গোটা দুনিয়াই ঘরে বসিয়া কাজ করিতেছে। কিন্তু, সিংহভাগ কাজই একা করিবার নহে। ফলে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর অপরিহার্য অঙ্গ হইয়াছে হরেক ভিডিয়ো কনফারেন্সিং অ্যাপ। জ়ুম, টিমস ইত্যাদি নাম প্রাত্যহিকতায় ঢুকিয়া পড়িয়াছে। সেই সঙ্গেই ঢুকিয়াছে বিপদও। জ়ুম নামক অ্যাপটি ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতসারেই বহু তথ্য সংগ্রহ করিতেছে, এবং তাহা ফেসবুককে পাঠাইয়া দিতেছে— এই অভিযোগে দুনিয়া টালমাটাল হইল। ভারতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সতর্কবার্তা জারি করিল, সরকারি কাজে এই অ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করিল। সত্য বলিতে, বিপদটি অপ্রত্যাশিত নহে। তথ্যই একবিংশ শতকের পেট্রোলিয়াম— এবং এখনও অবধি সেই ভান্ডারটি বহু দূর অবধি অরক্ষিত— ফলে, বহু সংস্থাই তথ্য আহরণের কাজটি করিয়া থাকে। বাণিজ্যিক হইতে রাজনৈতিক, তাহার ব্যবহার বিবিধ ও বিপুল। অতএব, দুনিয়াজোড়া গ্রাহক— এবং, তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই সুপ্রতিষ্ঠিত, কারণ এই অ্যাপ মূলত ব্যবহৃত হইতেছিল দফতরের বৈঠকে— নিজেদের তথ্যের ঝাঁপি উন্মুক্ত করিলে ডাকাতির সম্ভাবনা অনস্বীকার্য। ইহাও ঘটনা যে জ়ুম চিনের সংস্থা হওয়ায় ঝুঁকির ভিন্নতর মাত্রাও আছে। ফলে, এই তথ্য-রাহাজানি বিষয়ে গোটা দুনিয়ায় যে উদ্বেগ সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা অহেতুক নহে।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানাইয়াছেন, কেন্দ্রীয় সরকার খাঁটি ভারতীয় ভিডিয়ো কনফারেন্সিং অ্যাপ বানাইতেছে। সংবাদটিতে অনেকেই আশ্বস্ত বোধ করিবেন না। কারণ, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় ভারত সরকার বা তাহার অধীন সংস্থার অপারগতা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। আধার-এর তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনাই সেই ব্যর্থতার সাক্ষ্য দিতেছে। অতএব, সরকারি অ্যাপ ব্যবহার করিলে, বিপদ কমিবে না বাড়িবে— সে বিষয়ে সম্যক ধারণা অনেকেরই আছে। উপরন্তু আছে সরকারি নজরদারির ভয়। ভয়টি অমূলক নহে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি করিতে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তহীন আগ্রহ বলিয়া দেয়, এই জমানায় রাষ্ট্রের সহিত নাগরিকের সম্পর্কটি ক্রমশই সন্দেহের হইয়া দাঁড়াইতেছে। সাম্প্রতিক সাংবাদিক গ্রেফতারির সিদ্ধান্তও বলিয়া দেয়, কী ভাবে জো-হুজুর না হইলেই রাষ্ট্র নাগরিককে অভিযুক্ত করে। ফলে, সরকারি অ্যাপ ব্যবহার করিয়া ভিডিয়ো কনফারেন্স করিবার পরিণতি কী হইতে পারে, এই কথাটিও নাগরিককে ভাবাইবে। লকডাউনকে ব্যবহার করিয়া বিভিন্ন স্তরে নাগরিকের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করিবার প্রচেষ্টা চলিতেছে, এই অভিযোগও মনে পড়িতে পারে।
ভিডিয়ো কনফারেন্সিং অ্যাপ তবু ভবিষ্যতের গর্ভে। আরোগ্য সেতু নামক যে অ্যাপটিকে প্রধানমন্ত্রী সব ভারতীয়র স্মার্টফোনে পৌঁছাইয়া দিবার পণ করিয়াছেন, তাহা ঘোর বাস্তব। সেই অ্যাপের বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। তাহা অকারণেই বহু তথ্য সংগ্রহ করিতেছে; সেই তথ্য সরকার কেন ও কী ভাবে ব্যবহার করিতে পারে, তাহার নিয়ম অতি শিথিল। সর্বোপরি, গ্রাহককে না জানাইয়াই অ্যাপটির তথ্য-শর্ত পাল্টানো হইতে পারে। বস্তুত, ইতিমধ্যেই পাল্টাইয়াছে। ফলে, আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। কেহ বলিতে পারেন, অ্যাপটি তো আবশ্যিক নহে— ইচ্ছা না করিলে কেহ তাহা ডাউনলোড না-ই করিতে পারেন। স্মরণে রাখা ভাল যে, সেই দিকে দিয়া কিন্তু আধারও আবশ্যিক নহে। কিন্তু, পরিস্থিতি এমনই যে আধারের হাতে নিজের যাবতীয় তথ্য না তুলিয়া দিয়া নাগরিকের আর উপায় নাই। কোভিড-১৯’এর যে কোনও ত্রাণের জন্যই আগামী কাল এই অ্যাপটি আবশ্যিক হইবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? অতএব, তথ্য ফাঁস সম্বন্ধে সাবধান হইতে হইলে তাহা বাণিজ্যিক এবং সরকারি, দুই ক্ষেত্রেই সমান ভাবে হওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: সমাধানের সমস্যা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)