Coronavirus

যুক্তরাষ্ট্রের মোড়কে

পাঁচ সপ্তাহ ধরিয়া দেশের সর্বত্র তাহাই দেখা যাইতেছে, রাজ্য সরকার স্থানীয় স্তরের প্রশাসনের সাহায্যে যে যাহার মতো লড়াই করিতেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০০:৪৪
Share:

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে লড়িতে নামিয়া ভারতীয় জনতা পার্টি তাহার ইস্তাহারে ‘কোঅপারেটিভ ফেডারালিজ়ম’ বা সহযোগিতা-ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার কথা বলিয়াছিল। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিবার পর হইতে মোদী বিবিধ উপলক্ষে অনেক বার সেই আদর্শের জয়গান গাহিয়াছেন। প্রথম পর্বের মধ্যপথে তিনি ‘কম্পিটিটিভ কোঅপারেটিভ ফেডারালিজ়ম’ নামক একটি ধারণাও প্রচার করেন। সমালোচকরা তাহাকে সোনার পাথরবাটি বলিয়া উড়াইয়া দিলেও তাঁহার ভক্তরা এই উন্নততর যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ভূয়সী প্রশংসায় মুখর হইয়াছিলেন। কিন্তু সেই তর্ক থাকুক। কথার কথা অসার, কাজের কথাই বিচার্য। বিশেষণগুলিকে কুলুঙ্গিতে রাখিয়া মূল বিষয়টি বিচার করা আবশ্যক। মোদী সরকারের— কথায় নহে— কাজে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার মহান আদর্শ কতটা গুরুত্ব ও মর্যাদা পায়, তাহাই প্রশ্ন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মোকাবিলায় তাঁহারা যাহা করিয়াছেন এবং যাহা করেন নাই, তাহা এই বিষয়ে কিছু আলো ফেলে। সেই আলোয় যে বাস্তব ধরা পড়ে তাহা যুক্তরাষ্ট্রধর্মের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রদ্ধার পরিচায়ক নহে।

Advertisement

নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখিবার জন্য লকডাউন বলবৎ করা এবং পরিস্থিতি সাপেক্ষে সেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করিয়া স্বাভাবিক জনজীবন ফিরাইয়া আনা— উভয় ক্ষেত্রেই সরকারি নীতি রূপায়ণের ব্যবস্থাপনার ও তাহার প্রতিক্রিয়া সামলাইবার চোদ্দো আনা দায়দায়িত্বই রাজ্যের। পাঁচ সপ্তাহ ধরিয়া দেশের সর্বত্র তাহাই দেখা যাইতেছে, রাজ্য সরকার স্থানীয় স্তরের প্রশাসনের সাহায্যে যে যাহার মতো লড়াই করিতেছে। কেহ সফল, কেহ ব্যর্থ, অনেকেই মধ্যবর্তী, কিন্তু সকলেই রণভূমিতে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার দেশব্যাপী করোনা নিয়ন্ত্রণের রণনীতির বিভিন্ন পর্যায় ঘোষণার আগে রাজ্য সরকারগুলিকে সেই বিষয়ে যথেষ্ট অবহিত করে নাই। সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত দোকানপাট খুলিবার নীতি, যাহা ঘোষিত হয় প্রায় মধ্যরাত্রে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গত কারণেই এই একতরফা আচরণে অসন্তোষ জানাইয়াছেন। ঠিক তেমনই, বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন-বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের এ যাবৎ স্বরাজ্যে ফিরিবার অনুমতি না দিয়া হঠাৎ এখন কেন্দ্র জানাইতেছে, তাঁহারা ফিরিতে পারেন, কিন্তু সমস্ত বন্দোবস্ত সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকেই করিতে হইবে! অবিবেচনা এবং অব্যবস্থিতচিত্ততার দুর্ভাগ্যজনক সমাহার।

এহ বাহ্য। ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় রাজ্যের সামর্থ্য সীমিত, কোষাগারের চাবি কেন্দ্রের হাতে। এই ধরনের বিপর্যয়ের মোকাবিলায় অর্থের প্রয়োজন বিপুল। সেই অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ের পরিচালনা এবং তদারকিও রাজ্য স্তরেই করিতে হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগে আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি। প্রসঙ্গত কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর সহিত একটি কথোপকথনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভূতপূর্ব গভর্নর রঘুরাম রাজন এই প্রয়োজনের উপর জোর দিয়াছেন। কেন্দ্রের উচিত ছিল সমস্ত রাজ্যকে সঙ্গে লইয়া বিশদ আর্থিক পরিকল্পনা রচনা করা, যে পরিকল্পনা রূপায়ণে রাজ্যের ভূমিকাই প্রধান হইবে। কিন্তু এই অবধি তাহার প্রায় কিছুই হয় নাই। কেন্দ্র থাকিয়া থাকিয়া কিছু বিক্ষিপ্ত কার্যক্রম ও বরাদ্দের ঘোষণা করিয়াছে, রাজ্যের ঋণ করিবার সাধ্য ঈষৎ বাড়ানো হইয়াছে, ওই পর্যন্তই। প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে বলিবেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে একাধিক ভিডিয়ো সম্মেলন করিয়াছেন, একাধিক বার রাজ্য সরকারগুলির প্রশংসা করিয়াছেন। সত্য, কিন্তু সেই সত্যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রদর্শনী হইতে পারে, কাজের কাজ কিছুই হয় না। সন্দেহ হয়, কাজের কাজ সম্পাদনের কোনও সদিচ্ছাই কেন্দ্রের শাসকদের নাই। কোনও দিন ছিলও না। তাঁহারা— ইন্দিরা গাঁধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া— যুক্তরাষ্ট্রীয় মোড়কের ভিতরে একটি কেন্দ্রশাসিত ভারতই চাহেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: এই অতিমারির মাঝেও সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বস্টনের নবদম্পতি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement