Coronavirus

ঐতিহ্য

লকডাউনের পর দেড় মাস অতিক্রম হইবার পর এই চিত্রই স্পষ্ট হইয়াছে যে, রাষ্ট্র তাহার নাগরিকের জন্য যত ত্রাণ জুগাইয়াছে, সাধারণ মানুষ বিতরণ করিয়াছেন তাহার সমান বা ততোধিক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০১:৩৫
Share:

ক্ষুধাই মানুষের শত্রু, তৈত্তিরীয় উপনিষদের এই কথার সত্যতা ভারত ফের উপলব্ধি করিতেছে। মহামারি ও লকডাউনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্ন নাই, অর্থ নাই, সম্বল নাই। তবু এই দুঃসময়ে অনাহার-পীড়িত, রোগ-শঙ্কিত মানুষের পাশে দাঁড়াইতে যে ভাবে আগাইয়া আসিয়াছেন সহনাগরিকরা, তাহা জাতির চিত্তকে নূতন আশায় উজ্জীবিত করিয়াছে। সংক্রমণের আশঙ্কাকে অতিক্রম করিয়া অগণিত ব্যক্তি অপরের ক্ষুধার অন্ন, চিকিৎসার ঔষধ পৌঁছাইতে দিনরাত পরিশ্রম করিতেছেন। বুঝা গেল, দেশে মহামারি প্রাণহানি করিতে পারে, কিন্তু জাতির প্রাণশক্তি হরণ করিতে পারে না।

Advertisement

লকডাউনের পর দেড় মাস অতিক্রম হইবার পর এই চিত্রই স্পষ্ট হইয়াছে যে, রাষ্ট্র তাহার নাগরিকের জন্য যত ত্রাণ জুগাইয়াছে, সাধারণ মানুষ বিতরণ করিয়াছেন তাহার সমান বা ততোধিক। সংবাদে প্রকাশ, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত আড়াই হাজার এমন সংগঠন রহিয়াছে, যাহারা লকডাউনের মধ্যে নিয়মিত ত্রাণকার্য চালাইতেছে। তবে এই নাগরিক উদ্যোগ সকল সময়ে সাংগঠনিক, এমনও নহে। বহু ব্যক্তি পরস্পরের সহিত হাত মিলাইয়া, আত্মীয়-পরিজনদের নিকট অর্থ সংগ্রহ করিয়া কাজে নামিয়াছেন। বহু স্বল্পবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখে দাঁড়াইয়াও এই সকল স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে কষ্টসঞ্চিত অর্থ তুলিয়া দিয়াছেন। অপরিচিতের উপর ভরসা করিয়া অপরিচিতের কষ্টলাঘবের জন্য আপন সম্পদ দান করিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ কুণ্ঠিত হন নাই। মানবিকতার বন্ধনকে এত মানুষ সম্মান করিয়াছেন, নাগরিকের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য স্বেচ্ছায় স্বীকার করিয়াছেন, এই সাক্ষ্যটুকু এই অতিমারির প্রাপ্তি। ইহাই ক্ষুধার ন্যায় দুর্ধর্ষ শত্রুর সহিত যুঝিবার স্পর্ধা দিয়াছে দেশবাসীকে।

স্বেচ্ছাসেবীদের বড় অংশ ছাত্রছাত্রী। প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও তাহারা অন্ন পৌঁছাইতেছে। আদিবাসী পাড়া হইতে কুষ্ঠরোগীর আশ্রম, সর্বত্র তাহাদের গতিবিধি। তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ বিবিধ উপায়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তায় রত। ভিনরাজ্যের প্রশাসনকে জানাইয়া অবরুদ্ধ পরিবারগুলির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করিতেছে, অভিবাসী শ্রমিকদের প্রাপ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইবার আবেদন করিবার কাজে সহায়তা করিতেছে। কোনও প্রতিদানের আশা না করিয়া এক বিশাল কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিজেদের সর্বশক্তিতে নিয়োগ করিয়াছেন এই তরুণেরা। বাংলায় দুর্ভিক্ষ, মহামারি, বন্যা প্রভৃতি বিপর্যয় কম হয় নাই। তাহার মোকাবিলায় তখন রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের ভূমিকাই অধিক গুরুত্ব পাইত, এবং সামাজিক প্রচেষ্টার পুরোভাগে থাকিত ছাত্রেরাই। অনেকের অনুপ্রেরণা ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ১৯২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সমগ্র বাংলা ঘুরিয়া তাঁহার অর্থসংগ্রহ এবং ত্রাণকার্য ছাত্রদের মনে গভীর রেখাপাত করিয়াছিল। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সমাজমাধ্যমে জানাইয়াছে, প্রফুল্লচন্দ্রের স্থাপিত দৃষ্টান্তই তাহাদের ঐতিহ্য। ছাত্ররা নিজেদের তাঁহারই অনুবর্তী বলিয়া দাবি করিয়াছে, ইহা অপেক্ষা ভরসার কথা আর কী থাকিতে পারে? জাতি যে দিন নিজ ইতিহাস বিস্মৃত হয়, সেই দিনই প্রকৃত দুর্দিন। সহনাগরিকের প্রতি সহানুভূতি, তাহার প্রতি কর্তব্যপালনের ধর্ম ভারতের যুবসমাজ ভোলে নাই, এই সত্যই দুঃসময় পার করিবার শক্তি জুগাইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement