নিরাপত্তার স্বার্থে

সমাজ কতখানি অধঃপতিত হইলে বাসে মার্শাল নিয়োগ করিয়া সহযাত্রীদের হাত হইতে মহিলা যাত্রীদের রক্ষা করিতে হয়!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:১২
Share:

অরবিন্দ কেজরিবাল।

ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উপহার, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ হইতে রাজধানীর ভগিনীদের প্রতি। মহিলাদের সুরক্ষায় বাসে মার্শালদের সংখ্যা এক ঝটকায় অনেকখানি বৃদ্ধি করিয়া যেন এই বার্তাই দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁহার আশা, এই পদক্ষেপে মহিলা যাত্রীরা আরও স্বচ্ছন্দে এবং নির্ভয়ে বাসগুলিতে সফর করিতে পারিবেন। মেয়েদের নিরাপত্তা নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকারযোগ্য। বিশেষত খাস রাজধানীতে মেয়েদের নিরাপত্তার যে রূপ বিবর্ণ দশা, তাহাতে বাসগুলিতে মার্শালের সংখ্যাবৃদ্ধির উপযোগিতা আছে বইকি। শুধুমাত্র মার্শাল নিয়োগ নহে, মেয়েদের সুরক্ষায় সরকারের তরফ হইতে যে কোনও পদক্ষেপই স্বাগত। ২০১২ সালে নির্ভয়া-কাণ্ডের পর মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ তৎকালীন কংগ্রেস সরকারকে যথেষ্ট বিড়ম্বনার মুখে ফেলিয়াছিল। তাহার পর সাত বৎসর অতিক্রান্ত। ইতিমধ্যে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন আসিয়াছে, জনমতও গঠিত হইয়াছে। কিন্তু মেয়েদের নিরাপত্তার হাল যে বিশেষ ফিরে নাই, প্রতি দিনের সংবাদই তাহার প্রমাণ। এমতাবস্থায় সেই নিরাপত্তা প্রদানে দিল্লি সরকার যে সদর্থক কিছু ভাবিয়াছে, তাহাতে কিঞ্চিৎ আশার উদ্রেক হয়।

Advertisement

কিন্তু একই সঙ্গে চরম হতাশাও জাগে। সমাজ কতখানি অধঃপতিত হইলে বাসে মার্শাল নিয়োগ করিয়া সহযাত্রীদের হাত হইতে মহিলা যাত্রীদের রক্ষা করিতে হয়! যে কোনও সভ্য দেশের গণপরিবহণে মহিলাদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাহা মার্শালের ভয়ে নহে— সহযাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সেই দায়িত্বটি গ্রহণ করিয়া থাকেন। কিন্তু ভারতের ন্যায় দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে আইন করিতে হয়। আর স্বাচ্ছন্দ্য? তাহার অবস্থা আরও করুণ। গণপরিবহণে নির্দিষ্ট আসনটিতে বসিতে গেলেও প্রায়শই পুরুষ সহযাত্রীদের বিদ্রুপের শিকার হইতে হয় তাঁহাদের। মহিলাদের আসল জায়গাটি যে গৃহের অভ্যন্তরে, হেঁশেলের কোণে, পথে-ঘাটে-অফিসে নহে— সেই অযাচিত উপদেশ ভাসিয়া আসে। মার্শাল নিয়োগ করিয়া শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হওয়া হইতে মেয়েদের রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু প্রতি দিন সহযাত্রীদের নিকট হইতে যে নিদারুণ মানসিক নির্যাতনের শিকার হইতে হয় মেয়েদের, তাহার অবসান ঘটানো মার্শালের কর্ম নহে।

এবং শুধুমাত্র বাসে মার্শালের সংখ্যাধিক্য ঘটাইয়া মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়াও সম্ভব নহে। ইহাতে বড়জোর সরকারি বাসের প্রতি মেয়েদের ঝোঁক বাড়িতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বাস ব্যতীত অন্যান্য পরিবহণই যাঁহাদের নিয়মিত ভরসার জায়গা, তাঁহাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হইবে কী উপায়ে? সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে হইলে সমস্ত ধরনের গণপরিবহণে মার্শাল নিযুক্ত করিতে হয়। আর্থিক দিক হইতে সেই ব্যবস্থা টেকসই নহে। ইতিমধ্যেই দিল্লির সমস্ত সরকারি বাস এবং মেট্রোয় মহিলা যাত্রীদের ভাড়া মকুব করিয়াছে দিল্লি সরকার। এই উপর্যুপরি জনমোহিনী নীতির ফলে সরকারের কোষাগারে যে বাড়তি চাপ পড়িবে, সেই অর্থ আসিবে কোথা হইতে? মহিলাদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঠিকই। কিন্তু ইহার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। জনমোহিনী নীতি দিয়া তাৎক্ষণিক সাফল্য আসিতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement