Reserve bank of India

Inflation: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কি কোনও ভুল পদক্ষেপ করছে?

মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়তে থাকার সময় ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে তা থাকুক— এমন মনোভাব পোষণের জন্য উপযুক্ত সময় এবং নীতি সংশোধনের উপযোগী পরিবেশ, কোনওটিই ছিল না।

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২২ ১০:২৭
Share:

মুদ্রাস্ফীতি রোধের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার কালহরণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। প্রতীকী ছবি

ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন গভর্নর মুম্বইয়ের মিন্ট রোডে তাঁর কার্যকালের দিনগুলির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একদা এই কলাম লেখককে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর অন্যতম নীতিই ছিল কোনও নেতিবাচক খবর দিয়ে বাজারকে স্তম্ভিত করা থেকে বিরত থাকা। তিনি বলেছিলেন, ইতিবাচক কোনও সংবাদে বাজারকে চমকে দেওয়ার বিষয়টি এক প্রকার। কিন্তু কোনও অস্বস্তিকর বিষয়ের অবতারণা যখন ঘটতে চলেছে, এ নিয়ে লুকোছাপা না করে সে বিষয়ে বাজারকে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়াই উচিত, যাতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতার আগাম পদক্ষেপ বাজার করতে পারে। যে ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ‘ওভারনাইট মানি’-র (অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থ ঋণদাতারা ‘রাতারাতি’ ঋণগ্রহীতাকে দিতে রাজি হন এই শর্তে যে, পরের দিন কারবার শুরু হওয়ার মুহূর্তেই তাঁরা সুদসমেত তা প্রদান করে দেবেন) নীতিগত হার সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তন এনে ‘অফ-সাইক্‌ল’ (নির্ধারিত সময়ের বাইরে গিয়ে অর্থপ্রদান) প্রদানকে তুলে ধরছিল (তা-ও আবার তার স্বাভাবিক সময়ে অনুসৃত ২৫ দফা নীতির বাইরে গিয়ে), তাতে নিঃসন্দেহে বাজার সচকিত হয়ে পড়েছিল। আর এই চমক অবশ্যই ছিল নঞর্থক— যদিও অনেকেই জানতেন যে, অফ-সাইক্‌ল অর্থপ্রদানের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়তে চলেছে। আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন সেটি হল এই যে, অর্থ বিষয়ক নীতিনির্ধারক কমিটির সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের বিষয়ে একমত হওয়া একান্ত জরুরি, যে ভাবে রেপো রেট পরিবর্তনের বিষয়ক সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ঐকমত্য দেখা গিয়েছিল। গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এটি বস্তুত এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। যদিও এমন মনে হয়েছিল যে, মুদ্রাস্ফীতি রোধের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার কালহরণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই ভুলকে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার উদ্দেশ্যে জারি করা কোনও আদেশনামা বলেও কেউ কেউ ব্যাখ্যা করতে পারতেন। সেই বিবর্ধনের ৪ শতাংশের ২ শতাংশ করে উভয় দিকেই সামান্য বিচ্যুতি বলে পরিগণিত হতে পারত। মনে হতে পারত, কোনও আদেশ জারি করে এমন কথা বলা হচ্ছে যে, মুদ্রাস্ফীতির নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমা ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছলেও যেন কোনও পদক্ষেপ না-করতে বলা হচ্ছে। সেই সীমা লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক উদাহরণ বাদ দিলে বেশ কয়েক মাস ধরে তা একই স্থানে বিরাজ করছিল। এমনকি, যখন সীমা লঙ্ঘিত হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রার্থনা ছিল (যদি কেউ পারে, এমন সুরে), এই সমস্যা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়তে থাকার কালে ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে তা থাকুক— এমন মনোভাব পোষণের জন্য উপযুক্ত সময় এবং নীতি সংশোধনের উপযোগী পরিবেশ, কোনওটিই ছিল না। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন অবশ্যই ছিল। কারণ, সকলেই জানেন যে, কোনও অর্থনৈতিক নীতি কার্যকর হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। যদি সেই আদেশনামার কোনও সঠিক পাঠ সম্ভব হয়, তবে তার লক্ষ্যমাত্রা হবে ৪ শতাংশ এবং কখনওই ৬ শতাংশ নয়। আর এ-ও ঠিক যে, সেই সঙ্গে সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গত বছরই নেওয়া উচিত ছিল।

তার নিজের আদেশনামাকেই কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভুল বুঝল? এর কারণ হতে পারে যে, সরকারের ব্যাঙ্কার হিসেবে তার ভূমিকাকেই সেই সময়ে প্রাধান্য দিতে চেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যাতে নর্থ ব্লকের বিপুল ঋণ-প্রকল্পগুলিকে যতখানি সম্ভব কম খরচে নামিয়ে আনা যায় এবং অর্থনীতির মুদ্রাসংক্রান্ত বিষয়ে তার কর্তৃত্বকেও কিছু কমিয়ে দেখানো যায়। অর্থনীতির বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখে নর্থ ব্লক যখন সরকারি ব্যয়কে নির্ধারণ করতে চাইছিল, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সরকারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পদক্ষেপ করে। আর তখনই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির গুরুত্ব তার আদেশনামায় কমে আসে।

Advertisement

নির্দেশনামায় এ জাতীয় উলটপুরাণ অবশ্যই প্রকৃত সুদের হারের (নমিন্যাল ইন্টারেস্ট রেট বা মুদ্রাস্ফীতির আগে হিসেব করে নির্ধারিত সুদের হার থেকে স্ফীতির হার বিয়োগ করলে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায়) উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঞ্চয়েচ্ছুরা ইতিবাচক ফলের আশায় ইকুইটি বা অর্থ-বাজারের অন্যত্র বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হন। এর ফলে যা দাঁড়ায় তা হল, ‘অ্যাসেট প্রাইস বাব্‌ল’ (এমন এক অর্থনৈতিক চক্র, যা বাজারদরের দ্রুত উত্থানের ফলে সৃষ্ট হয়। বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের বাজারের ক্ষেত্রে)। এমন ক্ষেত্রে যা সাধারণত ঘটে থাকে, তা হল— বৈদেশিক বিনিয়োগকর্তারা বর্ধিত মূল্যের সুযোগটি নিয়ে দ্রুত সরে পড়তে চান। খুচরো বিনিয়োগকারীরা দ্রুত পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

সমস্যার সমাধান তখনই হতে পারে, যখন জিডিপি-র ন্যূনতম বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে মুদ্রাস্ফীতিকে ছাড়পত্র দিতে হবে। প্রতীকী ছবি

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চিন্তাধারায় এই স্বীকৃতিযোগ্য হ্রাসকারী প্রবণতাকে বিনির্মাণ করে দেখানোর সঙ্গে কেউ একমত না-ও হতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, জ্বালানি এবং ভোজ্য তেলের মতো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে যদি মূল্যবৃদ্ধি দেখা দেয় এবং তার আভাস যদি আগে থেকে না-ও অনুভূত হতে পারে (যদিও এ কথা সকলেরই জানা যে, এই স্ফীতি আসলে ইউক্রেন যুদ্ধের উপজাত)। সে ভাবে দেখলে, এই যুদ্ধ তার তৃতীয় মাসে পড়েছে এবং অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক কমিটি যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য বৈঠকও করেছে। বিশেষ করে যখন খনিজ তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, তখন বৈঠক করেছে এবং যুদ্ধ শুরুর এক মাস পরে আবার মিলিত হয়েছে। এমতাবস্থায় পদক্ষেপ না করার বিষয়টিকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? বলা যাবে কি যে, এই অনড়ত্বের পিছনে কাজ করছে কমিটি সদস্যদের ঐক্যমত না হওয়ারমতো কোনও বিষয়?

এই ধরনের অবস্থানের পিছনে আরও একটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। সরকারের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেড়ে গিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। যেখানে স্বাভাবিক হার হল ৬০ শতাংশ। এই ফুলেফেঁপে ওঠা ঋণের সুদপ্রদানের মাধ্যমে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায়, যখন সুদের হার বৃদ্ধি পায়। সমস্যার সমাধান তখনই হতে পারে, যখন জিডিপি-র ন্যূনতম বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে মুদ্রাস্ফীতিকে ছাড়পত্র দিতে হবে। সেই অবস্থাতেই ঋণ-জিডিপি অনুপাত আপনা থেকে নিয়ন্ত্রণে আসবে। বাজেটে ঘাটতির বিষয়টিরও সমাধান ঘটবে। সরকারি ঋণের বোঝা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে এটিই সমাধান-সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় (‘মুদ্রাস্ফীতির দ্বারা ঋণ দূরীকরণ’), যদি না রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কোনও আদেশ জারি করে এই পদক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement