সম্পাদক সমীপেষু

সেই বাঙালির নাম কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস। জন্ম ১৮৬১ সালে নদিয়া জেলার নাথপুর গ্রামে। পিতা গিরীশচন্দ্র বিশ্বাস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য চাকুরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share:

ব্রাজিলে সেই ডানপিটে বাঙালি

Advertisement

অলিম্পিক গেমসের অনুষঙ্গে ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরো শহরটি এখন সংবাদমাধ্যমে বার বার এসে পড়ছে আর কেবলই মনে হচ্ছে এই শহরের সেই ডানপিটে ছেলেটার কথা কেউ বলছে না কেন, এক অবিশ্বাস্য ব্যতিক্রমী বাউন্ডুলে অ্যাডভেঞ্চার আর বীরত্বপূর্ণ জীবন কাটিয়ে যে ১৯০৫ সালে রিও দে জেনেইরো শহরের মাটিতে চিরকালের মতো ঘুমিয়ে পড়ল?

সেই বাঙালির নাম কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস। জন্ম ১৮৬১ সালে নদিয়া জেলার নাথপুর গ্রামে। পিতা গিরীশচন্দ্র বিশ্বাস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য চাকুরে। ছোট থেকে ডাকাবুকো সুরেশ এক সাহেবের বদান্যতায় কলকাতায় লন্ডন মিশন স্কুলে পড়তে আসেন এবং ১৪ বছর বয়সে খ্রিস্টান হয়ে গৃহত্যাগ করেন। এর পর অর্থাভাবে কলকাতার হোটেলে টুরিস্ট গাইড। ভাগ্যান্বেষণে জাহাজে চড়ে মায়ানমার যাত্রা। সেখানে এক স্থানীয় মহিলাকে আগুন থেকে বাঁচিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন। মায়ানমারে খুব সুবিধা হল না, তাই আবার জাহাজে চেন্নাই। সেখানে স্থায়ী কিছু না জোটায় ফের কলকাতায় ফিরে আসা। জাহাজে অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টুয়ার্ড-এর চাকরি নিয়ে কলকাতা থেকে লন্ডন পৌঁছে গেলেন। বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। লন্ডনের ইস্ট এন্ডে থাকা শুরু হল, কাজ মুটেগিরি আর খবরের কাগজ বিলি। স্থানীয় সাদাদের সঙ্গে লড়াই করে চলল বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এর পর কয়েক বছর কাটল ফেরিওয়ালার জীবিকা নিয়ে ইংল্যান্ডের গ্রামে গ্রামে ঘোরা। রোজগার মন্দ হত না। গণিত, রসায়ন, ল্যাটিন, গ্রিক ও ম্যাজিক বিষয়ে পড়াশোনাও চলতে থাকল। অতঃপর কেন্টে এসে সপ্তাহে ১৫ শিলিং বেতনে এক সার্কাসে চাকরি নিলেন।

Advertisement

পালটে গেল জীবন। জিমনাস্টিক্স ও পশু ট্রেনিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠলেন। বাঘসিংহের খেলাও দেখাতে লাগলেন। ওই সার্কাসে কাজ করত বাড়ি থেকে পালানো এক অভিজাত পরিবারের জার্মান কন্যা। তার সঙ্গে প্রণয় হল। কিন্তু খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে মায়ের অসুখের খবর জেনে মেয়েটি জার্মানিতে ফিরে যাওয়ায় হল বিচ্ছেদ। সার্কাসে কাজ করে টাকাপয়সা ভালই উপায় হচ্ছিল। সুরেশ তখন পুরো সার্কাসের সাহেব। এ বার সার্কাস এল জার্মানিতে। প্রেমিকার সঙ্গে আবার যোগাযোগ হল বটে, কিন্তু কন্যাটির প্রভাবশালী পিতার কৌশলে সার্কাসের চাকরিটি তো গেলই, এমনকী জার্মানিতেও আর থাকা গেল না।

এ বার অন্য একটি সার্কাসে যোগ দিয়ে সুরেশ ১৮৮৫ সালে পৌঁছলেন আমেরিকায়। ওই বছরেই বিভিন্ন জায়গা ঘুরে মেক্সিকো হয়ে সেই সার্কাস এল ব্রাজিলে। ব্রাজিলে এই প্রথম বাঙালির পা পড়ল। রিও দে জেনেইরোতে সার্কাসের শো চলতে লাগল। সুরেশ তখন সাতটি ভাষায় অবিরাম কথা বলতে পারেন। গণিত রসায়ন আর দর্শন বিষয়ে লেকচার দেন। জ্যোতিষশাস্ত্রেও তাঁর খুব উৎসাহ। ১৮৮৬ সালে সার্কাস ছেড়ে ব্রাজিলের রাজকীয় পশুশালায় সুপারিন্টেনডেন্ট পদে যোগ দেন। ১৮৮৭ সালে তাঁকে দেখা গেল ব্রাজিলের ফৌজে অশ্বারোহী বাহিনীর কর্পোরাল রূপে। এর পর রিও দে জেনেইরো সামরিক বাহিনীর হাসপাতালে শিখলেন সার্জারি, পেলেন সারজেন্ট পদ। ‘কালা আদমি’ বলে পদোন্নতির জন্য তাঁকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। ১৮৯৩ সালে হলেন লেফটেন্যান্ট। ইতিমধ্যে বয়স হয়ে গিয়েছে ৩২, চুল দাড়ি পেকেছে, মাথায় টাকও হয়েছে। ক্রমে ব্রাজিলের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করলেন স্থানীয় এক চিকিৎসকের মেয়েকে। ওই সময় ব্রাজিলের নৌবাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দিল। লেফটেন্যান্ট সুরেশ বিশ্বাস মাত্র ৫০ জন সরকারি সৈন্য নিয়ে বহুসংখ্যক বিদ্রোহীকে পরাজিত করলেন। এই অসামান্য বীরত্বের জন্য তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন। ক্রমে নিজ চেষ্টায় অর্থ সম্মান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করে এই বাঙালি রিও দে জেনেইরো সমাজের এক জন গণ্যমান্য মানুষ হয়ে ওঠেন। ১৯০৫ সালে কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস দেহত্যাগ করেন। রিও দে জেনেইরো শহরেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর এক ছেলে এবং এক মেয়ে ছিল। পরবর্তী বংশধরদের আমরা হারিয়ে ফেলেছি তবে গির্জার খাতা দেখে খোঁজ পাওয়া সম্ভব। ওঁর সমাধিটিরও কোনও হদিস কোনও লেখায় নেই। সমাধিক্ষেত্রের ১৯০৫ সালের নথি দেখলেই ওঁকে পাওয়া যাবে। নামী মানুষ ছিলেন, তাই সমাধিসৌধ সুন্দর হওয়ারই কথা।

অমিতাভ কারকুন। কলকাতা-৩২

বিশ্বরেকর্ড নয়

রতন চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘বিশ্বরেকর্ড ভেঙেও উড়ন্ত শিখ মিলখা সিংহ পারেননি’। (‘রিও থেকে অ্যাথলেটিক্স...’ ২৩-৭) কথাটা ঠিক নয়। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ে ওটি ডেভিস বিশ্বরেকর্ড করে প্রথম স্থান অধিকার করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী–সহ চতুর্থ স্থানাধিকারী ভারতের মিলখা সিংহ— সকলেই অলিম্পিক রেকর্ড করেন।

রঞ্জিত চক্রবর্তী। কলকাতা-৫৫

টানা তিন বার নয় কিন্তু

‘বিদায় জোকার’ (৯-৮) সংবাদে লেখা হয়েছে, ‘মেয়েদের ডাবল্‌সে ২০০০ সিডনি অলিম্পিক্স থেকে টানা তিন বারের সোনাজয়ী সেরিনা ও ভেনাস উইলিয়াম্স প্রথম ম্যাচেই ছিটকে গেলেন চেক জুটি লুসিই সাফারোভা-বার্বোরা স্ট্রাইকোভার কাছে।’ প্রসঙ্গত, ২০০০ সিডনি অলিম্পিকে উইমেন’স ডাবল্স-এ সোনা জিতলেও ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে সেরিনা অসুস্থতার কারণে অংশগ্রহণ করেননি। ভেনাস উইলিয়াম্স জুটি বাঁধেন অন্য এক জনের সঙ্গে। যদিও ২০০৮ বেজিং এবং ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে উইলিয়াম্স বোনেরা এই বিভাগে সোনা জেতেন। ফলে তাঁরা কিন্তু টানা তিন বার সোনা জিততে পারেননি। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে উইমেন’স ডাবল্স চ্যাম্পিয়ন হন চিনের লি থিং আর সুন থিয়ানথিয়ান। ফাইনালে তাঁরা হারান স্পেনের কনচিতা মার্তিনেস এবং ভির্হিনিয়া রুয়ানো পাসকুয়ালকে।

সজলকান্তি ঘোষ। শ্রীনিকেতন, বারুইপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement