ফাইল চিত্র।
রাম, রাম মন্দির, রামরাজ্য— বার বার এ সবের উচ্চারণ শোনা গিয়েছে বিজেপির মুখে। বিজেপির রামরাজ্যের ধারণাটা ঠিক কেমন, সে নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কিন্তু মহাকাব্যে বর্ণিত রামরাজ্য আসলে আদর্শ রাষ্ট্রভাবনার একটি রূপক। সেই আদর্শ রাষ্ট্রের আদর্শ নৃপতিকে ঘিরেও কিন্তু বিতর্কের ঘনঘটা কম নেই। বিতর্কের উৎস সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত। প্রজার প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠার তাগিদ হোক বা অন্য কোনও বাধ্যবাধকতা, কোনও কিছুই কি স্ত্রীকে অগ্নিতে প্রবেশ করতে বলার অধিকার দেয় স্বামীকে? প্রশ্ন এ নিয়েই।
সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলার বদলে স্বচ্ছতা প্রমাণে রামচন্দ্র নিজে যদি অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতেন, তা হলে কিন্তু বিতর্কের অবকাশ ছিল না। প্রজার সংশয় নিরসনকল্পে রাজা নিজে যদি অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হন, তা হলে রাজার ভাবমূর্তিতে স্বচ্ছতার ঔজ্জ্বল্য বাড়ে বই কমে না। বিজেপি যে রামরাজ্যের কথা বলে, সে রামরাজ্যের অন্যতম প্রবক্তা নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী কি আজ তেমন কোনও নজির সৃষ্টি করতে পারবেন?
নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধী ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন। কয়েকজন পুঁজিপতির কাছ থেকে নরেন্দ্র মোদী বিপুল অর্থ নিয়েছেন বলে রাহুল গাঁধী জানালেন। নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করলেন। দেশবাসীকে সত্যটা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী হোন, এমন আহ্বানও রাখলেন। এ আহ্বানে সাড়া দেওয়া কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে খুব জরুরি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর গোড়া থেকেই তীব্র নরেন্দ্র মোদীর, অন্তত অপাতদৃষ্টিতে। তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষে সিক্ত বাণটাই সবচেয়ে বেশি বার ছুড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ হেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হয়ে আজ উঠে এল দুর্নীতি যখন, তখন কিন্তু শুধু ঢালের আড়ালে আশ্রয় নেওয়া সাজে না। সম্মুখসমরে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ানোটাই কাম্য এখন।
রাম মন্দির গড়তে পারেননি ঠিকই, কিন্তু রামচরিতের সফল অনুশীলনের চেষ্টাটুকু মোদী করতেই পারেন। রাজা এবং রাজপরিবারকে সব সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে, এ সত্য মেনে নিয়ে নিজে আজ অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতেই পারেন মোদী।
নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছে বিরোধী পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী কি মেনে নিতে পারবেন এ দাবি? আত্মস্বচ্ছতা প্রমাণে তদন্তের নির্দেশ কি দিতে পারবেন? উত্তরটা অদূর ভবিষ্যতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার আত্মবিশ্বাস যদি আজ দেখাতে না পারেন নরেন্দ্র মোদী, রামরাজ্যের স্বপ্ন দেখানোর অধিকারটাও সম্ভবত আর থাকবে না তাঁর।