Custodial death in Bogtui Case

সিবিআইকে অনেক চাপের মুখে কাজ করতে হচ্ছে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে

সংস্থার প্রাক্তন কর্মী হিসাবে বুঝতে পারছি, বগটুইকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা অসম্ভব পরিশ্রম করছিলেন।

Advertisement

উপেন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:২৪
Share:

লালনের পরিবার অভিযোগ করছে, ওঁকে খুন করা হয়েছে! মূল অভিযুক্তের পরিবার এমন অভিযোগই করবে। সেটাই স্বাভাবিক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রামপুরহাটে সিবিআইয়ের একটি অস্থায়ী শিবির রয়েছে। সেখানকার শৌচাগার থেকেই লালন শেখের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। লালন ছিলেন বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। এমন এক জন অভিযুক্তের দেহ যদি সিবিআই অফিস থেকেই পাওয়া যায়, তবে তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তৈরি হবে। প্রশ্ন উঠবে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। উঠছেও।

Advertisement

বিষয়টি অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষ। লালনের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে না দেখা পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে কিছুই বোঝা যাবে না। আমি দীর্ঘ দিন এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় কাজ করেছি। সংস্থার অতিরিক্ত অধিকর্তা পদে কর্মরত থাকতে থাকতে অবসর নিয়েছি। সিবিআই আধিকারিকেরা কতটা চাপের মুখে কাজ করেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তা জানি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আনন্দবাজার অনলাইনে এই লেখা লিখতে চাইছি।

প্রথমত, মনে রাখতে হবে, লালনের দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেটি সিবিআইয়ের অফিস নয়। ‘অস্থায়ী শিবির’। এই শিবির যে সমস্ত জায়গায় হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিবিরের জন্য ‘আদর্শ’ নয়। সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের কখন কোথায় কোন মামলার তদন্তে যেতে হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। দেশের সর্বত্র ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়। কাজেই কোথায় কখন শিবির বানাতে হবে, তা ঠিক থাকবে কী করে! সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছে জায়গা চাওয়া হয়। তারা যে ব্যবস্থা করে দেয়, তাতেই চালাতে হয়। রাজ্যগুলিরও কোনও দোষ নেই। তারাই বা সেরা জায়গা পাবে কোথায়! আর অত দ্রুততার সঙ্গে শিবিরকে ‘অফিস’ বানানোর মতো পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা সম্ভবও নয়। সেই দাবি অন্যায্যও বটে! রাজ্যও সেই সুযোগসুবিধা করে দিতে পারে না। আবার দিল্লি বা অন্য রাজ্য বা কলকাতা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়া সিবিআই আধিকারিকেরাও সেটা করে নিতে পারেন না। ফলে পরিকাঠামোর অভাব এই সব শিবিরগুলিতে থেকেই যায়। থাকতে বাধ্য।

Advertisement

মনে রাখতে হবে, লালনের দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেটি সিবিআইয়ের অফিস নয়। ‘অস্থায়ী শিবির’। ছবি: পিটিআই।

অস্থায়ী এই শিবিরে থেকেই সিবিআই আধিকারিকদের তদন্তের কাজ করতে হয়। খাওয়াদাওয়া থেকে সব কিছুর ব্যবস্থা সেখানেই। সারা দিন ঘুরে ঘুরে তদন্ত। যেখানে থাকছেন তার পাশাপাশি অন্য রাজ্যেও তদন্তের জন্য যেতে হতে পারে। আদালত থেকে পুলিশ— সবই করতে হয়। ফলে এই ধরনের তদন্ত প্রক্রিয়ায় সব সময়েই আধিকারিকের সংখ্যা কম হয়। মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী আধিকারিকের সংখ্যা ঠিক করা হলেও তা সব সময়েই অপ্রতুল হয়। যেমন বগটুইকাণ্ডেরই দু’টি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। একটি সেখানকার উপপ্রধান ভাদু শেখের খুনের মামলা। অন্যটি তাঁকে খুনের ঘটনার ‘প্রতিক্রিয়ায়’ অগ্নিসংযোগ এবং একাধিক প্রাণহানির ঘটনার তদন্ত। এই দুটো মামলায় যত সংখ্যক গোয়েন্দার প্রয়োজন, সেটা এ ক্ষেত্রে ছিল না। অন্য কোনও ক্ষেত্রেও যে সম্ভব হত, তা-ও নয়।

