Farmers Protest

দুর্ভাগ্যজনক

প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর চাপাইয়া দিলে তাহা ন্যায়সঙ্গত হইবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

— ছবি সংগৃহীত

শান্তিপূর্ণ মিছিল করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন কৃষকরা। শেষ অবধি লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকার পার্শ্বে গোষ্ঠীগত পতাকা উত্তোলন করিলেন তাঁহারা। প্রতিশ্রুতিভঙ্গ তো বটেই, জাতীয় পতাকার অবমাননাও। বিক্ষোভরত কৃষকরা এই কাজ করিয়া থাকিলে, তাহা নিন্দনীয়। যদিও বহুবিধ অভিযোগ হাওয়ায় ভাসিতেছে। কেহ বলিতেছেন, বিক্ষোভকারীর ছদ্মবেশে সরকারপন্থীরাই এই কাজ করিয়াছে, যাহাতে বিক্ষোভকারীদের নৈতিক দাবিটি ক্ষুণ্ণ হয়। আবার শোনা যাইতেছে, বিক্ষোভকারীদের একাংশকেই কেহ এই কাজ করিতে প্ররোচিত করিয়াছে। তেমন কোনও ঘটনা ঘটিলে তাহা অধিকতর নিন্দনীয়। মোট কথা, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে যাহা ঘটিল, তাহা না ঘটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু, তাহার সম্পূর্ণ দায় প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর চাপাইয়া দিলে তাহা ন্যায়সঙ্গত হইবে না। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে নাগরিকের অধিকার সংবিধানস্বীকৃত। এবং, সেই প্রতিবাদের একটি প্রধান উদ্দেশ্য, কোনও অবিচারের প্রতি যত বেশি সম্ভব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সেই কারণেই প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকরা রাজধানী দিল্লির রাজপথে ট্র্যাক্টর লইয়া মিছিল করিতে চাহিয়াছিলেন। সেই মিছিলের অনুমতি দিতে দীর্ঘ টালবাহানার পর, ছত্রিশটি শর্ত আরোপ করিয়া শেষ অবধি শহরের কেন্দ্র হইতে বহু দূরে মিছিলের সম্মতি দিয়াছিল পুলিশ। প্রতিবাদকারীরা সেই শর্তে সম্মত হইয়াও শেষ অবধি তাহা রক্ষা করিলেন না, তাহা অন্যায়— কিন্তু, বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের বিস্ফোরণটির কারণও বোঝা সম্ভব।

Advertisement


এই ক্ষোভ এক দিনের নহে। নভেম্বরের ২৬ তারিখ হইতে দিল্লির সীমান্তে অবস্থান করিতেছেন বিক্ষোভরত কৃষকরা। উত্তর ভারতের প্রবল শীত, অকালবর্ষণ, বহু মানুষের অসুস্থতা ও মৃত্যু— কিছুই তাঁহাদের বিক্ষোভকে দমাইতে পারে নাই। তাহা সম্ভব ছিল কেবলমাত্র সরকারের পক্ষে। এগারো দফা আলোচনা হইয়াছে, সরকার বিভিন্ন রফাসূত্র প্রস্তাব করিয়াছে, এমনকি শীর্ষ আদালতের দেখানো পথে দেড় বৎসর কৃষি আইন স্থগিত রাখিবার কথাও বলিয়াছে। কিন্তু, এই আপাত-নমনীয়তায় প্রচ্ছন্ন ছিল একটি বার্তা— যে হেতু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই কৃষি আইনের পক্ষে, কোনও ভাবেই তাহাকে প্রত্যাহার করা চলিবে না। অর্থাৎ, প্রকৃত প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিরোধটিকে গোষ্ঠীর দাবি বনাম ব্যক্তির জেদের লড়াইয়ে পরিণত করিয়াছে। তাহার ফলে, সরকারের কোনও রফাসূত্রই কৃষকদের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় নাই। যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অতিক্রম করিয়া ব্যক্তির জেদ, অথবা ক্ষুদ্রস্বার্থ গুরুতর হইয়া উঠে, সেখানে ক্ষোভের বিস্ফোরণই কি দুর্ভাগ্যজনক নিয়তি নহে?


সমস্যাটিকে গভীর করিয়াছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আন্দোলনকারীদের— এবং, বৃহত্তর অর্থে, গোটা দেশের— অবিশ্বাস। আন্দোলনকারীরা বারে বারেই অভিযোগ করিয়াছেন, সংস্কারের মোড়কে কেন্দ্রীয় সরকার আসলে কতিপয় কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থরক্ষা করিতেছে। অর্থাৎ, সরকার যে সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করিবে, এই বিশ্বাস মানুষের নাই। অভিযোগটি সত্য কি না, তাহার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ জনমানসে এই ধারণাটির অস্তিত্ব। তাহার উপর, বারে বারেই অভিযোগ উঠিতেছে যে, সরকার এই আন্দোলনে অন্তর্ঘাত ঘটাইতে সচেষ্ট। এই অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনও সমাধানসূত্রই গ্রহণযোগ্য হয় না। মানুষের বিশ্বাস অর্জনের কোনও চেষ্টা সরকারের তরফে এখনও চোখে পড়ে নাই। ফলে, অচলাবস্থা অব্যাহত। লাল কেল্লায় যাহা ঘটিল, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু, আরও অনেক বেশি দুঃখের এই কথাটি যে, কী ভাবে দেশের নাগরিকদের প্রতিবাদকে সম্মান করিয়া তাহার সম্মুখীন হইতে হয়, সমাধানসূত্র খুঁজিতে হয়, দেশের সরকার তাহা জানে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement