Share Market

Share Market: শেয়ার বাজারের এই তেজি ভাব কতটা সত্য, নতুন হিসাব-বর্ষে কী হিসেব

এমন একটি বছর লগ্নীকারীরা গত এক দশকে দেখেছেন বলে মনে হয় না।

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫০
Share:

‘বাস্তব’ জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টিকে কিন্তু অবহেলা করা যায় না।

গত বছর তার স্বাভাবিক বাঁধন থেকে শেয়ারের দাম মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছিল। আপনি এ কথাও বলতে পারেন যে, সেনসেক্স তার যাবতীয় ‘সেন্স’ বা চরিত্র-বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত হয়েছিল। কারণ, ৩০-শেয়ারের ‘বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স’ আশ্চর্যজনক ভাবে ৪০ শতাংশ প্রাপ্ত হয় এবং আগামী সপ্তাহে দীপাবলির সময় ‘পরম্পরাগত হিসাব বর্ষ’ বা ‘ট্র্যাডিশনাল অ্যাকাউন্টিং বর্ষের’ (বিক্রমাব্দ অনুযায়ী) সঙ্গে সঙ্গেই তার ইতি ঘটবে বলে বোঝা যায়।

Advertisement

এমন একটি বছর লগ্নিকারীরা গত এক দশকে দেখেছেন বলে মনে হয় না। এবং এটি এমন একটি তেজি অবস্থা, যার পূর্বাভাস রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার মতো অতিমাত্রায় আশাবাদী ছাড়া আর বিশেষ কেউ দেননি। রাকেশের পোর্টফোলিয়ো ২০২০-র মার্চ মাসে প্রথম বার কোভিড অতিমারির সময় থেকে ১৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তা সত্ত্বেও ‘বাস্তব’ জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টিকে কিন্তু অবহেলা করা যায় না। যে বছরে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ তার যাবতীয় দুর্বহ প্রভাব নিয়ে দেখা দিল, অর্থনীতির উপর অতিমারির সম্পূর্ণ প্রভাব প্রতীয়মান হয়ে উঠল— অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের গতিছন্দ এ বছর গত বছরের নিম্নগামিতার তুলনায় সামান্য ভাল বলে মনে হতে লাগল। যদি আপনি সরকারি পরিসংখ্যানের হিসেব দেখেন, তা হলে মনে হবে অর্থনীতি বুঝি প্রাক-অতিমারি পর্বে ফিরে গিয়েছে। এটি শেয়ার বাজারে ৪০ শতাংশ স্ফীতি ঘটার মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়, সর্বোপরি বিগত বছরের শেয়ারের দামের উপর দুই অঙ্কের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তো নয়ই। তুলনা করলে দেখা যায়, সেনসেক্স ২০১৬-এর দীপাবলির কালের পরবর্তী ছ’বছরে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং পরবর্তী তিনটি বিক্রমাব্দে তা আরও ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। বলা যেতে পারে, চক্রবৃদ্ধি হারে তা ন’বছরে ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৯ সালের দীপাবলির সময় বাজারকে কেউ মন্দাবস্থায় দেখতে পাননি।

Advertisement

সুতরাং এ কথা নিশ্চিত ভাবে ধরে নেওয়া যায় যে, বাজারের যথেচ্ছ ‘লিকুইডিটি’ (দ্রুত স্থাবর সম্পদ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বাজারের সামর্থ্য) এবং সুদের কম হার অর্থনীতির উপর কোভিডের প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই শেয়ারের বাজারে তেজি ভাব ইন্ধন পেয়েছে। এ সব বিষয়ের সঙ্গে কেউ যদি কর্পোরেট এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রগুলি ভাল অবস্থায় আছে, এমন ভাবনাকে সংযুক্ত করেন এবং উদ্দাম ঢক্কানিনাদের সঙ্গে কুচকাওয়াজ শুরু করে দেন ও তৎসহ পিছন ফিরে না দেখে বাজারের চোখ যদি শুধুমাত্র সামনের দিকেই স্থির রাখেন, তা হলে কী ভাবে ‘নাইকা’-র প্রস্তাবিত মূল্য এবং ‘পেটিএম’-এর প্রস্তাবিত দামকে ব্যাখ্যা করবেন?

এ ধরনের বাজার, যাকে ‘রানঅ্যাওয়ে মার্কেট’ (যেখানে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড অনুক্রমিক মূল্যমানগুলিকে এড়িয়ে যায়। প্রধানত বিনিয়োগ-নিবিড় প্রবণতার কারণেই এমন ঘটে) বলা যায়, সেখানে মধ্যম মানের বৃদ্ধিই দেখা যায়। সরকার মনে করে, এমন অবস্থা থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি সম্ভব হবে। তার সেই সংক্রান্ত সামর্থ্যকে এ ক্ষেত্রে মনে রাখা হয় না। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের ধারণা অনুযায়ী এই বৃদ্ধির অঙ্কটি মাঝারি, ৬ শতাংশের মতো।

ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ডকে মিইয়ে দিতে আবার বেশ কিছু বিষয় মজুত থাকে। যেমন ভোগের অবনমন, কর্মনিযুক্তিতে ধস এবং এ সব কিছুর ফল হিসেবে ‘ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন’-এর হারে (যে পরিসংখ্যান দ্বারা কোনও সংস্থার সম্ভাব্য উৎপাদনকে তার প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতার নিরিখে দেখা হয়। যা এই মুহূর্তে দীর্ঘমেয়াদি গড় ৭৩ শতাংশের নিরিখে ৬৩ শতাংশ) লক্ষণীয় হ্রাস। এই সব কারণে নতুন বেসরকারি বিনিয়োগের উপযোগী সময় পেরিয়ে যায়। সরকারি বিনিয়োগ হয়তো শূন্যস্থান পূরণ করতে পারত। কিন্তু তা হত সীমিত। যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঘাটতি এবং গণ-ঋণের তরতরিয়ে উঠে আসা স্তর।

সব কিছু মাথায় রেখে বলা যায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে তার নৈমিত্তিক চরিত্র বজায় রেখে বাজার তার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পেরেছে কিনা সন্দেহ আছে। ভারতীয় বাজার যে এই মুহূর্তে অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক ব্যয়বহুল, এমন একটি ধারনা গড়ে উঠেছে। এই পরিচিতি আবার অর্থনীতির গতিজাড্যকে শ্লথ করে ফেলেছে। এ কথা মনে হতে পারে যে, নতুন বিক্রমাব্দ এমন একটি সময় হয়ে দাঁড়াবে, যেখানে হয় বাজার নিজেকে শুধরে নিতে পারবে। অথবা অন্তত পক্ষে বিগত বছরগুলির অতিমাত্রিকতাকে ছাপিয়ে যেতে সমর্থ হবে।

তা হলে লগ্নিকারীদের সামনে কোন বিকল্পগুলি উন্মুক্ত রইল? প্রধান বাজারগুলিতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা প্রদত্ত সঙ্কেত থেকে মনে হতে পারে, তারা অতিরিক্ত ‘লিকুইডিটি’-কে শুষে নিয়ে পারবে। সুদের হার শুধুমাত্র ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে। এ থেকে ঋণপত্রের (বন্ড) দামে নিম্নমুখী চাপ দেখা দেবে। এই মুহূর্তে যা ক্রেতাকে আকর্ষণ করবে না।

সোনা তার ‘জেল্লা’ হারিয়েছে এক বছর আগেই। যদিও তার আগের দু’টি বছরে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। তবু এ কথা বলা যায় যে, মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা সত্ত্বেও তা মহার্ঘই থেকে গিয়েছে। স্থাবর সম্পত্তির ব্যবসার ক্ষেত্রে দাম একটা স্থির অবস্থায় এসেছে কিন্তু অব্যবহৃত আবাসন-শেয়ারের পরিমাণ সহজতর লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মাত্র যে রাস্তাটি উন্মুক্ত রয়েছে, তা হল শেয়ার বাজারের সীমান্তবর্তী পথ। যেখানে অবস্থান করছে শিল্পে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী শক্তিগুলি (পরিবেশ বান্ধব সংস্থা, প্রযুক্তি এবং প্ল্যাটফর্ম ব্যবসা)। সেখানে খেলতে গেলে শেয়ার বাছাইয়ের জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজন অধিকতর ঝুঁকি নেওয়ার বাসনা, যা অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরই থাকে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement