Narendra Modi

কৃপাপ্রার্থী নহে

কেন্দ্রের নিকট তহবিল পাওয়া না গেলে রাজ্যগুলির অর্থসংস্থানের আর একটি উপায় বাজার হইতে ঋণ করা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০০:৫৬
Share:

নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিবার পর বড় মুখ করিয়া অনেক কথাই বলিয়াছিলেন। সেই সুভাষিতাবলির অন্যতম: কোঅপারেটিভ ফেডারালিজ্ম বা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রবাদ। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় সংবিধানের পাতায় থাকিয়া গিয়াছে, কেন্দ্রীয় সরকার মোদী জমানায় দ্বিগুণ বিক্রমে নিজের কোলে ঝোল টানিয়া চলিয়াছে। অতিমারি সেই স্বভাব আরও প্রবল করিয়া তুলিয়াছে। অথচ বিপরীত ঘটিবার যথেষ্ট কারণ ছিল— যুক্তি ছিল রাজ্যের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে কেন্দ্রের সর্ব প্রকারে যত্নবান হইবার। তাহার প্রথম এবং মূল কারণ, কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে লড়াইটি লড়িতে হইতেছে প্রধানত রাজ্যগুলিকেই। স্বাস্থ্যখাতে খরচই হউক, বা আপৎকালীন ভিত্তিতে মানুষের নিকট খাদ্য পৌঁছাইয়া দেওয়া, যানবাহনের ব্যবস্থা করাই হউক বা প্রশাসনিক নজরদারি— খরচগুলি রাজ্যের। এত বড় ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ছোট-বড় কোনও রাজ্যেরই নাই। তাহার পর, অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য যে খরচগুলি সত্যই জরুরি, তাহাও রাজ্য সরকারের হাত দিয়াই হওয়া বিধেয়। অর্থ কমিশনের সূত্র অনুসারে রাজ্যগুলির যত টাকা পাওনা হয়, প্রয়োজনে তাহার অধিক টাকা দেওয়াই বিধেয় ছিল।

Advertisement

কেন্দ্রের নিকট তহবিল পাওয়া না গেলে রাজ্যগুলির অর্থসংস্থানের আর একটি উপায় বাজার হইতে ঋণ করা। সেই পথটিও দুর্গম হইয়াছে, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত করিয়াছে আরও ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করিবার। এই টাকা বাজার হইতেই আসিবে। ফলে, রাজ্যগুলির পক্ষে বাজারে ঋণ পাওয়া কঠিন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব করিয়াছিলেন, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক হইতে রেপো রেটে ঋণ করিতে দেওয়া হউক। ব্যতিক্রমী প্রস্তাব, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু কোন তাগিদ হইতে এই পথে হাঁটিবার কথা ভাবিতে হয়, তাহা বুঝা যায়। সেই দাবিও মঞ্জুর হয় নাই। কাজেই, রাজ্যগুলির আর্থিক সঙ্কট তীব্রতর হইতেছে। দেশ জুড়িয়া রাজ্যগুলি কেন লকডাউনের মধ্যেই তড়িঘড়ি মদের দোকান খুলিতে বাধ্য হইল, সেই কারণটি এই সঙ্কটের মধ্যেই নিহিত আছে। তাহাতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িবে, সেই কথাটি বুঝিয়াও রাজ্যগুলি নিরুপায় বোধ করিয়াছিল। এই দায় কেন্দ্রীয় সরকারকে লইতে হইবে বইকি।

২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যখন জিএসটি প্রবর্তন করিয়াছিল, তখন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব হওয়া লইয়া ঘোরতর আপত্তি উঠিয়াছিল। আপত্তিটি কতখানি সঙ্গত, এখন তাহার প্রমাণ মিলিতেছে। জিএসটি-পূর্ব অবস্থায় রাজ্যগুলি বিক্রয় কর ইত্যাদির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করিতে পারিত। ‘এক দেশ, এক করব্যবস্থা’-র হাড়িকাঠে সেই অধিকারকে বলি দেওয়া হইয়াছে। ফলে, যাহা রাজ্যগুলির হকের পাওনা, তাহার জন্যও কেন্দ্রের কৃপাপ্রার্থী হওয়া ভিন্ন গতি নাই। রাজ্যগুলির ভাগের টাকা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার আইনত দায়বদ্ধ; যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিপদের সময় রাজ্যগুলিকে বাড়তি অর্থবরাদ্দ করিতে। কিন্তু এই অতিমারি-লাঞ্ছিত সময় দেখিতেছে, প্রতিশ্রুতির সহিত বাস্তবের ফারাক কতখানি। কেন্দ্রীয় আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট— নরেন্দ্র মোদীরা কাহাকে কৃতিত্বের ভাগ দিতে নারাজ। যাহা হইবে, সবের গায়েই যেন কেন্দ্রীয় সরকারের অনপনেয় ছাপ থাকে, তাহা নিশ্চিত করিবার চেষ্টা প্রকট। তাঁহারা ভুলিয়াছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কৃপাপ্রার্থী নহে, অর্থসাহায্যের অধিকারী। বিশেষত, এই ভয়ঙ্কর কঠিন সময়েও যদি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ বিস্মৃত না হওয়া যায়, তবে সর্বাধিক ক্ষতি সাধারণ মানুষের, যাহার মঙ্গলকামনাতেই নাকি এত আয়োজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement