কূপমণ্ডূক সমাজ। দিনগত পাপক্ষয়ের তুচ্ছতায় নিমগ্ন ছুটিপ্রিয় বঙ্গবাসী। বাঙালির প্রাণ বাঙালির মন ছোট থেকে আরও ছোট পরিসরে নিজেকে সঙ্কুচিত করে নৈরাশ্যের সাধনা করে চলেছে। রাজ্যের শিল্প সেই তিমিরে। শিক্ষার মান অধোগামী। চাকরি বা উচ্চশিক্ষার খোঁজে তরুণতরুণীদের ভিন্রাজ্যে বা বিদেশে অভিবাসন অব্যাহত। রাজনীতিতে দলতন্ত্রের দৌরাত্ম্য কুৎসিত আকার ধারণ করেছে। এই অন্ধকার দূর হোক। দলীয় রাজনীতির সঙ্কীর্ণ এবং আত্মঘাতী রেষারেষির ঊর্ধ্বে জয়ী হোক পশ্চিমবঙ্গের বৃহৎ স্বার্থ। জয় হোক দক্ষতা ও মেধার। উৎকর্ষ আর যোগ্যতার মর্যাদা দিয়ে কাজের সুযোগ তৈরি হোক, বিকশিত হোক সংস্কৃতি। ফিরে আসুক বাঙালির প্রতিষ্ঠানের সম্মান। বিরাজ করুক যথার্থ গণতন্ত্র। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরণের দাবিপত্রই হয়ে উঠুক পশ্চিমবঙ্গবাসীর ইস্তাহার।
ধর্মনিরপেক্ষতা
রাজনীতিতে ধর্মের নামে মেরুকরণের উস্কানি গোটা দেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে একটা বিরাট বিপদ। এই অশুভ প্রবণতাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা জরুরি। সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার আছে, তাকে সমাজে ও রাজনীতিতে সর্বতোভাবে রক্ষা করতে হবে। এই দায়িত্ব শাসকদের, বিরোধীদেরও।
সর্বজনীন উন্নয়ন
ধর্ম, জাতপাত, আঞ্চলিক পরিচয় ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির সমস্ত চেষ্টাকে প্রতিহত করে সকলের উন্নয়নই হোক লক্ষ্য। সকলের উন্নয়ন যাতে কেবল কথার কথা হয়ে না থাকে, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠুক সেই সাধনার কেন্দ্র। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, সার্থক কর্মসংস্থান, পরিবেশ রক্ষা, সুশাসনের প্রসার ঘটিয়ে উদার সহিষ্ণু সমন্বয়ের পথে চলুক পশ্চিমবঙ্গ।
খাদ্য নিরাপত্তা
উন্নয়নই খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। কিন্তু সেই উপায় যতক্ষণ না সব মানুষের নাগালে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যেন অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার না হয়। দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষকে দু’টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। পরে সেই আয়োজন প্রসারিত হয়। কিন্তু অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ থেকেই গিয়েছে। অন্য দিকে, গণবণ্টন ব্যবস্থাকেই আরও দুর্বল করে ফেলার অভিযোগ। অতিমারির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও গণবণ্টনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাসস্থান ও আশ্রয়
সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় কাঁচা ঘর চলে না। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় পাকা ছাদ দরকার। আমপান-এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। বাঁধ তৈরির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরি।
কর্মসংস্থান ও শিল্প
রাজ্য তথা দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের উপরে নির্ভর করছে। অথচ তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত, কারণ রাজ্যে নতুন কলকারখানার প্রসার না-হওয়ায় কাজের সুযোগ বাড়ন্ত। আমাদের জনসংখ্যার বড় অংশের গড় বয়স ৪০ বছরের নীচে। এই তরুণ প্রজন্মের উদ্যম আর সৃষ্টিশীলতার সদ্ব্যবহারের জন্য সার্থক কর্মসংস্থান দরকার, যার ভিত্তি হতে পারে ছোট ও মাঝারি শিল্প। তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাঙ্গা করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে হবে। তার জন্য উদ্যোগী হতে হবে বৃহৎ শিল্পের লগ্নি টানার জন্যও। মনে রাখতে হবে, বড় শিল্পের টানে ছোট শিল্প দ্রুত মাথা তোলে। শিল্পায়নের লক্ষ্যে বাস্তবকে মর্যাদা দিয়ে পুনর্বিবেচনা করা হোক জমি নীতিও। সামান্য কয়েক একর জমি জোগাড় করতে না-পেরে পুঁজি রাজ্যে না-আসার ধারা অব্যাহত। জমি জোগাড়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে রাজ্যের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি ও নির্দেশিকা প্রয়োজন। সিন্ডিকেট-রাজ নির্মূল করতে হবে কঠোর হাতে। আলগা করতে হবে লাল ফিতের ফাঁস। যাতে নতুন কারখানা তৈরি কিংবা ব্যবসা শুরুর ছাড়পত্র আদায়ের কাজটি সহজে সম্পন্ন হতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি
বিশ্ব জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা দ্রুত বেড়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার ঐতিহ্য কাজে লাগাতে পারলে এই সম্ভাবনা রাজ্যের পক্ষে সুবর্ণসুযোগ হয়ে উঠতে পারে। শুধু তথ্যপ্রযুক্তি নীতিই যথেষ্ট নয়, এই শিল্পে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখা জরুরি। এখনও পরিকাঠামো অত্যন্ত সীমিত। জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক করা হলেও স্থানীয় স্তরে কাজ করার মতো সংস্থার সংখ্যা নেহাত কম। এই শিল্প নিয়ে সরকারের প্রবল উদ্যোগ চাই।
কৃষি ও কৃষিনির্ভর শিল্প
কৃষিতে চাই সামগ্রিক ও সুচিন্তিত পুনর্গঠন। চাষকে লাভজনক করে তোলার জন্য এক দিকে কৃষককে বাজারে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ ও পরিকাঠামো দেওয়া দরকার। অন্য দিকে প্রয়োজন মিনিকিট, সার, সেচের জল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপকরণের সুব্যবস্থা। বাস্তব পরিস্থিতিতে তার অনেকটাই সরকারের কাজ। ফসল সংরক্ষণ, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি-বৈচিত্রে জোর দিতে হবে। তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়া জরুরি।
কৃষিপণ্য সংক্রান্ত ব্যবসা
অথচ বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ আছে। এই শিল্পের যাবতীয় উপকরণ মজুতও আছে। তবু পশ্চিমবঙ্গ এই বিষয়ে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে পারেনি। এই দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
পরিকাঠামো
শহরে, শহরতলিতে, মফস্সলে, এমনকি গ্রামেও রাস্তার উন্নতি অনেকটাই হয়েছে। গতি বেড়েছে যাতায়াতেও। কিন্তু রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজ্যের সর্বত্র সেতুর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনর্নির্মাণ। প্রায় ১০ কোটি মানুষের রাজ্যে বিমানবন্দর বলতে এখনও মূলত দমদম। এ দিকে নজর দেওয়া জরুরি। দ্রুত নতুন গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি না হলে সমুদ্রপথের বাণিজ্য কিন্তু ক্রমশ আরও বেশি করে অন্যান্য রাজ্যের দখলে চলে যাবে। রাজ্য উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের কথা প্রায়শই বলে, কিন্তু শিল্পে আকালের কারণে আসলে কম তার চাহিদাই। শিল্পায়ন চাইলে নজর দিতে হবে বিদ্যুতেও। পরিস্রুত পানীয় জলের সরবরাহে আরও উন্নতি চাই। প্রত্যেক বাড়ির দরজায় পাইপবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া থাকা উচিত অগ্রাধিকারের তালিকায়। জলের অপচয় বন্ধ করতে মিটার ব্যবস্থা বিশেষ ক্ষেত্রে চালু করা প্রয়োজন। সম্পন্ন নাগরিকদের কাছে উপযুক্ত পরিষেবার উপযুক্ত অর্থমূল্য আদায় করতে হবে। রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আর্সেনিকের সমস্যা আছে, তার মোকাবিলা অত্যন্ত জরুরি। মন দিতে হবে গুদাম, কোল্ড-চেনের মতো কৃষি পরিকাঠামো নির্মাণেও।
স্বাস্থ্য
রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ কোনও সময়েই বেশি নয়। বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ এখন আরও প্রসারিত। দরকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের কাছে পরিষেবার যথাযথ মূল্য নেওয়া চাই। প্রতি জেলায় রোগ-মানচিত্র তৈরি একান্ত আবশ্যক। রেফারাল ব্যবস্থা এ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার বড় অসুখ। রোগীকে শহরে পাঠানোর ‘রোগ’ সারাতে সুষ্ঠু সরকারি নীতি এবং জেলায়জেলায় উন্নত মানের হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। হাল ফেরাতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। অগ্রাধিকার দিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যাতেও। চিকিৎসা পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যায় দক্ষ চিকিৎসক এবং নার্সের।
মারির বিরুদ্ধে লড়াই
অতিমারির মানচিত্র তৈরি আবশ্যক। সংক্রমণের প্রকৃতি, উপসর্গ, মৃত, আক্রান্তের সংখ্যা, এই সমস্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য, কোথায় ত্রুটি, তার বিশদ ব্যাখ্যা থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের দিগ্নির্দেশ পাওয়া যায়। তথ্য-পরিসংখ্যান গোপন করলে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। রোগ এবং নিরাময় সংক্রান্ত গবেষণায় আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। করোনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর মতো প্রতিষ্ঠানের খোলনলচে বদলে সেগুলিকে আরও সক্রিয় করা প্রয়োজন। পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো দরকার। বছর জুড়ে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিধি মেনে চলার জন্য আরও কার্যকর সরকারি প্রচারের প্রয়োজন।
শিক্ষা
শিক্ষায় অগ্রাধিকার জরুরি। সর্বজনীন শিক্ষাকে আরও প্রসারিত করতে হবে। শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে ঠিকমতো পরিচালনা করতে হবে, শিক্ষক বাড়াতে হবে। স্কুলে ভর্তির হার আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষার গুণমান অনেক বাড়ানো দরকার। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেপরোয়া, এই অবস্থার অবসান দরকার। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন করা দরকার। যাতে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বড় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে হবে।
অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়ন, জনজাতির অধিকার
তফসিলি জাতি ও জনজাতি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, অন্যান্য অনগ্রসরদের যথার্থ অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য দরকার সার্বিক পরিকল্পনা, সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প, ‘পাইয়ে দেওয়া’র ভোটব্যাঙ্কমুখী কৌশল নয়। গুরুত্ব দিতে হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগকে। বিভিন্ন জনজাতি, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের পরিসর ছেড়ে রাখতে হবে। উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল বা সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের জন্যও কাজের ক্ষেত্র ঠিক করে তাদের দিশা দেখাতে হবে। পাহাড়ে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে সর্বাধিক স্বশাসনই সমস্যা সমাধানের সুপন্থা।
পরিবেশ
এ রাজ্যে রাজনৈতিক পরিসরে বা ক্ষমতার অলিন্দে পরিবেশের প্রশ্ন বরাবর উপেক্ষিত। জলাভূমি সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, নদীভাঙন রোধ— এ সব প্রশ্নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। জলাভূমি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যে ভাবে স্বীকৃত বিধিকেও জলাঞ্জলি দেওয়া হয়, তা লজ্জাকর। ক্ষতিকরও। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার মতো পরিবেশ রক্ষার নানা বিষয়ে প্রচার ও নীতি শক্তিশালী হওয়া চাই। সুন্দরবনের বিপন্ন পরিবেশ ও অর্থনীতিকে রক্ষার সুষ্ঠু প্রকল্প জরুরি।
আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক হিংসা
রাজনৈতিক হানাহানিতে পশ্চিমবঙ্গ দেশে প্রথম সারিতে। এই সংস্কৃতি থেকে মুক্তি প্রয়োজন। যখনই বিরোধী মত বা সংগঠন শক্তিশালী হয়, হিংসা তখন আরও বাড়ে। এর সঙ্গেই জড়িত আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন। পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনৈতিক খবরদারি থেকে মুক্ত করা চাই।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ চাই। পঞ্চায়েত-পুরসভার মাধ্যমে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অতীতের মতো রাজ্য অর্থ কমিশন বসানো দরকার। গ্রামসভা থেকে ওয়ার্ড-সভায় মানুষের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত, সময়মাফিক নির্বাচন দরকার। মেয়াদ-উত্তীর্ণ বোর্ডে প্রশাসক বসিয়ে চালিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী।
মেয়েদের নিরাপত্তা
রাজ্য জুড়ে মেয়েদের নিরাপত্তা চাই। যে কোনও জায়গায়, যে কোনও সময়ে স্বচ্ছন্দে, অনায়াসে এবং নির্ভয়ে চলাফেরার স্বাধীনতা তাঁদের বুনিয়াদি অধিকার। মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার সঙ্গে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা করা চাই। এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের অসহযোগিতার মনোভাব কঠোর ভাবে দূর করা চাই। মহিলাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা চাই রাজনীতির ভাষায়, রাজনীতিকদের আচরণেও।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রে অন্যতম প্রধান অধিকার। তা যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ করা দরকার। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত।
তথ্যের সুরক্ষা
বিভিন্ন পরিষেবার জন্য নাগরিকদের ব্যক্তিগত এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সরকারের কাছে নথিবদ্ধ থাকছে। কিন্তু তা সুরক্ষিত থাকা জরুরি। তা যেন রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা না হয়, সেটিও প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
গণতান্ত্রিক পরিসর
বিরোধীদের কাজের ক্ষেত্র ও অধিকার যেন প্রসারিত হতে পারে— গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত পূরণে বিরোধীদের মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। বিরোধীদের কণ্ঠরোধের প্রবণতা বন্ধ হওয়া চাই। অবাধে মত দেওয়ার অধিকার চাই নির্বাচনে। সরকার যে দলেরই হোক, তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘মিথ্যা মামলা’ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
আহ্বান
অতিমারির আবহে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ফলাফল যেন শুধু আসনের হিসেব আর জয়পরাজয়ের খতিয়ান হয়ে না থাকে। যথার্থ উন্নয়নের উদ্যোগে, উৎকর্ষের সাধনায়, সামাজিক সম্প্রীতিতে ক্ষুদ্র বাঙালি আবার বৃহৎ বাঙালি হোক।