এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাইতে ব্যস্ত বিশ্ব কি পোলিয়ো, কলেরা, বসন্তের ন্যায় পুরাতন মারণরোগগুলির প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করিতেছে? বিশেষজ্ঞরা এই রকম একটি আশঙ্কার কথা পূর্বেই শুনাইয়াছিলেন বটে। সম্প্রতি সেই আশঙ্কাই সত্য বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে নাইজ়ারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রের খবর, সেই দেশে দুই পোলিয়ো রোগাক্রান্ত শিশুর সন্ধান মিলিয়াছে। অথচ, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশ হইতে পোলিয়ো রোগটি বিদায় লইয়াছিল গত বৎসরই। পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি সে দেশে আপাতত অতিমারির কারণে স্থগিত। আশঙ্কা, উচ্চমানের টিকার অভাবে আরও অনেক শিশু এই রোগে সংক্রমিত হইতে পারে। ভারতের চিত্রটিও সমান উদ্বেগজনক। অতিমারির বিস্তার রোধ করিতে লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের কারণে স্থগিত রাখা হইয়াছিল শিশু ও প্রসূতিদের টিকাকরণ কর্মসূচি। সম্প্রতি প্রসূতিদের টিকাকরণ পুনরায় শুরু হইয়াছে। কিন্তু শিশুর জন্মের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি বাধ্যতামূলক টিকা ব্যতীত অন্য কোনও টিকা বা বুস্টার ডোজ় আপাতত দেওয়া হইতেছে না। ইহার মধ্যে হাম, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, রোটাভাইরাস, হেপাটাইটিস বি, হুপিং কাশির ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ টিকাগুলিও অন্তর্ভুক্ত। নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলি না দেওয়ার কারণে শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার প্রবল সম্ভাবনা।
বিপদ অন্যত্রও। টিকাকরণ কর্মসূচি পুনরায় শুরু হইলেও, যেখানে সেইগুলি দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকে, সেই চিকিৎসাকেন্দ্রের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিবে তো? ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হইয়াছে যে, অধিক জনবহুল স্থানগুলি সংক্রমণের আঁতুরঘর। এবং এই দেশের সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি সেই অধিক জনবহুল স্থানেরই তালিকাভুক্ত। অনেক অভিভাবকই এই সকল জনবহুল স্থানে সদ্যোজাতকে লইয়া যাইবার ঝুঁকি লইতে অনিচ্ছুক হইবেন। যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় হাসপাতালগুলি সংক্রমণের হটস্পট হইয়া উঠিল, তাহাতে মা-বাবার প্রাথমিক ভাবনা হইবে, নিজ সন্তানকে সর্বাগ্রে বর্তমান সংক্রমণ হইতে সুরক্ষিত রাখা, ভবিষ্যতের কথা পরে ভাবিলেও চলিবে। এইখানেই টিকাকরণ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইবার সম্ভাবনা। কারণ, টিকার উপকারিতা হাতেনাতে মিলে না— ভবিষ্যতে রোগ-সম্ভবনা নির্মূল করা, ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করাই তাহার উদ্দেশ্য।
ইহা এক বৃহত্তর সামাজিক প্রক্রিয়া। পোলিয়ো হইলে ঔষধ প্রয়োগ নহে, বরং ভবিষ্যতে যাহাতে একটি শিশুও এই ভয়ঙ্কর রোগের কবলে না পড়ে, তাহা নিশ্চিত করাই এই প্রক্রিয়ার কাজ। সেই কারণেই জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচিতে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরিয়া সমস্ত শিশুকে টিকা দেওয়া হইয়া থাকে। লাগাতার সরকারি প্রচারের মাধ্যমে চিকিৎসাবিমুখ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী করিয়া তোলা হইয়াছে এই উদ্দেশ্য লইয়াই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এই সমগ্র প্রক্রিয়াটিই বহু পিছাইয়া পড়িল। এবং এই প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক নহে। লকডাউন উঠিয়া যাইবার পরও আরও অনেক মাস, বা অনেক বৎসর, সংক্রমণের আতঙ্ক সাধারণ মানুষকে তাড়া করিয়া ফিরিবে। আশঙ্কা হয়, এই নবলব্ধ অ-সামাজিকীকরণ এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ফেলিতে চলিয়াছে একটি গোটা প্রজন্মকে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)