সম্পাদকীয় ২

প্রহার ও গো-হার

অর্থবৈষম্য দূরীকরণ, চাকুরির সংখ্যা ও বেতন বৃদ্ধি, রাজনীতির উপর পুঁজিবাদী সংস্থাগুলির প্রভাব হ্রাস ও আরও কিছু দাবিতে এই আন্দোলন চমকপ্রদ প্রচার ও প্রসারে পৃথিবীর নজর কাড়িয়া লয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share:

বামপন্থী ছাত্র সংগঠন কলেজ স্ট্রিটে মিছিল করিল। কিছু দুষ্ট লোকের মতে, তাহারা চাহিয়াছিল, নিষিদ্ধ স্থানে মিছিল করিবার অপরাধে পুলিশ তাহাদের প্রহার করুক। পুলিশ কিছুই করিল না, দাঁড়াইয়া দেখিল। পরের দিনই বামপন্থী দল ওই স্থানেই মিছিল করিল। নিন্দুকে বলিল, তাহাদেরও উদ্দেশ্য, পুলিশের প্রহার খাইয়া রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক বলিয়া জাহির করা। কিন্তু পুলিশ উদাস হইয়া তাকাইয়া রহিল। বামপন্থীদের এক কালে অভিনব চিন্তাভাবনার জন্য খ্যাতি ছিল, কিন্তু কিছু লোকে বলে, অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী দলগুলি চিন্তা-দেউলিয়া হইয়া, বহু ভাবিয়া বারংবার একই কৌশলের শরণ লয়: অশান্তি পাকাইয়া পুলিশের মার খাইতে পারিলে, নিজেদের নিপীড়িত শহিদ-মার্কা ছবি তুলিয়া ধরা যাইবে, যাহা দেখিয়া সমবেদনায় উচ্ছ্বসিত জনতা গগনভেদী আহা-উহু করিবেন ও অশ্রুর তোড়ে মার্ক্সের প্রতি ধাবিত হইবেন! বালক যেমন মাতার মনোযোগ আকর্ষণ করিবার জন্য ওষ্ঠাধর ফুলাইয়া ‘পড়িয়া গিয়াছি’ বলিয়া আর্তনাদ করে, সেই কৌশলেই ইঁহারা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব হাসিল করিবেন!

Advertisement

কলেজ স্ট্রিট অভিযানের প্রসঙ্গে আসিতে পারে আমেরিকায় ২০১১ সালের ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনের কথা। বহু সংগঠন মিলিয়া এই আন্দোলন করা হইয়াছিল, ওয়াল স্ট্রিট যেহেতু পুঁজিবাদের প্রতিনিধিস্থানীয় পথ, তাই সেই স্থানে সমাবেশের মধ্যে নিহিত ছিল আর্থিক অসাম্যের প্রতিবাদ, মূল স্লোগান ছিল ‘আমরাই ৯৯%’, যাহা বুঝায়: আমেরিকার ধনসমষ্টির অধিকাংশই মাত্র ১%-এর কুক্ষিগত, বাকি জনসাধারণ সামান্য লইয়া সন্তুষ্ট থাকিতে বাধ্য। অর্থবৈষম্য দূরীকরণ, চাকুরির সংখ্যা ও বেতন বৃদ্ধি, রাজনীতির উপর পুঁজিবাদী সংস্থাগুলির প্রভাব হ্রাস ও আরও কিছু দাবিতে এই আন্দোলন চমকপ্রদ প্রচার ও প্রসারে পৃথিবীর নজর কাড়িয়া লয়। অতগুলি সংগঠন, যাহাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমস্ত ক্ষেত্রে আদৌ সমঞ্জস নহে, মিলিয়ামিশিয়া এই প্রতিবাদের অভ্যন্তরীণ আবেগকে এমন ভাবে ছড়াইয়া দিয়াছিল, মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী শ্রেণির বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ বঞ্চিতের আখ্যানকে এমন বিচিত্র ও তীব্র ভাবে উপস্থাপিত করিয়াছিল, ওয়াল স্ট্রিটের প্রতীক বিখ্যাত ষণ্ডটির উপর নৃত্যরত ব্যালেরিনার ছবি দিয়া এমন আকর্ষক পোস্টার প্রস্তুত করিয়াছিল, আন্দোলনটি নিজের বার্তা প্রত্যেকের নিকটে পৌঁছাইয়া তবে ছাড়ে।

কিন্তু কলেজ স্ট্রিট অভিযানের ক্ষেত্রে কোনও বার্তাই সাধারণের নিকট যায় নাই। যেন, কেবল ওইখানে মিছিল নিষিদ্ধ বলিয়াই ওইখানে করিব, ইহার অতিরিক্ত কিছু বক্তব্য নাই। লোকে বলিয়া থাকে, পুলিশ বামপন্থীদের নবান্ন অভিযানের সময় ধরপাকড় করিয়া তাঁহাদের অত্যধিক পাত্তা দিয়া ফেলিয়াছিল। বহু মানুষ বামপন্থীদের পক্ষে কিছু বাক্য ব্যয় করিয়াছিলেন। এই বার প্রশাসন চমৎকার নির্বেদ অনুশীলন করিয়াছে। পরিণতমনস্ক ক্ষমতা বহু ভাবে বিরোধীকে শায়েস্তা করিতে পারে, তাহার মধ্যে এক অতি কার্যকর পদ্ধতি: উপেক্ষা। পুলিশ জানাইয়াছে, কর্মসূচির ছবি তাহারা তুলিয়া রাখিয়াছে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা লইবে। পুলিশ যখন আন্দোলনকারীদের ছবি তুলিয়া ছাড়িয়া দেয়, তখন সেই প্ররোচকদের মুখ লুকাইবার জায়গা থাকে না। পুলিশ অতীত হইতে শিক্ষা লইয়াছে। বামপন্থীরা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement