ছবি: সংগৃহীত।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন, ক্রিকেট দেখতে বসে কেউ কি ভাবতেন, একজন মুসলিম ক্রিকেটার দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন? সুনীল গাওস্কর যখন ব্যাট হাতে প্রায় রূপকথা লিখতেন মাঠে, কেউ কি ভাবতেন, এ রূপকথা হিন্দুদের? টাইগার পটৌডির সময়ে কি আসত এমন কোনও হিন্দু-মুসলিম বাছবিচার? আজ কিন্তু আসছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় ক্রিকেট দলে কোনও মুসলিম ক্রিকেটার নেই কেন?
উত্তরটা ক্রিকেটের মাঠ থেকেই এসেছে। হরভজন সিংহ জানিয়েছেন, ভারতীয় দলে সকলে ভারতীয় হিসেবেই খেলেন, হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান হিসেবে নয়। জুৎসই উত্তর, সন্দেহ নেই। কিন্তু সময়টা আজ কোন দিকে মোড় নিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে যথেষ্টই। স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চললে সামনের দিকে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের সমাজের। কিন্তু যে ধরনের চর্চায় আজকাল আমাদের সময় খরচ হয়ে যাচ্ছে, তাতে নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না যে, আমরা সামনের দিকেই যাচ্ছি।
আরও পড়ুন:মুসলিম ক্রিকেটার নেই কেন? জবাবে ভাজ্জি
খেলার মাঠকে বা সিনেমা হলকে বরাবরই কিন্তু উদার দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেছে ভারত। ক্রিকেটে পটৌডি-কিরমানি থেকে বলিউডে ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার-মেহমুদ, মুসলিম ক্রিকেটার বা মুসলিম অভিনেতা তকমা নিয়ে চলতে হয়নি কাউকেই। এঁদের প্রত্যেককেই ভারতীয় ক্রিকেট বা ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন ভারতীয়রা। কিন্তু আজ আমির খান-শাহরুখ খানদের পাকিস্তানের দিকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন কেউ কেউ, ভারতীয় ক্রিকেট দলে ক্রিকেটারের নয়, মুসলিমের নাম খোঁজার চেষ্টা হয়। সামনের দিকে যাচ্ছি, নাকি পিছিয়ে আসছি, তা নিয়ে সংশয় থাকা এর পরেও কি অবান্তর?
এই সামাজিক ব্যাধির চিকিৎসা কিন্তু কোনও সরকার, কোনও প্রশাসন, কোনও আদালতের হাতে নেই। সমাজের যে কোনও দিকে তাকানোর আগে চোখে ধর্মের চশমাটা পরে নেওয়ার কুঅভ্যাসের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী, নিজেদেরই খুঁজে বার করতে হবে পরিত্রাণের পথ। আইন-আদালত বা পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নৈতিক অধঃপতন বা অবক্ষয়টা অত্যন্ত দ্রুত ঘটেছে এ দেশে, ঘটেছে কিছু সামাজিক সংকীর্ণতার কারণেই। এই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে, হিন্দু বা মুসলিম বা শিখ বা খ্রিস্টান পরিচয় ছেড়ে, ভারতীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে শিখব আবার যে দিন, ব্যাধির হাত থেকে মুক্তি অপেক্ষা করছে সেই দিনেই।