে দিতে পারে কি? সরকারি কর্মীদের সার্ভিস রুলে নিশ্চয়ই এমন শর্ত নেই যে, টিফিনের সময় কর্মীরা শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়াই করতে পারবেন। তা হলে সরকার এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করে কিসের ভিত্তিতে? এ তো স্বেচ্ছাচার!

Advertisement

টিফিনের সময়টা কর্মীদের নিজস্ব সময়। ওই সময় কর্মীরা কী করবেন তা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ সময় তাঁরা ব্যক্তিগত কাজ করতে পারেন, নিজস্ব কেনাকাটার প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে পারেন। টিফিন টাইমে লিফলেট বিলি, মিটিং বা ট্রেড ইউনিয়নের কাজও করা যেতে পারে। এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা তথা বাধা দেওয়ার কোনও এক্তিয়ারই সরকারের আছে বলে জানা নেই। আসলে ‘কেন্দ্রের হারে ডিএ দিতে হবে’— এই দাবিকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’-এর নেতৃত্বে যে লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলন করে চলেছেন, তা সরকারের পছন্দ নয়, বিশেষ আপত্তি আছে। অথচ, কেন্দ্রের হারে ডিএ দিতে অপারগ রাজ্য। অনেক নেতা-মন্ত্রী বিদ্রুপ করে বলেছেন, বেশি ডিএ চাইলে রাজ্য সরকারের চাকরি ছেড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করতে পারেন রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা। এই ধরনের ‘পরামর্শ’ সমাধান নয়, সমস্যাকে পাশ কাটানোর চেষ্টা।

কর্মচারীদের আন্দোলন যে ভিত্তিহীন বা বেআইনি, তা-ও সরকার বলতে পারছে না। এর নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। এমনকি সমস্যার সমাধানে সরকারের তেমন গরজও দেখা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায়, রাজ্য সরকার তথাকথিত ‘নির্দেশ’ জারি করে প্রকারান্তরে কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের উপর আঘাত হানছে। যা চূড়ান্ত ভাবে অনৈতিক, স্বেচ্ছাচারিতা এবং সেই কারণেই অনভিপ্রেত।

Advertisement

এই নির্দেশনামার প্রভাব পড়েছে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের মতো তাঁরাও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’ অবিলম্বে এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার না হলে আরও বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মনে রাখা দরকার, কর্মীদের দাবি যুক্তিসঙ্গত হওয়ায় তাঁদের সম্মিলিত প্রতিবাদ তথা আন্দোলনকে স্বেচ্ছাচারী রাজশক্তি কখনও দমিয়ে রাখতে পারবে না। মানুষের জোটবদ্ধ শক্তির কাছে স্বৈরাচারী রাজশক্তির পরাজয় ঘটেছে বার বার।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

বিচ্ছেদের পথ

সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ অনাবশ্যক বিলম্ব না করে দ্রুত বিবাহ-বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই, কারণ বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ঠিক, যুক্তিযুক্ত ও সময়োচিত পদক্ষেপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রলেপ’ (৯-৫) সম্পাদকীয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহ-বিচ্ছেদ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। তা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দম্পতির ভুল বোঝাবুঝির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কোথাও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সমস্যা, দেওর-ননদের নিপীড়ন বা পণপ্রথার আড়ালে আর্থিক-মানসিক-দৈহিক অত্যাচারও রয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে স্বামীর উপরেও আসতে পারে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চাপ ও সেই সঙ্গে মানসিক দমন-পীড়ন। অনেক সম্পর্কে বনিবনার অভাব, পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার অভাবও থেকে যায়। শত অনুরোধ-উপরোধের মলমেও কোনও কাজ হয় না। এর ফল— সংসারে ভাঙন। ফলস্বরূপ, সন্তানের ভবিষ্যৎ এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।

ক্রমবর্ধমান দূরত্ব দাম্পত্য জীবনে শূন্যতার সৃষ্টি করে। একটু একটু করে তা আরও ঘনীভূত হয়। শত চেষ্টা করেও যখন পারস্পরিক সম্পর্ক কিছুতেই জোড়া লাগে না, তখনই তা মর্মান্তিক পরিস্থিতির রূপ নেয়। ভেঙে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক যখন কোনও ভাবেই মেরামত করা সম্ভব হয় না, তখন সুপ্রিম কোর্ট ‘বিশেষ অধিকার’ প্রয়োগ করে তার দ্রুত মীমাংসার কথা বলেছে।

