Coronavirus in India

পাঁচ সপ্তাহ?

সপ্তাহের সংখ্যাই প্রকৃত প্রশ্ন নহে। প্রশ্ন— সপ্তাহ সংখ্যা কমাইবার এই মানসিকতা লইয়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

চৌষট্টি সপ্তাহ হইতে পাঁচ সপ্তাহ? করোনার টিকা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশে বিস্ময়ে ভ্রুকুঞ্চিত বহু মহলই। মহলগুলির স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচিতি থাকিলে আশ্চর্য বা উদ্বিগ্ন হইতে হইত না। মুশকিল হইল, অবিশ্বাস ও সন্দেহ প্রকাশ করিতেছেন বৈজ্ঞানিকরাই। পনেরো অগস্টের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব বলিয়া তাঁহারা মানিতে পারিতেছেন না। দুনিয়াজোড়া টিকা পরীক্ষানিরীক্ষার গতিপ্রকৃতি দেখিয়াই নিশ্চয় তাঁহাদের এই ধন্দ। এইমস-এর ডিরেক্টর এবং ক্লিনিক্যাল রিসার্চ-এর প্রধান, কিংবা দেশের প্রধান ভাইরোলজিস্টরাও যখন বলিতেছেন যে, ইহা একেবারে অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে, তখন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সংশয়তিমিরমাঝে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া উপায় কী। এমনকি কেহ কেহ দুঃখ করিয়া এই কথাও বলিতেছেন— বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরা নির্ঘাত হাসিতেছেন ভারত সরকারের ঘোষণা শুনিয়া। বলিতেছেন, বিজ্ঞানজগতে ভারতের এ যাবৎ একটি বিশিষ্ট পরিচিতি ছিল, ‘সিরিয়াস প্লেয়ার ইন সায়েন্স’ বলিয়া রীতিমতো খ্যাতি ছিল। তাহা এই বার অস্তমিত হইল বলিয়া। ভবিষ্যতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের পরীক্ষণাগারে সত্যই যদি কোনও সাফল্য মিলিয়াও যায়, সে ক্ষেত্রেও তাহার বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা। আইসিএমআর নিজেই জানাইয়াছে ভারত বায়োটেক জানাইয়াছিল, কোভ্যাক্সিন টিকা বাজারে আনিতে এক বছর তিন মাস অর্থাৎ চৌষট্টি সপ্তাহ লাগিবে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ— পনেরো অগস্ট!

Advertisement

সপ্তাহের সংখ্যাই প্রকৃত প্রশ্ন নহে। প্রশ্ন— সপ্তাহ সংখ্যা কমাইবার এই মানসিকতা লইয়া। মানুষকে খুশি করা বা চমক দিবার দায় তো বিজ্ঞানীদের থাকিবার কথা নয়। বিশেষত এই অতিমারি-কবলিত বিশ্বে, যেখানে গত একশত বৎসরে মানবসভ্যতা এত বড় প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নাই। আজি পরীক্ষা মানবের— প্রকৃতির সহিত লড়াই করিয়া সে তাহার শির উচ্চ রাখিতে পারে কি না, এবং পারিলে, কত দিনে। এমন গুরুতর কাজে কোনও তাড়াহুড়া বা হইচই চলিতেই পারে না, সাধারণ মানুষকে, নিহিতার্থে ভোটারসমাজকে, খুশি করিবার তাড়নাও থাকিতে পারে না। তাঁহারা কেবল নিবিষ্ট একাগ্রতায় কাজ করিবেন, বৈজ্ঞানিক যুদ্ধের শেষে সাফল্যে পৌঁছাইবেন, ইহাই একমাত্র আরাধ্য হইবার কথা। যত দূর সম্ভব তাঁহাদের কাজে সম্মেলক ধৈর্য ও সহযোগিতা দেখাইবার কথা। ইহা তাঁহাদের একার জয়-পরাজয় নহে, সরকারেরও সাফল্য-ব্যর্থতার বিষয় নহে। এখানে সময়সীমা বাঁধিলে লাভ তো নাই-ই, ক্ষতি ভয়ঙ্কর।

যে দেশের সরকার সেই সময়সীমা বাঁধিবার চেষ্টা করে, এবং যে দেশের মানুষ সেই সময়সীমা শুনিয়া উল্লাসে মাতিয়া উঠে, তাহার অজ্ঞতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অর্বাচীনতাও ভয়ঙ্কর। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা হইতে রাষ্ট্রীয় আড়ম্বরের অংশ হিসাবে কোভিড-টিকা উদ্বোধনের অর্থহীন বাগাড়ম্বর ভারতকে এক ধাক্কায় অনেকখানি দীন করিল। নিন্দুকে যে ইহাকে শত্রু-আক্রমণ হইতে নজর ঘুরাইবার সরকারি বন্দোবস্ত বলিতেছে, তাহাও দেশের মর্যাদাহানি ঘটাইল। নয়নলোভন চমক-মোহন রাজনীতি দিয়া কূটনীতি হয় না, বিজ্ঞান তো হয়ই না। আগেও অনেক বার দেখা গিয়াছে, রাষ্ট্রের মর্যাদার বিষয়কে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁহার মন্ত্রিসভা সরকারি গৌরব কুড়াইবার বিষয় বলিয়া ভাবিতেছেন। সামরিক অভিযান, মহাকাশ-গবেষণার কৃতিত্ব, ইত্যাদির পর এখন সেই রাজনীতিকরণ বৈজ্ঞানিক অঙ্গনে— তাহাও আবার করোনাভাইরাসের মতো বিষয়ে। আইসিএমআর-এর উচিত, দ্রুত এ বিষয়ে আলোকপাত করিয়া নাগরিকের মানস-সঙ্কটের কিছু সুরাহা করা। নতুবা নাগরিক ভাবিতেই পারেন, তাঁহাদের প্রাণের মূল্যে রাজনৈতিক নম্বর তুলিবার চেষ্টা চলিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement