বার্তা

রাজ্যের জেলাগুলি হইতে তৃণমূল কংগ্রেস এ বার বেশি সমর্থক আনিতে পারে নাই। কারণ বিষয়ে নানা অনুমান সম্ভব। কেহ বলিবেন, বিরোধী দলের হামলার ভয়ে অনেকে আসিতে ইচ্ছুক হন নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৪১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একুশে জুলাই ঠিক কত ভিড় হইয়াছিল, কিংবা কত কম ভিড় হইয়াছিল? রাজনৈতিক সমাবেশের তুলনায় ভিড় জমিয়াছিল ভালই। কিন্তু আগের একুশে জুলাই-গুলির অভিজ্ঞতা যাঁহাদের স্মরণে আছে, সকলেই বলিবেন, এ বারটি অন্য রকম। অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেসেরই তৈরি করা মানদণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেস এ বার পৌঁছাইতে পারে নাই। একটি বিশেষ দিনের সমাবেশে ভিড়ের পরিমাণ দিয়া যে দল গত কয়েক বৎসর রাজ্য-রাজনীতির ব্যাখ্যা করিয়া আসিয়াছে, তাহার নিকট এই তুলনামূলক বিবেচনা স্বস্তিদায়ক হইবার কথা নয়। হয়ও নাই। ইহাও অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, এ বারের মূল ভরসা ছিল সংগঠিত ভিড়— স্বতঃস্ফূর্ত জনপ্লাবন নহে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেল, লিখিত বক্তৃতা হাতে ধরিয়া থাকিতে। তাঁহার বক্তৃতার ধার কমিয়াছে। অগোছালো ভাব বাড়িয়াছে। যে নেত্রীর স্লোগান আগে মহানগরীকে উত্তাল করিত, এ বার তাঁহার স্লোগানে বিশেষ কেহ গলা মিলায় নাই। তাঁহার বক্তৃতায় শোনা গিয়াছে যুগপৎ হুঁশিয়ারি এবং কৈফিয়তের সুর। সব মিলাইয়া, ভিড়ের হিসাব বাদ দিয়াও, এই বার একুশে জুলাই অবশ্যই অনেকখানি আলাদা।

Advertisement

রাজ্যের জেলাগুলি হইতে তৃণমূল কংগ্রেস এ বার বেশি সমর্থক আনিতে পারে নাই। কারণ বিষয়ে নানা অনুমান সম্ভব। কেহ বলিবেন, বিরোধী দলের হামলার ভয়ে অনেকে আসিতে ইচ্ছুক হন নাই। বাস্তবিক, তৃণমূল সমর্থকদের উপর বিরোধী হামলার কথা সংবাদেও প্রকাশিত। সমাবেশের আগে বিজেপির হুমকি ও তৃণমূলের হুঁশিয়ারি মিলিয়া আবহাওয়া অত্যন্ত উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছিল। বস্তুত তৃণমূল কংগ্রেসকে এতখানি তপ্ত পরিবেশে কখনওই শহিদ দিবস উদ্‌যাপন করিতে হয় নাই। কেহ বলিবেন, এই বৎসরের প্রাকৃতিক দুর্যোগও মানুষের রাজনৈতিক অনীহার কারণ হইয়াছে। তবে কিনা, যিনি যেমনই বলুন, শাসক দলের প্রতি প্রীতি ও নির্ভরতা কমিবার ফলেই যে বহুসংখ্যক মানুষ কলিকাতাগামী হইতে চাহেন নাই, তাহা নিঃসন্দেহ। সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত রকম মন্দ ফলাফলের সহিত একুশে জুলাইয়ের বাস্তবতাকে মিলাইয়া দেখিলে বুঝিতে কষ্ট হয় না— দিন পাল্টাইয়াছে।

মুখ্যমন্ত্রীর সে দিনের বক্তৃতাটিই প্রমাণ, তাঁহার দল আপাতত বিরোধীদের বিষয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করিতে ব্যস্ত। নিজেদের ভুল দেখিলেও তাহাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে তাঁহারা এখনও অনাগ্রহী। এই প্রসঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীকে একটি গোড়ার বিষয় মনে করাইয়া দেওয়া যায়। যে পরিবর্তনের হাওয়ায় ভর দিয়া তিনি ক্ষমতায় আসিয়াছিলেন, সম্ভবত সেই হাওয়াকে তিনি কিছুটা ভুল বুঝিয়াছিলেন। তাঁহার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা নিশ্চয় ২০১১ সালের পরিবর্তনের পিছনে একটি কারণ ছিল— কিন্তু তাহাই সে বারের বাম দুর্গ পতনের একমাত্র কারণ ছিল না। দুর্নীতি ও অপশাসনের পরিপ্রেক্ষিতেই তিন দশকের অধিক ক্ষমতাভোগী বামফ্রন্ট শাসনকে রাজ্যবাসী নিশ্চিত মতদানে উড়াইয়া দিয়াছিলেন। এই একটি ঘটনা হইতেই বুঝিয়া লওয়া সম্ভব, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কী চাহিয়াছিলেন, কী চাহেন নাই। অথচ, অাশ্চর্য ব্যাপার, ক্ষমতায় আসিবার পর দেখা গেল, তৃণমূল কংগ্রেস সর্বতো ভাবে বাম জমানার অপশাসনের পন্থাগুলিকে মজবুততর করিয়া তুলিতেছে, এবং দুর্নীতির শূন্য স্থানটিকে নিকৃষ্টতর ও প্রকাশ্যতর দুর্নীতি দিয়া পূর্ণ করিতেছে। এ বারের জাতীয় নির্বাচনের পরও কাটমানি-কুনাট্য ব্যতীত দলের মুখ পাল্টাইবার ভিন্নতর কোনও প্রক্রিয়া দেখা গেল না। মুশকিল হইল, গণতন্ত্রে জনপ্রিয়তা বরাবরই একটি অস্থাবর সম্পত্তি— চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নহে। সেই সম্পত্তি ধ্বস্ত হইতে বসিলে কৈফিয়ত, হুঁশিয়ারি, হুমকি, বিরোধীদলন— কোনওটিই বাঁচিবার উপযুক্ত পথ নহে। পথ মাত্র একটিই:

Advertisement

প্র-শাসন, অর্থাৎ প্রকৃষ্ট শাসনে প্রত্যাবর্তন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement