(ছবি:শাটারস্টক)
আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে বছরের একটি বিশেষ দিনকে জনপরিসরে সঙ্গীত দিবস হিসাবে পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। দ্রুত সেই প্রথাটি ভুবন জুড়িয়া ছড়াইয়া পড়ে, শতাধিক দেশ তাহাতে যোগ দেয়। অর্থাৎ ইহার বয়স এখনও চল্লিশের কোঠায় পৌঁছায় নাই। এত কম সময়ে এমন আন্তর্জাতিক হইয়া উঠিবার রহস্যটি কী, তাহা অবশ্য ব্যাখ্যা করিবার প্রয়োজন নাই। সঙ্গীত ব্যাপারটি এমনই। দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম, ভাষা— কোনও বিশেষত্বকেই সে অস্বীকার করে না, সমস্ত বিশেষত্বকেই আপনার মধ্যে ধারণ করিয়া সে সকল রকমের সীমান্ত পার হইয়া আবিশ্ব রসিকজনের মরমে সঞ্চারিত হয়। এই সর্বজনীন আবেদনে কোনও অলৌকিক অভেদ কল্পনা করিবার যুক্তি নাই, প্রয়োজনও নাই। বিভিন্ন সঙ্গীত আপন বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। কথানির্ভর গানের ক্ষেত্রে তো ভাষার নিজস্ব স্বাতন্ত্র থাকেই, এবং সেই স্বতন্ত্রতা রসাস্বাদনের পথে বাধাও সৃষ্টি করিতে পারে। কিন্তু সঙ্গীত যেখানে কথাবিহীন, কিংবা কথা যেখানে তুলনায় গৌণ— যেমন অনেক ধরনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে— সেখানেও একটি দেশ বা অঞ্চলের সঙ্গীতের মর্ম উপলব্ধি করা অনেক সময়েই অন্যের পক্ষে সহজ হয় না। আবার ভাষা বা স্থানিকতার দূরত্ব না থাকিলেও বিভিন্ন ধরনের বা গোত্রের সঙ্গীতের রস এতটাই স্বতন্ত্র হইতে পারে যে তাহাদের উপভোক্তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাই থাকিয়া যান। কিন্তু এই সব বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম করিয়া জাগিয়া থাকে এক সর্বজনীন সাঙ্গীতিক অনুভূতি, যাহা, অলৌকিক না হইলেও, অবর্ণনীয়। তাহাই সঙ্গীতের আপন ভুবন। সেই ভুবনে যে যাহার মতো করিয়া সঙ্গীতকে উপভোগ করে। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের ধারণায় এই সর্বজনীন উপভোগেরই স্বীকৃতি।
কেবল উপভোগ? এই দিনটি কি একই সঙ্গে বিশ্বচেতনার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লইতে পারে না? সেই সম্ভাবনা কি বাস্তবে যথেষ্ট পূর্ণ হইয়াছে? এই প্রশ্নের উত্তরে যদি কেহ বলেন, ‘অবশ্যই হইয়াছে’, তবে তাহা এই লগ্নটিতে যথাযথ শুনাইবে, কিন্তু তাহাতে সম্ভাবনা পূর্ণ হইবে না। সত্য ইহাই যে, দুনিয়ার হাজারখানেক শহরে প্রতি বছর এই দিন জনপরিসরে বিবিধ সঙ্গীতের আসর বসে, বহু নাগরিক তাহাতে শিল্পী তথা শ্রোতা হিসাবে যোগ দেন, কিন্তু সেই অনুষ্ঠানগুলি সচরাচর স্থানীয় সংস্কৃতির অনুশীলনেই সীমিত থাকে। এই স্থানীয়তায় নিন্দা বা সমালোচনার কিছু নাই, বরং এমন একটি উপলক্ষে যে যাহার নিজস্ব সঙ্গীত-সংস্কৃতির অনুশীলন করিবে, সাধারণ ভাবে তাহাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতার একটি অ-সাধারণ অর্থ নির্মাণের সুযোগ আছে। সঙ্গীতের স্ব-ভাবে যে সীমান্ত-অতিক্রমী সর্বজনীনতার সম্ভাবনা নিহিত, এই অনুষ্ঠান তাহাকে চরিতার্থ করিবার একটি প্রকরণ হইয়া উঠিতে পারে। বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন সমাজের, বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গীতের পারস্পরিক বিনিময়ের মধ্য দিয়া বিশ্ব সঙ্গীত দিবস সত্য অর্থে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবসে পরিণত হইতে পারে। তেমন উদ্যোগ যে হয় না তাহা বলা যাইবে না। তবে আরও অনেক বেশি হইতে পারে।
স্পষ্টতই, সেই কাজ বাহির হইতে, উপর হইতে নির্দেশ দিয়া করাইবার নহে, সমাজের আন্তরিক তাগিদেই গড়িয়া উঠিতে পারে বিনিময়ের সংস্কৃতি। তেমন তাগিদের অজস্র নিদর্শন বিশ্বের ইতিহাসে ছড়াইয়া আছে। এক দেশের সঙ্গীত অন্য দেশের সঙ্গীতের মধ্যে বহু ভাবে বহু রূপে বিলগ্ন হইয়াছে। শুধুমাত্র বাংলা গানের পরিসরেই— রবীন্দ্রনাথ হইতে, বস্তুত তাঁহারও আগে হইতে শুরু করিয়া এই মুহূর্ত অবধি— কত দেশের কত সুরের ধারা আসিয়া ক্রমাগত মিলিয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। এবং, বিশেষ ভাবে লক্ষ করিবার বিষয়, সেই মিলন যেখানে সার্থক হইয়াছে, সেখানে তাহার পিছনে ছিল সৃষ্টিসুখের অনাবিল আনন্দ, সেই আনন্দ কোনও ধরাবাঁধা ছক বা অনুশাসন মানে নাই। সলিল চৌধুরী তাঁহার বিরহসঙ্গীতে অবলীলাক্রমে পূর্ব ইউরোপের ফৌজি সুরের আদলে সুর করিয়াছেন এবং সেই গান এক অসামান্য সৃষ্টি রূপে স্বীকৃত ও বন্দিত হইয়াছে। আবার, পরাধীন ভারতের দেশাত্মবোধক গানের একটি বিরাট অংশ যথার্থ সৃষ্টিশীলতার অলজ্জ প্রেরণায় পাশ্চাত্য সুরে বাঁধা হইয়াছে, তাহাতে জাতীয়তার বোধ এতটুকুও অসম্মানিত হয় নাই। সৃষ্টির ধর্মই এই আন্তর্জাতিকতার একমাত্র স্বধর্ম। সেই ধর্মের স্বতঃস্ফূর্ত পালনেই বিশ্ব সঙ্গীত দিবস তাহার পরমার্থ লাভ করিতে পারে।
যৎকিঞ্চিৎ
তেলঙ্গানায় এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর নতুন যোগ-দেওয়া পুলিশকর্মীদের রুটিন ড্রিল করালেন সত্তর দশকের হিট হিন্দি গানের ছন্দে। মোবাইলে বাজিয়ে নয়, নিজে গেয়ে। মহম্মদ রফির গান, পুলিশকর্তার নামও মহম্মদ রফি! ও দিকে বাংলাদেশে কয়েক হাজার পুলিশ করোনা পজ়িটিভ, উদ্বিগ্ন উপরওয়ালারা বাহিনীকে সুস্থ রাখতে যোগাসন কপালভাতি প্রাণায়াম অভ্যেস করালেন। করোনাযুগে
পুলিশি চাকরি সহজ কথা নয়!