সংস্থার প্রাক্তন কর্মী হিসাবে বুঝতে পারছি, বগটুইকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়ায় থাকা আধিকারিকেরা অসম্ভব পরিশ্রম করছিলেন। সেটা করা ছাড়া উপায়ও নেই। একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, ওই আধিকারিকদের মানসিক চাপও ছিল প্রচণ্ড। কারণ, এই তদন্তভার তাদের হাতে কিন্তু রাজ্য সরকার দেয়নি। সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেও তদন্তভার নেয়নি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্য কোনও ‘প্রতিকূলতা’ তৈরি করেনি নিশ্চিত! কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, রাজ্য সরকার চায়নি তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাক! সরকার পক্ষ তো সমালোচনা করবেই। আর তার একটা অভিঘাত পড়ে আধিকারিকদের উপরে। মনের উপর চাপ তৈরি হয়।

চাপের আরও কারণ আছে। যে ভাদু শেখ খুন হয়েছিলেন, তিনি শাসকদলের উপপ্রধান। তিনি খুন হওয়ার পর যে ‘প্রতিক্রিয়া’ তৈরি হয়েছিল, তাতে অন্তত ১০ জন পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে কত জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কী ভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। রাজ্য সরকার কিন্তু সেটা ঠেকাতে পারেনি। প্রাথমিক তদন্তে সেটা প্রমাণিত। এমন আগুন লাগিয়ে ‘পুড়িয়ে মারা’র মতো ঘটনা কয়েক দশকের মধ্যে ঘটেছে বলে মনে পড়ে না আমাদের!

রাজ্য সরকার চায়নি তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাক! সরকার পক্ষ তো সমালোচনা করবেই। তার একটা অভিঘাত পড়ে আধিকারিকদের উপরে। ছবি: পিটিআই।

ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেলেন শাসকদলের ওই জেলার শীর্ষ নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্যও করলেন। ‘চার্জশিট’ কী ভাবে তৈরি করতে হবে, প্রকাশ্যে তার ‘রূপরেখা’ও তৈরি করে দিলেন। এর পরেই হাই কোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা যখন বগটুই পৌঁছলেন, তখন তাঁরা দেখলেন, এলাকাটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি অপরাধপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হয়ে গিয়েছে। যিনি খুন হয়েছেন, তিনি শাসকদলের লোক ছিলেন। এমনকি, স্থানীয় প্রশাসনেরও শরিক ছিলেন তিনি। যাঁদের বিরুদ্ধে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ, তাঁরাও। বাংলার কোনও সাধারণ গ্রামে কিন্তু তদন্ত করতে যাননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁরা যেখানে তদন্ত করতে গিয়েছিলেন, সেখানে বিবদমান দু’পক্ষই অত্যন্ত প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর এবং অবস্থাপন্ন। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা পর্যন্ত রয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সেখানে পৌঁছেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অপরাধের একটা গুহায় পৌঁছলেন তাঁরা। চাপ আরও মারাত্মক!

সেই চাপের মধ্যে তদন্ত করাটা খুব কঠিন। পুরুলিয়ায় তপন কান্দুর খুনের মামলায় সিবিআই খুব ভাল তদন্ত করেছে। বগটুইতেও করছিল। দু’টি মামলাতেই চার্জশিট হয়েছে। গোয়েন্দাদের পারফরম্যান্সও খুবই ভাল। এত দিনে কিন্তু এক বারের জন্যও শোনা যায়নি, সিবিআই ঠিক মতো কাজ করছে না!

এ বার আসি লালনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার প্রসঙ্গে। আবারও বলছি, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তদন্ত প্রক্রিয়াতেও আমি নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে যা জানতে পারছি এবং কাজের অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝছি— লালন সিবিআই হেফাজতে ছিলেন। অস্থায়ী শিবিরে তাঁকে রাখা হয়েছিল। সেখানে ‘অ্যাডহক লক আপ’ও রয়েছে। মনে রাখতে হবে, সেই ‘হাজত’ কিন্তু লালবাজারের সেন্ট্রাল লক আপের মতো নয়। সম্ভবই নয়। সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সেই হাজতে বগটুইয়ের মতো ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল অভিযুক্ত রয়েছেন। ধরা যাক, তিনি সে দিন বিকেলে বলেছিলেন, শৌচাগারে যাবেন। হয়তো স্নানই করবেন। তাঁকে তো শৌচাগারে যেতে দিতে হবে। অনুমতিও দিতে হবে। দু’জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তাঁরা ওঁকে শৌচালয় পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। বাইরে দাঁড়িয়েও থাকলেন। কেউ স্নানে গেলে গা মোছার জন্য কিছু একটা জিনিসও দিতে হয়। জল গায়ে তো কেউ থাকতে পারেন না। কোনও একটা কাপড় জাতীয় কিছু দিতে হয়েছিল নিশ্চয়ই। যা জানতে পেরেছি, এর কিছু ক্ষণ পর সাড়াশব্দ না পেয়ে শৌচাগারে ঢুকে দেখা যায় লালনের দেহ ঝুলছে।

এ ক্ষেত্রে ওই দুই নিরাপত্তারক্ষীই ‘প্রত্যক্ষদর্শী’। তাঁদের বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কারও কথা শোনার কোনও প্রশ্নই নেই। এবং আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে অন্য লোকের জড়িয়ে থাকারও প্রশ্ন নেই।

এ বার লালনের পরিবার অভিযোগ করছে, ওঁকে খুন করা হয়েছে! মূল অভিযুক্তের পরিবার এমন অভিযোগই করবে। সেটাই স্বাভাবিক। তিন দিন আগে কিন্তু ওঁরা এমন কোনও কথা বলেননি। কোনও অভিযোগও করেননি। অনেক লোককেই ওই দুই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কারও পরিবারের তরফেই এমন অভিযোগ করা হয়নি।

এ সব তদন্তের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা আছে। সিবিআই নিজের মতো করে তদন্ত করবে লালনের মৃত্যুর ঘটনার। কিন্তু শুধু সেটা করলে হবে না। বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যের গোয়েন্দা দফতরও তদন্ত করবে। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কিন্তু কারও অভিযোগের ভিত্তিতে হবে না। তা হলে বিচারবিভাগীয় তদন্তের কোনও মানেও হয় না!

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক। আমি তখন ওড়িশায়। সিবিআই হেফাজতে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল। দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পর অন্ত্যেষ্টিও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওই অভিযুক্তের স্ত্রী তার পরে একটি চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে। তাঁর মনে হয়েছিল, সিবিআই হেফাজতে খুন হয়েছিলেন তাঁর স্বামী। প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ের অধিকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিভাগীয় তদন্তের। অন্ততপক্ষে এক জন যুগ্ম অধিকর্তা পদমর্যাদার আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আমি তখন ভুবনেশ্বরে। সেই দায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। অধিকর্তাকে বললাম, এতে কি নিরপেক্ষতা থাকবে? বরং বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। উনি শোনেননি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমি বিভাগীয় তদন্ত করি। রিপোর্ট জমা দিই। সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। আমি রিপোর্টে লিখেছিলাম, ‘এই তদন্তে আমি সন্তুষ্ট নই’। আসলে ওই মৃত্যুর ক্ষেত্রে সিবিআই আধিকারিকের ‘গাফিলতি’ ছিল। তবে কোনও ভাবেই তা ‘ইচ্ছাকৃত’ নয়।

আসলে এ সব ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, কোন পরিস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছে। লালনকে পরের দিনই আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল। কাজেই আদালতে যেতে হয়েছিল দুই আধিকারিককে। আইনের মধ্যে থেকেই এক এক জন আধিকারিক নিজের স্টাইলে তদন্ত করেন। এ ক্ষেত্রেও নিশ্চিত সেটাই হচ্ছিল। কারণ, প্রত্যেক আধিকারিকের নিজস্ব তদন্ত পদ্ধতি আছে। আইনকানুনের মধ্যে থেকেই সেটা হয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে গ্রেফতারের বিপক্ষে। ওটা শেষ অস্ত্র। কারণ, গ্রেফতার করলেই অভিযুক্তকে নিয়ে নিয়মিত আদালতে দৌড়তে হয়। সে ক্ষেত্রে আধিকারিকের অপচয় হয়। কারণ ২-৩ জন আধিকারিক ওই কাজেই লাগে। তদন্ত করবেন, দৌড়বেন, জিজ্ঞাসাবাদ করবেন— এ সব একসঙ্গে করা খুব মুশকিল। কাজেই ওই দিন ঠিক কী হয়েছিল, পরিস্থিতি ঠিক কী ছিল, সেটাও দেখতে হবে।

এই লেখায় আরও একটা বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন। লালনের বিরুদ্ধে যা যা প্রমাণ ছিল, তাতে উনি হয়তো ধরে নিয়েছিলেন, বিচারে ওঁর ফাঁসি হতে পারে। সেই জায়গা থেকে হয়তো তিনিও খুব মানসিক চাপে ছিলেন। সেখান থেকে আত্মহত্যার একটা প্রবণতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আধিকারিকদের সেই দিকটাও মাথায় রাখতে হত। আসলে, ওই যে বললাম, সকলেই পরিস্থিতির শিকার!

(লেখক সিবিআইয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী। মতামত নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement