Online Classes

সময় ছিল, কাজে লাগল না

এই পরিস্থিতিতে বিশেষত স্কুলশিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন আঙ্গিকে ডিজিটাল এডুকেশন ও ওয়েব-মিডিয়েটেড লার্নিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

Advertisement

শান্তনু দে

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ০৫:২৩
Share:

করোনার প্রকোপে গত বছর শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের বিচরণ বন্ধ হল রাতারাতি। দেশ জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য শিক্ষা পর্ষদের অধীনে তখন মূল্যায়নের মরসুম চলছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অবৈজ্ঞানিক ভাবে সম্পাদিত মূল্যায়নকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হল। উচ্চ প্রাথমিক স্তরে আজও পঠন-পাঠন স্তব্ধ, মূল্যায়ন ছাড়াই শ্রেণি উত্তরণ ঘটেছে সবার। দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও অর্থনীতির দোহাই দিয়ে চালু হয়েছিল সব, শুধু ব্রাত্য ছিল শিক্ষা। অজুহাত সুরক্ষা, যদিও গ্রামীণ ও শহরতলির স্কুলে প্রতি মাসে মিড-ডে মিল নিতে এসেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরাই।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে বিশেষত স্কুলশিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন আঙ্গিকে ডিজিটাল এডুকেশন ও ওয়েব-মিডিয়েটেড লার্নিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ২০২১-এ ই-লার্নিং উপভোক্তা সংখ্যা পৌঁছয় ৯৬ লক্ষে, পাশাপাশি ভিডিয়ো-মিডিয়েটেড লার্নিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বাড়ে ৭৫%। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এডুস্যাট-এর মাধ্যমে ফ্রি টু এয়ার চ্যানেল মারফত নবম থেকে দ্বাদশ শিক্ষার্থীদের জন্য স্বয়ংপ্রভ চ্যানেলগুলির ব্যবহার অন্য উচ্চতায় পৌঁছয়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গৃহীত হয় মোবাইল, ভয়েস মিডিয়েটেড লার্নিং, অনলাইন লার্নিং-এর নানা কর্মসূচি। দেরিতে হলেও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার পয়সা দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, ই-লার্নিং মেটিরিয়ালগুলির সঙ্গে ৮০% শিক্ষার্থীর মনের যোগাযোগ নেই, ৯০% শিক্ষার্থীর ই-লার্নিং মেটিরিয়ালের সাপেক্ষে মূল্যায়ন সম্ভব হচ্ছে না কারণ ৫০% শিক্ষার্থী তাদের হোমওয়ার্ক করতে পারছে না এবং ৬০% পড়ুয়া শিক্ষকের একঘেয়ে ক্লাস শুনতে চাইছে না। গ্রামীণ ভারতে সর্বত্র মোবাইল লার্নিং, কম্পিউটার মিডিয়েটেড লার্নিং পৌঁছতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান ও সামর্থ্য যাচাইয়ের কৌশল অন্য রকম হয়ে পড়ায় প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা এর সুবিধা নিতে পারছে না। বেসরকারি ভাবে যে লার্নিং অ্যাপগুলির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা দফতর থেকে তার গুণগত মান যাচাইয়ের পরিসর এখনও তৈরি হয়নি। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছে না।

এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়েছে। গত বছর একের পর এক মূল্যায়ন যখন বন্ধ করতে হয়েছিল, তখনই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পর্ষদগুলির পরবর্তী মূল্যায়ন ব্যবস্থা বিষয়ে পরিকল্পনা দরকার ছিল। উচিত ছিল প্রযুক্তির সহায়তায় বিষয়বস্তু-কেন্দ্রিক অফলাইন ও অনলাইন কর্মপত্র তৈরি করা। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা কর্মপত্র পূরণের মধ্য দিয়ে শেখার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করতে পারত। অনলাইন ব্যবস্থার সুযোগহীন যারা, তারা সপ্তাহান্তে এক দিন স্কুলে কর্মপত্র সংগ্রহ করে তা পোর্টালে আপলোড করতে পারত। পাশাপাশি ভার্চুয়াল ল্যাবরেটরি, আপডেটেড অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ই-জার্নাল রাইটিং, স্টোরি রাইটিং, অনলাইন কুইজ়, পাজ়ল-এর জন্য মোবাইল লার্নিং, স্বয়ংপ্রভা চ্যানেল ও রাজ্য স্তরের সংবাদ চ্যানেলগুলিকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ই-পোর্টফোলিয়ো তৈরি করা যেত। গ্রামীণ স্কুলগুলিতে স্থানীয় শিক্ষকেরা এ কাজ গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনায়াসে করে দিতে পারতেন। তবে এ জন্য দরকার একটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট পোর্টাল। ২০১২-১৩ সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দু’টি প্রকল্পে কয়েকটি রাজ্য এই পোর্টাল তৈরির কাজ শুরু করেছিল। রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট পোর্টাল দেখার মতো। এ রাজ্যেও গত তিন-চার বছর ধরে এই পোর্টাল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু সেখানে পাঠদান ও পড়ুয়ার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামগ্রিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই পোর্টালের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে পারলে শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক মূল্যায়ন সহজ হত।

Advertisement

অভিভাবকদের বক্তব্য, লকডাউনে শিশুরা বই পড়তে চাইছে না। সরকার চাইলে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করতে পারে। শিশুরা কার্টুন ভালবাসে, বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, ইতিহাসের মতো বিষয়গুলি কার্টুন ও কুইজ়ে শেখানো যেত। বিজ্ঞান ও গণিতের বিভিন্ন ধারণা ব্যবহার করে কুইজ়, ম্যাজিক, ধাঁধার অনুষ্ঠান বানিয়ে রেডিয়ো, টিভির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছনো যেত। সঙ্গে ই-ফিডব্যাক লুপ জুড়ে দিতে পারলেই হয়ে যেত মূল্যায়ন। বিভিন্ন চ্যানেলের ক্লাস পড়ুয়ারা শুনতে চাইছে না, শিক্ষা দফতর চাইলে নেট সংযোগহীন মোবাইলে পডকাস্টের মাধ্যমে অডিয়ো লেসন তাদের কাছে পৌঁছতে পারত। সেগুলি শুনে তারা বিভিন্ন অপশন থেকে বেছে উত্তর দিতে পারত, মূল্যায়নও এগোত।

অতিমারি ভবিষ্যতেও শিক্ষাক্ষেত্র বিঘ্নিত করতে পারে। তাই সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমান্তরাল ই-শিক্ষাব্যবস্থা গঠন খুব প্রয়োজন। না হলে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিসর থেকে বহু দূরে চলে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement