—ফাইল চিত্র।
মোটের উপর নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক চরাচরে আচমকা বড় কাঁপুনির রেশ এসে লাগল। দুর্নীতির গন্ধ নিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ল বঙ্গীয় তটভূমিতে।
রান্নার গ্যাসের ডিলারশিপকে কেন্দ্র করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ল বিজেপি নেতার নাম। পুলিশ এসে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল বিজেপি-র এক রাজ্যস্তরের নেতাকে। সন্দেহ এবং সংশয়ের আঙুল উঠল আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক নামের দিকে। অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের দায়িত্ব বিচার বিভাগের। কিন্তু তার আগেই যে পাবলিক ট্রায়ালের মুখোমুখি হতে হল বিজেপি-র এক জন নেতাকে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই।
বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণেও যে, বিজেপি একে রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক বলে বর্ণনা করেছে। অর্থাৎ বিরোধী স্বরকে রুদ্ধ করার লক্ষ্যে এখানে সরকার তথা শাসক দল পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে, অভিযোগটা মূলত এ রকমই। যদি এমনটা সত্যি হয়, তা হলে তার মতো নিন্দার্হ আর কিছু হতে পারে না। অনুব্রত মণ্ডল যখন ‘গাঁজা কেসে’ কাউকে ধরার জন্য পুলিশের উদ্দেশে বার্তা প্রেরণ করেন, তখন সমাজ সোচ্চার হয়ে ওঠে এই জন্য এবং সঙ্গত কারণেই। একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী যে কোনও গ্রেফতারের ঘটনাই আসলে অভিসন্ধিমূলক এমনটা ভাবারও কোনও নিচ্ছিদ্র পটভূমি তৈরি হয়নি। বস্তুত এই ছিদ্র ধরেই লখিন্দরের বাসরঘরে প্রবেশ করার স্পর্ধা রাখে শাসকের বিষধর সাপ। গোটা দেশের পরিসরে যদি ভাবনাটাকে ফেলা যায়, এবং দেখা যায় ‘আরবান নকশাল’-এর নামে আচমকা গণধরপাকড় (কিমাশ্চর্যমতঃপরম এঁরা সবাই শাসকীয় ‘সন্ত্রাস’-এর বিরোধী), তখনও দেখুন, বিরোধী শিবির থেকে একটাই সুর ভেসে আসে— এই সব গ্রেফতারি রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক। সে ক্ষেত্রে শাসক ধারা-উপধারার চক্রান্ত, তদোপরি চক্রান্তের জাল নির্মাণ করে বোঝাতে চায়, কত অবশ্যম্ভাবী ও অপরিহার্য ছিল এই গ্রেফতারি।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কাচের ঘরে বসে আছি আমরা সবাই এবং ঢিল ছুড়ছি ক্রমাগত। লাগে তুক, না লাগে তাক। যে সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের, সেই মানুষের দিকে তাকান, দেখুন ওই আম আদমির বিভ্রান্ত মুখ। ভ্রান্তি হোক বা বিভ্রান্তি, তা অপনোদনের দায় শাসকের এবং একই সঙ্গে বিরোধীরও। তাদের মনে রাখা দরকার, যে মুখগুলোকে মূঢ়, ম্লান, মূক বলে মনে হচ্ছে, বাস্তবে কিন্তু তাদের প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে একটা করে তুলাদণ্ড। প্রত্যেক মুহূর্তে নিজের উপলব্ধির মাধ্যমে নিক্তিতে ওজন হচ্ছে প্রতিটি দলের কাজকর্ম। দুর্নীতি বা অন্যতর কোনও অভিযোগের প্রমাণ-অপ্রমাণের দায় শেষ পর্যন্ত বর্তায় শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে এই দলগুলোর উপরেই।
আরও পড়ুন: এলপিজি ডিলারশিপ নিয়ে বড় ‘দুর্নীতি’! কলকাতায় গ্রেফতার রাজ্য বিজেপি নেতা
শুদ্ধতার বিচারের ভার আম আদমিও নিজের কাছে রাখে। সাধু, সাবধান।