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া

চাই সময়সীমা

বেসরকারি সংস্থার কর্মী (রাষ্ট্রায়ত্ত ও অধিগ্রহণ করা সংস্থা-সহ) বেআইনি ভাবে বরখাস্ত হয়ে আইনের সাহায্য চাইলে, তাঁকে এক দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে হয়। শ্রম ট্রাইবুনালে সরাসরি কোনও মামলা করা যায় না। রাজ্য সরকার যদি মনে করে যে, কোনও বিষয় শ্রম আদালত কিংবা ট্রাইবুনালে বিচার করার প্রয়োজন আছে, তবে রাজ্যের শ্রম অধিকর্তার দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতে তা করে থাকে। রিপোর্ট পাঠানো হলেই যে তা বিচারের জন্য পাঠানো হবে, তা-ও নয়। এটা রাজ্যের শ্রম সচিবালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।

এই প্রক্রিয়ায় কখনও যোগদান, বা কখনও তা না করে মালিকপক্ষ দীর্ঘ সময় নষ্ট করে। এ ছাড়াও শুনানি চলাকালীন দিনের পর দিন সময় নষ্ট করে। যদিও শ্রমিক বা কর্মচারীর লিখিত বয়ান জমা করার ১৫ দিনের মধ্যে তার উত্তর দেওয়া মালিকপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলক। এ ছাড়াও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দেশ না মানলে মালিকপক্ষকে বিচারপতিরা জরিমানাও করতে পারেন।

বিচার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও ন্যায্য করতে পশ্চিমবঙ্গের শ্রম বিবাদ রুল-এ (১৯৫৮) যুক্ত করা হোক এই অনুচ্ছেদ— শ্রম ট্রাইবুনালে মামলার শুনানির প্রথম দিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে বরখাস্তের মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। এটা একান্ত প্রয়োজনীয় ও বতর্মানে সময়ের দাবি। বেআইনি ভাবে চাকরিচ্যুত হয়ে রোজগারহীন অবস্থায় বছরের পর বছর আদালতে লড়াই করবেন শ্রমিক, এই প্রত্যাশা অমানবিকতার নামান্তর। বিচারের আশায় ট্রাইবুনালে শ্রমিকদের ১০-১২ বছর অপেক্ষা করতে হবে কেন?

অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, শ্রম বিষয়ে কোনও কিছু আলোচনা চলাকালীন আইন মন্ত্রকের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আসবেই এবং এই দু’দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন এক দুরূহ কাজ। বর্তমানে রাজ্যের এই দফতর একই মন্ত্রীর অধীনে, তাই সুযোগ আছে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার।

মুখ্যমন্ত্রী, আইন ও শ্রমমন্ত্রী, শ্রম সচিবালয় ও রাজ্যের সরকারের পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন, রাজ্যের শ্রম বিবাদ রুলে এই সংযোজন অবিলম্বে বিধানসভায় পাশ করানো হোক।

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

শিশুর বিচার

নাবালকরা অপরাধ ঘটিয়ে ফেললে অথবা অপরাধের শিকার হলে তাদের ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’-এর অধীনে বিচার প্রক্রিয়ায় না এনে কী করে অন্য পথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, তার জন্য রাজ্য সরকার পরীক্ষামূলক ভাবে একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই সূত্রে ‘সহমর্মিতার পথে বিচার’ (১৩-৫) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে এক জন নাবালক অপরাধীর সঙ্গে এক জন প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তকে এক করলে চলবে না। প্রয়োজনে এদের এবং এদের বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং করা আবশ্যক। শিশু বা কিশোর মস্তিষ্ক অপরিণত থাকে— এই বৈজ্ঞানিক সত্যটি পুলিশ-প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থাকে মনে রাখতে হবে। শিশুরা অন্যায়ের পথ থেকে যাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, তার প্রয়াস প্রশাসনিক স্তরেই চালাতে হবে।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement