সম্পাদকীয় ২

অতঃপর

দুই বৎসরে মোট দুই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূলধন সংযোজিত হইবে। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন দেশের অর্থনৈতিক উপদেষ্টার কুর্সিতে বসা ইস্তক এই পরামর্শটি দিয়া চলিতেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

অভিমন্যু চক্রব্যুহে ঢুকিয়াছিলেন। কিন্তু, বাহির হইতে পারেন নাই। অরুণ জেটলি ঈষৎ হাসিয়া বলিতে পারেন, বেচারার কোনও কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির সৌভাগ্য, তাহাদের জন্য রাজকোষ আছে। অতএব, অনাদায়ী ঋণের ধাক্কায় কাবু ব্যাংকগুলির জন্য নূতন মূলধনের ব্যবস্থা হইল। দুই বৎসরে মোট দুই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূলধন সংযোজিত হইবে। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন দেশের অর্থনৈতিক উপদেষ্টার কুর্সিতে বসা ইস্তক এই পরামর্শটি দিয়া চলিতেছেন। মূলধন সংযোজনের যুক্তি সরল— রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হইতে ধার লইয়া শোধ করে নাই, এমন সংস্থাগুলির সিংহভাগের পক্ষেই এই মুহূর্তে ঋণ শোধ করা সম্ভব নহে। এ দিকে, ব্যাংকগুলিও আর কাহাকে নূতন ধার দিতে ভীত— যদি সে টাকাও মার যায়! গত ষাট বৎসরের মধ্যে ব্যাংকঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির হার এই এপ্রিলেই সর্বনিম্ন ছিল। পাঁচ শতাংশেরও কম। ফলে, বিনিয়োগের অভাবে অর্থনীতি ঝিমাইয়া পড়িয়াছে। ইহাই অনাদায়ী ঋণের চক্রব্যুহ। এই ব্যুহ ভেদ করিবার ক্ষমতা আছে কেন্দ্রীয় সরকারের। মূলধনী খাতে নূতন বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য হইল ব্যাংকগুলিকে ফের ঋণ প্রদানে উৎসাহী করা। অর্থনীতিতে টাকা ঢুকিলে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়িবে। তাহার সুফল কী, প্রায় আশি বৎসর পূর্বে জন মেনার্ড কেইনস সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়াছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির যে অবস্থা দাঁড়াইয়াছিল, তাহাতে নূতন মূলধন না জোগাইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের বস্তুত আর কোনও উপায় ছিল না।

Advertisement

কিন্তু, এই জোগান মারাত্মক সমস্যা তৈরি করিতে পারে— মরাল হ্যাজার্ড। ব্যাংকগুলি যদি জানে, তাহাদের অপরিণামদর্শিতা সরকার ঢাকিয়া দিবে, তবে অবাঞ্ছিত ঝুঁকি লইবার প্রবণতা বাড়িবে বই কমিবে না। বাজে ঋণের ফলে অনাদায়ী সম্পদের পরিমাণ আকাশ ছুঁইলে যদি সরকার টাকার ঝুলি লইয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে, তবে ব্যাংকগুলি বিজয় মাল্যদের ঋণ দিবে না কেন? অতএব, নূতন মূলধনের সহিত কিছু কঠোর শর্তও ব্যাংকগুলির সদর দফতরে পাঠানো বিধেয়। ঋণ মার গেলে তাহার দায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেই লইতে হইবে এবং তাহার জন্য শাস্তি বরাদ্দ হইবে, কথাটি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলিয়া দেওয়া প্রয়োজন।

নূতন মূলধন জোগানো যেমন প্রয়োজন ছিল, তেমনই জরুরি ব্যাংকিং ক্ষেত্রের সংস্কার। ব্যাংকে সরকারের অংশীদারি কমাইয়া দিলে কি বাজে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা কমিবে? এই প্রশ্নের উত্তরে একটিই কথা বলিবার— অংশীদারিত্বই যদি সরকারি হস্তক্ষেপের পূর্বশর্ত হইত, তবে আজ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও অনাদায়ী ঋণের বোঝায় বিপর্যস্ত হইত না। আসল কাজ হইল ঋণ পরিশোধ করিতে নারাজ খাতকদের শায়েস্তা করা। তাঁহাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। দেউলিয়া বিধি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ব্যাংকের কাজটি পূর্বের তুলনায় সহজতর হইয়াছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করিবার জন্য ব্যাংকের বোর্ডে সদস্য নিয়োগ করিবার পদ্ধতিটিকেও আরও বেশি স্পষ্ট নিয়মাবদ্ধ করা বিধেয়। নূতন মূলধন আসিয়াছে, ভাল কথা। কিন্তু ভুলিলে চলিবে না, মূলধনের অভাব রোগের কারণ নহে, লক্ষণমাত্র। তাহাদের আসল রোগ অকুশলতা, এবং বিবেচনাবোধের অভাব। এই দুই ব্যাধি দূর না হইলে মূলধনের জোগানে লাভ হইবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement